Advertisement
১১ মে ২০২৪

জমি বিল পেশকে কেন্দ্র করে অশান্ত সংসদ, ওয়াকআউট

লোকসভায় জমি অধিগ্রহণ বিল পেশ করল সরকার। যার জেরে মঙ্গলবার বিরোধীরা একজোট হয়ে ওয়াকআউট করে। ওই দলে এনডিএ-র এক জোট শরিকও ছিল। তাদের মতে, এই বিল কৃষক এবং গরিব বিরোধী। বাদ যায়নি রাজ্যসভাও। সেখানেও বিল পেশকে কেন্দ্র করে বিরোধীরা প্রবল হইচই করে।

জমি বিলের বিরোধিতা করে সংসদের বাইরে বিক্ষোভ তৃণমূল সাংসদদের। ছবি: এএফপি।

জমি বিলের বিরোধিতা করে সংসদের বাইরে বিক্ষোভ তৃণমূল সাংসদদের। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৩:৪৫
Share: Save:

লোকসভায় জমি অধিগ্রহণ বিল পেশ করল সরকার। যার জেরে মঙ্গলবার বিরোধীরা একজোট হয়ে ওয়াকআউট করে। ওই দলে এনডিএ-র এক জোট শরিকও ছিল। তাদের মতে, এই বিল কৃষক এবং গরিব বিরোধী। বাদ যায়নি রাজ্যসভাও। সেখানেও বিল পেশকে কেন্দ্র করে বিরোধীরা প্রবল হইচই করে।

এ দিন লোকসভায় কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী চৌধুরী বীরেন্দ্র সিংহ স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের কাছে জমি বিল পেশ করার অনুমতি চাইতেই বিরোধীরা ওয়েলে নেমে আসে। কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, তৃণমূল, আপ, আরজেডি-র পাশাপাশি বাম সাংসদেরাও ওই বিক্ষোভে সামিল হন। এনডিএ-র শরিক স্বাভিমানি শেতকারী সংগঠনের রাজু শেঠি এই বিলের প্রতিবাদ করেন। তাঁর কথায়: “এনডিএ-র শরিক হয়েও বলতে বাধ্য হচ্ছি, এই বিলে কৃষক সম্প্রদায়ের সমূহ ক্ষতি।”

১৮৯৪ সালের জমি অধিগ্রহণ আইন খারিজ করে ইউপিএ আমলে নতুন জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন আইন পাশ হয়। কিন্তু, ইউপিএ-র সেই জমি আইনে সংশোধন আনতে গত ২৯ ডিসেম্বর একটি অধ্যাদেশে (অর্ডিন্যান্স) অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সেই অধ্যাদেশের ভিত্তিতে সরকার পাঁচটি ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে। শিল্প করিডর তৈরি, প্রতিরক্ষা সামগ্রীর কারখানা তৈরি, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের জন্য আবাসন প্রকল্প, গ্রাম-শহরে সামাজিক পরিকাঠামো গড়ে তোলা এবং সরকারি-বেসরকারি যৌথ প্রকল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকার জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে। পাশাপাশি, এই সব ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের জন্য কৃষক তথা মালিকের সম্মতি যেমন প্রয়োজন হবে না, তেমনই জমির চরিত্রও বিচার করা হবে না। এই পাঁচ ক্ষেত্রে জমি নেওয়ার সময় সামাজিক নিরীক্ষাও বাতিল করে সরকার। অর্থাৎ, শুধু জমির মালিককেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ওই জমির উপর নির্ভরশীল কারও কথা বিবেচনা করা হবে না।

এই অধ্যাদেশ নিয়ে শুরু থেকেই সরব ছিল বিরোধীরা। সোমবার থেকে দিল্লির যন্তরমন্তরে জমি বিলের বিরোধিতায় ধর্নায় বসেছেন অণ্ণা হজারে। ধর্নার দ্বিতীয় দিনে সেখানে এ দিন দুপুরে তাঁর দলের ৬৬ জন বিধায়ক নিয়ে সেখানে হাজির হন দিল্লির নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। অন্য দিকে, সংসদের বাইরে এ দিন সকালে জমি বিলের বিরোধিতায় বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল। তিন’জন বাদে দলের সকল সাংসদই সেখানে হাজির ছিলেন। অনুপস্থিত তিন সাংসদের এক জন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। অন্য দু’জন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী এবং তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। প্রথম জন সাম্প্রতিক কালে দলে রীতিমতো কোণঠাসা অবস্থায় আছেন। আর দ্বিতীয় জনকে দলনেত্রী মমতা অনেকটা দায়িত্ব দিলেও তাঁকে সম্প্রতি বিজেপি-র সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে চলতে দেখা গিয়েছে। মোদীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়ার পাশাপাশি সম্প্রতি তাঁকে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতির ছেলের বিয়ে উপলক্ষে ভোজসভাতেও দেখা গিয়েছে।

জমি অধিগ্রহণ বিল নিয়ে সংসদে হল্লাহাটি হওয়ার আশঙ্কায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীও। সে কারণে এ দিন সকালে সংসদের সেন্ট্রাল হলে বিজেপি-র সংসদীয় দলের বৈঠক বসে। অধ্যাদেশ নিয়ে তিনি যে আলোচনায় রাজি সে কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইতিবাচক সকল প্রস্তাবকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি প্রয়োজনে সংশোধনী আনা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। একই কথা এ দিন রাজ্যসভায় জানান অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তবে, জমি বিল নিয়ে সরকার যে পিছু হঠবে না সে বার্তাও দিয়েছেন তিনি।

মোদী-জেটলি আলোচনার কথা বললেও কংগ্রেসের দাবি, সরকার আলোচনা চায় না। দলের নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মল্লিকার্জুন খাড়্গে বলেন, “অধ্যাদেশ জারি না করে সরকার যদি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করত, তবে সেটা একটা অন্য চেহারা নিত। কিন্তু, তারা বুলডোজার চালিয়ে সব আয়ত্ত্বে আনতে চায়।” একই সুরে লোকসভায় প্রতিবাদ জানান তৃণমূল নেতা সৌগত রায়। জমি বিলের বিরোধিতা করতে গিয়ে তিনি সরকারের সমালোচনা করেন। তাঁর মতে, সরকার সব কিছু তার ইচ্ছেমতো চালাতে চায়। অন্য দলগুলিও জমি বিল ইস্যুতে একই ভাবে বিঁধেছে মোদী সরকারকে।

তবে সরকার পক্ষও চুপ করে বসে নেই। সংসদবিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু এ দিন লোকসভায় বলেন, “কৃষক কল্যাণকে আমাদের সরকার প্রাধান্য দেয়। আমরা সব বিষয়ে আলোচনা করতে রাজি।” কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। বিল পেশ করতেই লোকসভা থেকে ওয়াকআউট করে বিরোধীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE