Advertisement
০৪ মে ২০২৪

ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় মৃত ৫

কিডনির অসুখে আক্রান্ত এক গৃহবধূকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর স্বামী এবং আত্মীয়েরা। পথে একটি মিনি ট্রাকের সঙ্গে তাঁদের গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা গেলেন পাঁচ জন। বুধবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির হরিপালের হামিরাগাছি এলাকায়। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন ওই দম্পতি এবং তাঁদের ছেলে। বাকি দু’জনের এক জন গাড়ির চালক, অপর জন চালকের বন্ধু। গুরুতর জখম হয়েছেন ওই বধূর দাদা-বৌদি এবং তাঁদের নয় বছরের মেয়ে।

দুর্ঘটনার পর। নিজস্ব চিত্র।

দুর্ঘটনার পর। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হরিপাল শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৬:৫০
Share: Save:

কিডনির অসুখে আক্রান্ত এক গৃহবধূকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর স্বামী এবং আত্মীয়েরা। পথে একটি মিনি ট্রাকের সঙ্গে তাঁদের গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা গেলেন পাঁচ জন। বুধবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির হরিপালের হামিরাগাছি এলাকায়। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন ওই দম্পতি এবং তাঁদের ছেলে। বাকি দু’জনের এক জন গাড়ির চালক, অপর জন চালকের বন্ধু। গুরুতর জখম হয়েছেন ওই বধূর দাদা-বৌদি এবং তাঁদের নয় বছরের মেয়ে।

পুলিশ জানায়, মৃতেরা হলেন বুলা নায়েক (৪৫) ও তাঁর স্বামী অমিত (৫৩) ও ছেলে অর্ঘ্য (২৫) এবং গাড়ির চালক সন্দীপ দে (৪০) ও তাঁর বন্ধু পুলক মাঝি (৪৫)। অমিতবাবুদের বাড়ি গোঘাটের কাঁঠালি এলাকায়। অমিতবাবু স্থানীয় একটি সমবায় সমিতির ম্যানেজার। সন্দীপ এবং পুলকের বাড়ি আরামবাগের বাতানলে।

নায়েক পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দুয়েক আগে বুলাদেবীর কিডনির অসুখ ধরা পড়ে। কলকাতার একটি নার্সিংহোমে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। এক মাস অন্তর তাঁকে সেখানে নিয়ে যেতে হত। এ দিন তাঁর ডায়ালিসিস করানোর কথা ছিল। সেই কারণে এ দিন সকালে বুলাদেবীর দাদা, গোঘাটেরই পাতুলসারার বাসিন্দা সঞ্জিৎ পালের গাড়িতে চেপে তাঁরা কলকাতায় রওনা হন। অর্ঘ্য রসায়নে অনার্স নিয়ে পাশ করে কলকাতার একটি কলেজে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। সেখানে থেকেই পড়াশোনা করেন। মঙ্গলবার তিনি বাড়িতে এসেছিলেন। মাকে ডাক্তার দেখিয়ে কলেজে ফিরবেন বলে তিনিও বাবা-মায়ের সঙ্গী হন। গাড়ির সামনের আসনে চালক এবং পুলকের পাশে বসেছিলেন তিনি। মাঝের আসনে বসেছিলেন বুলাদেবী এবং অমিতবাবু। আর পিছনের আসনে মেয়ে অত্রিকাকে নিয়ে বসেছিলেন সঞ্জীৎবাবু এবং তাঁর স্ত্রী পিয়ালীদেবী। তারকেশ্বর-বৈদ্যবাটি ১২ নম্বর রুট দিয়ে গাড়িটি যাচ্ছিল।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ হামিরাগাছির কাছে উল্টোদিক থেকে আসা একটি ছোট ট্রাকের সঙ্গে গাড়িটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের তীব্রতায় গাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে রাস্তার পাশের নয়ানজুলিতে গিয়ে পড়ে। বেগতিক বুঝে ট্রাক ফেলে চালক পালিয়ে যান। স্থানীয় বাসিন্দারাই প্রথমে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। খবর পেয়ে হরিপাল থানার পুলিশ আসে। ঘটনাস্থলেই বুলাদেবী, অমিতবাবু, অর্ঘ্য এবং পুলকবাবুর মৃত্যু হয়। তাঁদের উদ্ধার করে হরিপাল গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সন্দীপ মারা যান। এসডিপিও (চন্দননগর) দীনেশ কুমার, হরিপালের ওসি বঙ্কিম বিশ্বাস, হুগলি জেলা পরিষদের উপাধ্যক্ষ সমীরণ মিত্র ঘটনাস্থলে আসেন। আঘাত গুরুতর হওয়ায় পিয়ালি, সঞ্জিৎ এবং তাঁদের মেয়েকে কলকাতার একটি নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করা হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, হতাহতদের জুতো এবং অন্যান্য জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। চারদিকে রক্তের দাগ। বেলা বাড়লে ক্রেন এনে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটিকে পুলিশ সরিয়ে নিয়ে যায়। মৃতদেহগুলি ময়না-তদন্তের জন্য শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।

ছোট ট্রাকটিকে আটক করেছে পুলিশ। সেটির চালক পলাতক। তাঁর খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানান, দুর্ঘটনাগ্রস্ত দু’টি গাড়িই অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলছিল। কোনও এক জন চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলাতেই ওই দুর্ঘটনা। সনাতন দাস নামে স্থানীয় এক গ্রামবাসী বলেন, “এই রাস্তায় প্রচণ্ড গতিতে গাড়ি চলে। কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। সেই কারণেই দুর্ঘটনা বন্ধ হয় না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

haripal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE