Advertisement
০৩ মে ২০২৪

বিমান হানায় জোরালো হচ্ছে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি

ভেঙে পড়া মালয়েশিয়ান বিমানের কাছে আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানকারীদের যেতে বাধা দেবে না পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহীরা। একই সঙ্গে নিহতদের দেহাবশেষ উদ্ধারের কাজেও সাহায্য করবে তারা। শুক্রবার এ কথা জানায় অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই)। কিন্তু বিমানটি ধ্বংস হওয়ার পিছনে তাদের হাত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিদ্রোহীরা। তারা দায় চাপিয়েছে ইউক্রেন সরকারের উপরে।

এমএইচ ১৭-র ধ্বংসাবশেষ। ছবি: রয়টার্স।

এমএইচ ১৭-র ধ্বংসাবশেষ। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৪ ২০:১৪
Share: Save:

ভেঙে পড়া মালয়েশিয়ান বিমানের কাছে আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানকারীদের যেতে বাধা দেবে না পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহীরা। একই সঙ্গে নিহতদের দেহাবশেষ উদ্ধারের কাজেও সাহায্য করবে তারা। শুক্রবার এ কথা জানায় অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই)। কিন্তু বিমানটি ধ্বংস হওয়ার পিছনে তাদের হাত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিদ্রোহীরা। তারা দায় চাপিয়েছে ইউক্রেন সরকারের উপরে। বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডম থেকে কুয়ালা লামপুর যাওয়ার পথে ইউক্রেন-রাশিয়ার সীমান্তে গ্রাবোভা গ্রামের উপরে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিমানটি ধ্বংস হয়ে যায়। নিহত হন ২৯৮ জন।

জানা গিয়েছে, ১৫ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে আছে। পড়ে আছে ছিন্নভিন্ন দেহাবশেষও। এখনও পর্যন্ত ১০০টি দেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, বিমানের দু’টি ব্ল্যাকবক্স-এর (ভয়েস রেকর্ডার, ডেটা রেকর্ডার) খোঁজ মিলেছ। কিন্তু সেগুলিকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে খবর। কে বা কারা এই কাজ করেছেন তা স্পষ্ট নয়। এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। ইউক্রেন সরকারের অভিযোগ, বিদ্রোহীরা তাদের দুর্ঘটনাস্থলে যেতে বাধা দিচ্ছে। তা ছাড়া যে ভাবে উদ্ধারের কাজ চলছে তাতে অনেক সূত্র নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বিমানের ধ্বংসাবশেষ ইউক্রেনেই রাখার দাবি করেছেন। এতে আন্তর্জাতিক তদন্তকারীদের সুবিধা হবে। বিমানটি ধ্বংস হওয়া সময়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তাঁর কথা হচ্ছিল বলে প্রেসিডেন্ট ওবামা জানান। ইউক্রেনের বিদ্রোহীদের মদত দেওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার উপরে নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল। এই ঘটনায় সম্পর্কের আরও অবনতি হবে বলে আশঙ্কা।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্পষ্ট জানিয়েছেন, বিমানটি ধ্বংসই করা বয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলেও বিমানটি ধ্বংস হওয়ার পিছনে রুশপন্থী ইউক্রেনের বিদ্রোহীদের হাত থাকার অভিযোগ ক্রমেই জোরালো হয়েছে। উঠে এসেছে বুক ক্ষেপণাস্ত্রের নামও। সম্প্রতি ইউক্রেনের একটি সেনা ঘাঁটি দখল করে এই ক্ষেপণাস্ত্র বিদ্রোহীদের হাতে আসে। এই অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্রবাহী গাড়িটিকে ঘুরতেও দেখা গিয়েছে বলে খবর। এ দিন ইউক্রেন সরকার একটি অডিও টেপ প্রকাশ করে। সেখানে রুশপন্থী বিদ্রোহীরা বিমানটি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে বিমানটি ধ্বংস করা নিয়ে আলোচনা করছে। তা ছাড়া বৃহস্পতিবারই ইউক্রেন সেনার একটি রসদবাহী বিমানকে তারা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস করেছিল। ইউক্রেন এই অঞ্চলের আকাশসীমায় বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

এ দিকে বিমানটি ধ্বংস হওয়া নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট বলেন, “এটি দুর্ঘটনা নয়, অপরাধমূলক কাজ।” তিনি ঘটনাটির আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা আশা, রাশিয়া সরকার এই তদন্তে পূর্ণাঙ্গ সাহায্য করবে। ২৭ জন অস্ট্রেলীয় নাগরিক এই বিমানের যাত্রী ছিলেন। প্রায় একই দাবি তুলেছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কল। চার জন জার্মান নাগরিক এই বিমানে ছিলেন। নেদারল্যান্ডসের ১৭৩ জন নাগরিকও এই বিমানে ছিলেন। এই ঘটনায় নেদারল্যান্ডসে জাতীয় শোকপালন করা হচ্ছে। নেদারল্যান্ডসের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে পুতিনের কথা হয়। পুতিন পক্ষপাত না রেখে এই ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বিমানটি ধ্বংস হওয়ার জন্য ইউক্রেনকেই দায়ী করেছিলেন। এই ঘটনায় মালয়েশিয়াতেও শোকের ছায়া নেমেছে। বিমানটি ধ্বংস করা হয়ে থাকলে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দ্রুত অপরাধীদের শাস্তির দাবি তুলেছেন। বিমান চলাচলের এই পথে নিরাপত্তার অভাবের কথা আন্তর্জাতিক সংস্থার তরফে জানান হয়নি বলে তিনি জানান।

এক নজরে বুক মিসাইল সিস্টেম

পোশাকি নাম: এস এ-১১ গাডফ্লাই

প্রস্তুতকারক: ১৯৭৯-এ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন

অস্ত্র: ভূমি থেকে আকাশ চারটি ক্ষেপণাস্ত্র

ক’টি অংশ: তিন। এক) লক্ষ্যবস্তু খোঁজার রাডার, দুই) কম্যান্ড পোস্ট (ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সিদ্ধান্ত ও ছোড়ার পরে পর্যবেক্ষণ এখানেই করা হয়), তিন) চারটি ক্ষেপণাস্ত্র।

ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ গতি: শব্দের থেকে তিন গুণ

বিস্ফোরকের পরিমাণ: ৭০ কেজি

ক্ষেপণাস্ত্রের দৈর্ঘ্য: ৫.৫৫ মিটার, ডানার দৈর্ঘ্য ৮৬ সেন্টিমিটার

আঘাত করার ক্ষমতা: ২৩ হাজার মিটার উচ্চতায়

কাজ করে কী ভাবে: রাডার থেকে তথ্য পাওয়ার পরে কম্যান্ড পোস্ট ঠিক করে লক্ষ্যবস্তুটি বন্ধু না শত্রুর। তার পরে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার নির্দেশ যায়। ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি হতে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় লাগে। রাডারের তথ্য ক্ষেপণাস্ত্রকে লক্ষ্যে নিয়ে যায়। এক বার ছোড়ার ১২ মিনিটের মধ্যে পরের ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যায়।

সাফল্য: ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

air malaysia mh17
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE