ইয়েমেনে বোমাবর্ষণ শুরু করল সৌদি আরবের বিমানবাহিনী। সঙ্গে যোগ দেয় সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কাতার, কুয়েত, জর্ডন-এর মতো বেশ কয়েকটি দেশের বায়ুসেনাও। এই আক্রমণে ইয়েমেনের রাজধানী সালায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ২৩ জন। ভারতীয় সময় বুধবার গভীর রাত থেকে এই বোমাবর্ষণ শুরু হয়। ওয়াশিংটনের দূতাবাস থেকে এই কথা ঘোষণা করেন আমেরিকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত আদেল আল জুবেরি। তিনি জানান, শিয়া হৌথি মিলিশিয়াদের থেকে নির্বাচিত ইয়েমেন সরকারকে রক্ষা করতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইয়েমেন-এর যুদ্ধে প্রায় ১০০টি যুদ্ধবিমান ও প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার সেনা পাঠানো হবে বলেও তিনি জানান। শুধু সৌদি আরব নয়, ‘গল্ফ কোঅপারেশন কাউন্সিল’-এর অন্তর্গত বাকি দেশগুলিও এই যুদ্ধে যোগ দিয়েছে বলে আদেল আল জুবেরি জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবারই এই দেশগুলির প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসে এ নিয়ে প্রস্তাব পাশ করবেন। সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠল।
বেশ কিছু দিন ধরেই ইয়েমেন-এর পরিস্থিতির ক্রমাবনতি হচ্ছিল। একের পর এক অঞ্চল দখল করে ক্ষমতা বিস্তার করছিল শিয়া হৌথিরা। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সালেহ-র অনুগত সেনারা হৌথি বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। ২০১১-র ‘আরব বসন্ত’র সময়ে ইয়েমেনে দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট সালেহ ক্ষমতাচ্যুত হন। নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন আবেদ রাব্বো মনসুর হাদি। কিন্তু তাঁর ক’বছরের শাসনেই ইয়েমেন-এর শিয়াদের ক্ষোভ ও বঞ্চনার অভিযোগ উঠতে শুরু করে। পরে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয়। ইয়েমেনে বেশ কিছু দিন ধরেই ‘আল কায়দা ইন আরাবিয়ান পেনেনজুলা’ সক্রিয়। এক সময়ে ওসামা বিন লাদেন দীর্ঘ দিন ইয়েমেন-এ ছিলেন। ফলে মার্কিন সন্ত্রাসবাদের তালিকায় ইয়েমেনের অবস্থান বরাবরই উপরের দিকে। আল-কায়দার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইয়েমেন সরকারকে সাহায্য করতে এবং প্রশিক্ষণ দিতে সেখানে ছিল মার্কিন স্পেশ্যাল ফোর্সের ঘাঁটি। পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে দেখে তাঁদের সরিয়ে নেয় মার্কিন সরকার। মার্কিন দূতাবাসও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভারতও দূতাবাসের কর্মীদের ফিরিয়ে আনে। কর্মসূত্রে ইয়েমেনে বাস করা তিন হাজার ভারতীয়কে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে।
কয়েক দিন আগে ইয়েমেন-এর রাজধানী সানার দু’টি মসজিদে বোমা বিস্ফোরণে ১৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার পরেই বিদ্রোহী মিলিশিয়াদের হাতে রাজধানী সানার পতন হয়। বুধবার হৌথিরা বন্দর শহর এডেন দখল করে নেয়। প্রেসিডেন্ট আবেদ রাব্বো মনসুর হাদি সমুদ্রপথে পালিয়ে যেতে পারলেও বিদ্রোহীদের হাতে ধরা পড়ে যান তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী মেজর জেনারেল মাহমুদ আল সুবাইহি। এর পরেই সৌদি আরবের এই পদক্ষেপ। সৌদি আরব-সহ আরবের সুন্নি প্রধান দেশগুলি ইয়েমেন-এর এই অবস্থার জন্য ইরানকেই দায়ী করেছে। যদিও ইরান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সৌদি আরবের ১০০টি যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি সংযুক্ত আরব-আমিরশাহির ৩০টি যুদ্ধবিমান, কুয়েতের ১৫টি যুদ্ধবিমান এবং জর্ডন, মরক্কো ও সুদানের বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান অংশ নেয়। অভিযানে পাকিস্তান ও মিশরের নৌবাহিনীও সাহায্য করেছে। এই আক্রমণে হৌথি বিদ্রোহীদের বায়ুসেনার বড় অংশই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বলে সৌদি সূত্রে খবর। এর পরে স্থলসেনার অভিযানও শুরু হতে পারে। এই লড়াই চালাতে আমেরিকার কাছে সৌদি আরব উপগ্রহ চিত্র্-সহ বেশ কিছু সাহায্য চেয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বোমাবর্ষণ এখনও চলছে। হৌথিদের তরফে দাবি করা হয়েছে, এই শক্তি প্রয়োগের যোগ্য জবাব দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy