মালয়েশীয় বিমানের ধ্বংসাবশেষের গায়ে শোকের স্মারক। ছবি: এএফপি।
আকাশে তীব্র শক্তিসম্পন্ন অসংখ্য বস্তুর আঘাতে মালয়েশীয় এয়ারলাইন্সের এমএইচ-১৭ বিমানটি ধ্বংস হয়েছে বলে জানাল ডাচ সেফটি বোর্ড। ১৭ জুলাই ইউক্রনের আকাশে মস্টারডাম থেকে কুয়ালা লামপুরগামী মালয়েশীয় এয়ারলাইন্সের এই বিমানটি ধ্বংস হয়। মারা যান ২৯৮ জন যাত্রী। যার মধ্যে দু’-তৃতীয়াংশ নেদারল্যান্ডসের বাসিন্দা। এই প্রথম সরকারি ভাবে বিমান ধ্বংসের কারণ জানান হল।
ডাচ সেফটি বোর্ড তাদের প্রাথমিক রিপোর্টে জানিয়েছে, তদন্তে বিমানটি ধ্বংস হওয়ার পিছনে কোনও যান্ত্রিক কারণ এবং চালকদের ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিমানটি ধ্বংস হওয়ার পরেই আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউক্রেনের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিমানটি ধ্বংস হয়েছে। আমেরিকার জানিয়েছিল, ইউক্রেনের রুশপন্থী জঙ্গিরা বুক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে বিমানটি ধ্বংস করে। ইউক্রেন বিমানটি ধ্বংসের নিয়ে দুই জঙ্গি নেতার কথোপকথনের একটি অডিও টেপ প্রকাশ করে। ইউক্রনের অভিযোগ ছিল, জঙ্গিরা নয় এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রুশ সেনার অফিসারেরাই। যদিও রাশিয়া ও রুশপন্থী জঙ্গিরা এই অভিযোগ উড়িয়ে দেয়। তাদের পাল্টা অভিযোগ ছিল, ইউক্রেনের কোনও যুদ্ধবিমানই এমএইচ-১৭ কে ধ্বংস করেছে।
এই নিয়ে দু’পক্ষের চাপান-উতোর চরমে ওঠে। রুশপন্থী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাটেরও অভিযোগ ওঠে। অনেক টালবাহানার পরে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা দুর্ঘটনার স্থলে পৌঁছান। অধিকাংশ মৃতদেহ উদ্ধার করে নেদারল্যান্ডসে নিয়ে যাওয়া হয়। রুশপন্থী জঙ্গিরা আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের হাতে বিমানের দু’টি ব্ল্যাকবক্স (ককপিট ভয়েস রেকর্ডার, ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার) তুলে দেয়। ইংল্যান্ডের ফার্নবোরোফ-এ ‘ইউকে এয়ার অ্যাকসিডেন্ট ইভেস্টিগেশন ব্রাঞ্চ’ ব্ল্যাকবক্স দু’টি থেকে তথ্য বিশ্লেষণের দায়িত্ব নেয়।
এই তদন্তে ব্ল্যাকবক্সের তথ্য ছাড়াও কৃত্রিম উপগ্রহের তথ্য, দুর্ঘটনাস্থলের অসংখ্য ছবি খুঁটিয়ে দেখেছে ডাচ তদন্তকারী দল। তদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেতে এক বছরের মতো সময় লাগতে পারে বলে জানান হয়েছে। কিন্তু এই তদন্তের সময়ে নানা অসুবিধা হয়েছে। যেমন, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের পক্ষে দুর্ঘটনাস্থলটিকে ঠিকমতো পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। কারণ, কয়েক দিনের মধ্যেই এই অঞ্চলে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। একই কারণে এই বিমানের সব যাত্রীর মৃতদেহও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
ডাচ রিপোর্টে অবশ্য নির্দিষ্ট করে ক্ষেপণাস্ত্রের কথা বলা হয়নি। ফলে বিমান ধ্বংসের পিছনে কাদের হাত রয়েছে তাও জানান হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বুক ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করে না। লক্ষ্যবস্তুর কাছাকাছি গিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রটির বিস্ফোরণ ঘটে তীব্রশক্তি সম্পন্ন অসংখ্য বস্তু তৈরি হয়। এগুলি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে ধ্বংস করে। এমএইচ-১৭-এর বিমানটির ধ্বংসাবশেষে তীব্রশক্তি সম্পন্ন অসংখ্য বস্তুর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে বলে রিপোর্টে জানান হয়েছে। ফলে এই রিপোর্টের পর ক্ষেপণাস্ত্র তত্ত্বই আরও জোরাল হয়ে উঠল বলে বিশেষজ্ঞদের মত। এখন ইউক্রনের পূর্বের ওই অঞ্চলে যুদ্ধবিরতি চলছে। কিন্তু স্থায়ী শান্তি আসেনি। মাঝেমধ্যেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে। অন্য দিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার উপরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানো নিয়ে আলোচনা করছে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানো হলে তাদের আকাশসীমা দিয়ে ইউরোপের বিমান চলাচল বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে রাশিয়া। এই রিপোর্টটি প্রকাশ পাওয়া পরে রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সংঘাত আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy