জয়ের পর আয়ার্ল্যান্ডের জন মুনি (বাঁ দিকে) ও নায়াল ও’ব্রায়ান। ছবি: এপি।
স্টেডিয়ামটার দর্শকাসন কত হবে? মেরেকেটে ছ’হাজার! এমসিজি বা ইডেনের কৌলিন্যের কাছাকাছি আসার প্রশ্নই নেই। বড়জোর বলা যেতে পারে অনেকটা যেন ভারতের ধর্মশালার ক্রিকেট স্টেডিয়াম। যা দৃশ্যত অদ্ভুত সুন্দর।
আর সেখানেই কি না বিশ্বকাপের সর্বপ্রথম অঘটনটা ঘটল! ক্রিকেট-আভিজাত্যের বিচারে এক পুঁচকে দেশ কি না উড়িয়ে দিল এক কালের ক্রিকেটীয় মহাশক্তিকে!
ক্রিস গেইল-ডোয়েন স্মিথরা বোধহয় স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তাঁদের বিশ্বকাপ অভিযান এমন বেখাপ্পা ভাবে শুরু হবে। প্রথম ম্যাচেই আয়ার্ল্যান্ডের কাছে বিশ্রী হেরে আপাত-সহজ কোয়ার্টার ফাইনালের রাস্তা তাঁদের এমন কণ্টকিত হয়ে উঠবে। সোমবার প্রথমে ব্যাট করে তিনশো তুলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টপ অর্ডারের বিপর্যয় সামলে টিমকে ৫০ ওভারে ৩০৪-৭ স্কোরে পৌঁছে দিয়েছিলেন লেন্ডল সিমন্স এবং ড্যারেন স্যামি। কে জানত, ওই ক্যারিবিয়ান পরাক্রম এতটাই ক্ষণস্থায়ী হবে! আয়ার্ল্যান্ড রানটা তুলে নিল সাড়ে চার ওভার হাতে রেখে! ছ’টা উইকেট হারিয়ে!
অবশ্য ক্রিকেট বিশ্বকাপে আয়ার্ল্যান্ডের বড় টিমের ঘাড় মটকানো নতুন কিছু নয়। ২০০৭-এ তারা পাকিস্তানকে হারিয়েছিল। চার বছর আগে উপমহাদেশে বিশ্বকাপে কেভিন ও’ব্রায়েন একাই সেঞ্চুরি করে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ক্রিকেটবিশ্বকে বুঝিয়েছিলেন যে, পাকিস্তান ম্যাচটা ফ্লুক ছিল না। আর এ দিন তারা বোঝাল, এখন থেকে তাদের ‘জায়ান্ট কিলার’ হিসেবেই ধরতে হবে। সোমবার কেভিন ও’ব্রায়েন পারেননি। পল স্টার্লিং পেরেছেন। ৮৪ বলে ৯২ তুলে দিয়েছেন একা। এ ডি জয়েস পেরেছেন। ৬৭ বলে ৮৪ রান করে। নিল ও’ব্রায়েন পেরেছেন। ৬০ বলে ৭৯ অপরাজিত থেকে।
অথচ টিমটা থেকে কেউ আইপিএল খেলেন না। ওয়ান ডে ক্রিকেটের উপর আইপিএলের যে প্রভাব বিস্তৃত হচ্ছে, সেই একই ধরনের সঙ্গে আয়ার্ল্যান্ড ক্রিকেটাররা কী ভাবে মানিয়ে নিলেন এত অজান্তে, সেটাই প্রশ্ন। প্রশ্ন আরও একটা আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট তা হলে এখন কোন দিকে এগোচ্ছে? ক্রিকেটারদের সঙ্গে ক্যারিবিয়ান বোর্ডের চুক্তি নিয়ে প্রায়ই লাগে। গেইল-ব্র্যাভোরা তো একটা সময় ঠিকও করে ফেলেছিলেন দেশের হয়ে আর খেলবেন না। শুধুমাত্র টি-টোয়েন্টি খেলবেন। সুনীল নারিনও কেকেআরের হয়ে আইপিএল ফাইনাল ছেড়ে দেশজ শিবিরে যোগ দিতে যাননি।
সোমবারের নেলসন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের বর্তমান দৈন্যকে আরও একবার ফুটিয়ে তুলল। টস জিতে ফিল্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আয়ার্ল্যান্ড। কিন্তু প্রথম থেকেই পরের পর উইকেট হারাতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ডোয়েন স্মিথ (১৮), ব্র্যাভো (০), মার্লন স্যামুয়েলস (২১)— কেউ রান পাননি। ক্রিস গেইল ৩৬ করতেই নিয়ে ফেলেন ৬৫ বল! একটা সময় ৮৭ রানে পাঁচ উইকেট চলে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। আয়ার্ল্যান্ডের কোনও স্টেইনের মতো ভয়ঙ্কর পেসার ছিল না। মিডিমায়ম পেসার যাঁরা আছেন, তাঁরা বলটা করেন ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১২৫ কিলোমিটার গতিতে। স্পিনাররা বল বিশেষ ঘোরানোর দিকে যান না। শুধু পেসার ও স্পিনাররা একটা ব্যাপার ঠিক রেখে যান। অভ্রান্ত নিশানায় বলটা রেখে দেন।
তাতেই ঘাড় মটকে গেল ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংয়ের। অবস্থা আরও শোচনীয় হতে পারত লেন্ডল সিম্নস ৮৪ বলে ১০২ না করলে। স্যামির কথাও বলতে হবে। ৬৭ বলে তিনিও ৮৯ করে যান। কিন্তু তাতেও শেষ পর্যন্ত লাভ হয়নি। ক্যারিবিয়ান বোলিংও তাদের টপ অর্ডারের মতো নিকৃষ্ট পারফরম্যান্সটা করে গেল। কেমার রোচ ৬ ওভারে ৫২ খেলেন। অধিনায়ক জেসন হোল্ডার ৯ ওভারে ৪৪। ব্যাট করতে নেমে আয়ার্ল্যান্ড ইনিংসের দশ ওভার গড়াতে না গড়াতেই বোঝা যাচ্ছিল, এ দিন যে টিমটা জিতে মাঠ ছাড়বে, তার নাম কিছুতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয়।
ঠিক সেটাই হল শেষ পর্যন্ত! দু’বারের বিশ্বজয়ীদের ক্রিকেট-গর্বকে ধুলিস্যাৎ করে আরও একটা রূপকথা লিখে ফেললেন আয়ার্ল্যান্ড ক্রিকেটাররা। প্রশ্ন একটাই! এ বারের মতো রূপকথা কি এখানেই শেষ? নাকি শুরু?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy