Advertisement
E-Paper

বয়কট ও বিক্ষোভের মধ্যেই সমাবর্তন অনুষ্ঠান যাদবপুরে

সমাবর্তন বয়কটকারী ছাত্রছাত্রীদের শংসাপত্রে স্ট্যাম্প লাগিয়ে সে কথা লিখে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন আচার্য-রাজ্যপাল। সমাবর্তনের দিন তাঁরই এগিয়ে দেওয়া মেডেল, শংসাপত্র নিতে অস্বীকার করলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা শাখার এ বছরের শ্রেষ্ঠ স্নাতক। জানালেন, অগণতান্ত্রিক উপাচার্যের উপস্থিতিতে ওই সম্মান তিনি নিতে চান না। মুখের উপরে এ রকম কথা শুনে দৃশ্যতই উত্তেজিত হয়ে পড়েন আচার্য। এক সময়ে আঙুল উঁচিয়ে কিছু বলতেও দেখা যায় তাঁকে। তার পরেই সমাবর্তনের মঞ্চ থেকে নেমে আসেন ওই ছাত্রী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ২০:৫০
সম্মান নিতে অস্বীকার, উত্তেজিত আচার্যের আঙুল উঁচিয়ে নির্দেশ ছাত্রীকে। ছবি: রণজীত্ নন্দী

সম্মান নিতে অস্বীকার, উত্তেজিত আচার্যের আঙুল উঁচিয়ে নির্দেশ ছাত্রীকে। ছবি: রণজীত্ নন্দী

সমাবর্তন বয়কটকারী ছাত্রছাত্রীদের শংসাপত্রে স্ট্যাম্প লাগিয়ে সে কথা লিখে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন আচার্য-রাজ্যপাল। সমাবর্তনের দিন তাঁরই এগিয়ে দেওয়া মেডেল, শংসাপত্র নিতে অস্বীকার করলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা শাখার এ বছরের শ্রেষ্ঠ স্নাতক। জানালেন, অগণতান্ত্রিক উপাচার্যের উপস্থিতিতে ওই সম্মান তিনি নিতে চান না। মুখের উপরে এ রকম কথা শুনে দৃশ্যতই উত্তেজিত হয়ে পড়েন আচার্য। এক সময়ে আঙুল উঁচিয়ে কিছু বলতেও দেখা যায় তাঁকে। তার পরেই সমাবর্তনের মঞ্চ থেকে নেমে আসেন ওই ছাত্রী।

বুধবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সমাবর্তনের শুরুতে ঘটে যাওয়া এই একটি ছবিই বুঝিয়ে দিচ্ছে গোটা পরিস্থিতি। কড়া পুলিশি নিরাপত্তা, কালো পতাকা, ছাত্রছাত্রীদের স্লোগান, বিক্ষোভ, উপাচার্যের পদত্যাগ ও আচার্যের উদ্দেশে ‘গো ব্যাক’ দেওয়াল লিখনের মধ্য দিয়েই এ দিন সমাবর্তন মঞ্চে ঢোকেন রাজ্যপাল। কিন্তু মঞ্চে শংসাপত্র দেওয়ার শুরুতেই যে এমন ধাক্কা খেতে হবে, সেটা সম্ভবত আঁচ করেননি তিনি।

এ দিন বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ বিশেষ সমাবর্তনের সমাপ্তি ও বার্ষিক সমাবর্তন সূচনার ঘোষণা করেন রাজ্যপাল। প্রথমেই কলা শাখার শ্রেষ্ঠ স্নাতক গীতশ্রী সরকারের নাম ঘোষণা করা হয়। মঞ্চে উঠে হাতজোড় করে গীতশ্রী জানান, তিনি ওই শংসাপত্র ও মেডেল নেবেন না। উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর বিরোধিতা করতেই তাঁর এই পদক্ষেপ বলে আচার্যকে জানান গীতশ্রী। ওই ছাত্রী পরে বলেন, “এ কথা শুনে রাজ্যপাল জিজ্ঞাসা করেন, আমি শংসাপত্র নেব কি না। আমি নেব না বলায় উনি আঙুল উঁচিয়ে অত্যন্ত বিশ্রি ভাবে আমাকে চলে যেতে বলেন।”

মঞ্চ থেকে নেমে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলায় তাঁকে এক শিক্ষক হাত ধরে বের করে দেন বলেও গীতশ্রীর অভিযোগ। পরে ওই ছাত্রী বলেন, “তিন বছর কঠোর পরিশ্রম করে স্নাতক হয়েছি। এই শংসাপত্র আমার কাছে স্বপ্নের মতো। কিন্তু আরও বড় স্বপ্ন আছে আর শিরদাঁড়াটা শক্ত আছে। তাই প্রবল শক্তিশালী শাসকের মুখের উপরে এই ‘না’ বলতে পারাটাই হয়তো সেরা শংসাপত্র।”

বার্ষিক সমাবর্তনের শুরুতে শ্রেষ্ঠ স্নাতক ও শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ হিসেবে পাঁচ জনকে মেডেল, ট্রফি, শংসাপত্র দেওয়ার কথা ছিল। তাঁদের মধ্যে কেবল এক জন সেগুলি নিয়েছেন। গীতশ্রী মঞ্চে উঠে তা ফিরিয়ে দিয়েছেন। বাকি তিন জন আসেননি বলে জানান রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ। আচার্য-উপাচার্য বেরিয়ে যাওয়ার পরে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল-এর শংসাপত্র দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য আশিস বর্মা। সেই সময়েও অনেকেই ‘রোব’ (সমাবর্তনের দিন যে বিশেষ পোশাক পরা হয়) পরে মঞ্চে উঠে তা নিতে অস্বীকার করেন।

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবর্তনে। ছবি: শশাঙ্ক মন্ডল।

যাদবপুরের পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের বেশির ভাগ সমাবর্তন বয়কটের ডাক দিয়েছেন আগেই। শিক্ষক সংগঠন জুটা-র ২০ জন সদস্য মঙ্গলবার বিকেল থেকে অনশনও শুরু করেন। ওই দিন রাতভর ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকে। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দর্শকাশন ছিল প্রায় ফাঁকা।

তবে অনুষ্ঠানে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য এ দিন সকাল থেকেই গোটা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মোতায়েন করা হয় প্রচুর পুলিশ। পাশাপাশিই ক্যাম্পাস জুড়ে কালো কাপড়ে ‘ভিসি মাস্ট রিজাইন’, ‘লাঠির মুখে গানের সুর দেখিয়ে দিল যাদবপুর’ ইত্যাদি স্লোগান লেখা। জায়গায় জায়গায় হাততালি দিয়ে ড্রাম পিটিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা। পাঁচ নম্বর গেট থেকে সোজা ঢুকে ওপেন এয়ার থিয়েটার (ওএটি), যেখানে সমাবর্তনের জায়গা। গোটা রাস্তায় সাদা-গেরুয়া কাপড়। তার উপরে কালো কালিতে আন্দোলনকারীরা লিখেছেন ‘বয়কট’। কেশরীনাথকে ‘গো ব্যাক’ স্লোগানও আছে। ওএটি-র সদ্য রং করা দেওয়ালে কালো কালি দিয়ে সমাবর্তন বয়কটের ঘোষণা লেখা। যত বারই দেওয়াল রং করা হচ্ছে, ছাত্রছাত্রীরা ফের লিখছেন বয়কটের ঘোষণা। সেই সঙ্গে চলছে স্লোগান।

এরই মধ্যে আচার্য-রাজ্যপাল সমাবর্তনের ওএটি-র কাছে পৌঁছন। তাঁকে কালো পতাকাও দেখানো হয়। যাঁর ভূমিকাকে কেন্দ্র করে পড়ুয়া-শিক্ষকদের এমন বিক্ষোভ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই উপাচার্য অভিজিৎবাবুও একই সঙ্গে হাজির হন সমাবর্তন মঞ্চের কাছে। চার দিকে তখন স্লোগান, উপাচার্যের পদত্যাগ চাই। গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশি তাণ্ডবের জেরে যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয় পড়ুয়াদের ভেতর, প্রায় তিন মাস ধরে সেই বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। বেলার দিকে প্রবল চিৎকার এবং স্লোগানের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়েন আচার্য এবং উপাচার্য। পরের অর্ধে সমাবর্তন চালান সহ-উপাচার্য।

convocation ju jadavpur university boycott
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy