Advertisement
E-Paper

মালদহ মেডিক্যালে মৃত ৯ শিশু, লিচুতে ছড়ানো কীটনাশক থেকে বিষক্রিয়ার আশঙ্কা

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৪ ১৮:৩৩

শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল। গত ২৪ ঘণ্টায় মালদহ মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হল ন’টি শিশুর। তাদের বয়স দুই থেকে পাঁচ বছর।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সকলেই জ্বর আর বমির উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছিল। হাসপাতালে আনার চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই খিঁচুনি শুরু হয় তাদের। তার পর মৃত্যু। ন’জনের ক্ষেত্রেই বিষয়টা এক। জানা গিয়েছে, এরা প্রত্যেকেই লিচু খেয়েছিল। যা থেকে চিকিত্‌সকদের আশঙ্কা, লিচুতে ছড়ানো কীটনাশকের বিষক্রিয়া থেকেই এই মৃত্যু হয়েছে।

মৃতদের বেশির ভাগেরই বাড়ি মালদহের কালিয়াচক এলাকায়। মালদহ মেডিক্যাল কলেজের সুপার মহম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, “ভর্তি হওয়া শিশুদের প্রত্যেকেই লিচু খেয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, লিচু খাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাদের বমি শুরু হয় এবং জ্বর আসে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘণ্টা কয়েকের মধ্যেই তাদের শরীরে প্রবল খিঁচুনি দেখা দেয়। এর পর মারা যায় ওই শিশুরা। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, লিচুতে ব্যবহৃত কীটনাশক থেকে কোনও ভাবে বিষক্রিয়ার ফলে এই মৃত্যু।” হাসপাতাল সূত্রে খবর, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কলকাতা থেকে ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং স্বাস্থ্য দফতরের একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল মালদহ মেডিক্যাল কলেজে আসবে।

২০১২ সালে লিচু খেয়ে একই উপসর্গ নিয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল বেশ কয়েকটি শিশু। প্রায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সে বারও প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছিল, লিচুতে ছড়ানো কীটনাশক থেকেই ওই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। পরস্থিতি খতিয়ে দেখতে ত্রিদিববাবুর নেতৃত্বে স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ প্রতিনিধি দল এসেছিল। কিন্তু ঠিক কী কারণে বা ছড়ানো কীটনাশকের কোন উপাদান থেকে, এমনকী, কী ধরনের বিষক্রিয়া থেকে ওই মৃত্যু হয়েছিল সে বিষয়ে এখনও সুস্পষ্ট কোনও রিপোর্ট জমা পড়েনি। দু’বছরের মধ্যে ফের একই ধরনের মৃত্যু স্বাস্থ্য দফতরের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, “বছর দুয়েক আগে একই কারণে ১০টি শিশু মারা গিয়েছিল। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞ দল আসছে কলকাতা থেকে।”

কিন্তু লিচুতে ছড়ানো কীটনাশক কী ভাবে প্রভাব ফেলতে পারে শরীরে?

স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই শিশুরা খোসা সমেত লিচু মুখে পুরে নিয়েছিল। সে ক্ষেত্রে কীটনাশক সরাসরি শরীরের সংস্পর্শে আসে। তার থেকেই বিষক্রিয়া। কিন্তু কীটনাশক ছড়ানোর পর কত দিন পর্যন্ত তা কার্যকরী থাকে? খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং উদ্যানপালন দফতরের মালদহ জেলার সহ-অধিকর্তা রাহুল চক্রবর্তী বলেন, “লিচুতে সাধারণত সিন্থেটিক পাইরিথ্রয়েড জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। এই জাতীয় কীটনাশকের বিষক্রিয়া ৮ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত থাকে।” তিনি জানান, লিচুর ত্বক খসখসে বলে কীটনাশক তার গায়ে লেগে থাকে। কিন্তু আমের ক্ষেত্রে একই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা হলেও, ত্বক মসৃণ বলে তা তাড়াতাড়ি কার্যহীন হয়ে পড়ে। শিশুরা খোসা সমেত লিচু মুখে না পুরলে এমনটা হওয়ার আশঙ্কা কম ছিল বলে তাঁর মত। তিনি এ-ও জানান, কীটনাশক থেকেই যে এই মৃত্যু হয়েছে সেটা বলার সময় এখনও আসেনি। যে কীটনাশক ব্যবহার করার কথা সরকারি ভাবে বলা হয়, তাতে এমনটা হওয়ার আশঙ্কা প্রায় নেই বললেই চলে। বেশি ফলনের আশায় অন্য ক্ষতিকারক কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছে কি? সেই সম্ভাবনা অবশ্য উড়িয়ে দেননি রাহুলবাবু।

গোটা মালদহ জেলায় প্রায় ১২০০ হেক্টর জমিতে লিচুর ফলন হয়। এর মধ্যে প্রায় হাজার হেক্টর জমিই কালিয়াচকে। কালিয়াচক থেকে এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ জ্বর এবং বমির উপসর্গ নিয়ে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিল বছর দু’য়ের শিশু সারজিনা খাতুন। বেলা দেড়টা নাগাদ খিঁচুনি দিয়ে শিশুটি মারা যায়। তার মা সারিখা বিবি বলেন, “গত কাল বিকেলের দিকে লিচু কিনে খেয়েছিল সারজিনা। সকাল থেকেই তার জ্বর আসে। সেই সঙ্গে বমি। হাসপাতালে ভর্তি করার পর খিঁচুনি দিতে থাকে খুব। তার পর সব শেষ।”

maldah children death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy