Advertisement
E-Paper

শিকল ছিঁড়ে হাত মেলালো কিউবা-আমেরিকা

৫৪ বছর পরে ফোনটা বাজল। এক প্রান্তে ওয়াশিংটন। অন্য প্রান্তে হাভানা। ফোন করলেন বিশ্বের ‘সর্বশক্তি ধর’ রাষ্ট্রনায়ক বারাক ওবামা। অন্য প্রান্তে ‘লড়াকু’ দেশে কিউবার প্রধান রাউল কাস্ত্রো। বংশসূত্রে যিনি আবার কমিউনিজমের ‘শেষ সূর্য’ ফিদেল কাস্ত্রোর ভাই। কথা হল ৪৫ মিনিট। দীর্ঘ শীতলতা, বৈরির শিকল ছিঁড়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে এগিয়ে যেতে রাজি হলেন দু’জনেই। মুক্তি দেওয়া হল দু’দেশে বন্দি থাকা বেশ কয়েক জন নাগরিককে। সিদ্ধান্ত হল বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপনের। বিস্ময়ে নড়েচড়ে বসল বাকি বিশ্ব।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৩:০৪
জাতির উদ্দেশে ভাষণ দুই রাষ্ট্রনায়কের। ছবি: এফপি।

জাতির উদ্দেশে ভাষণ দুই রাষ্ট্রনায়কের। ছবি: এফপি।

৫৪ বছর পরে ফোনটা বাজল। এক প্রান্তে ওয়াশিংটন। অন্য প্রান্তে হাভানা। ফোন করলেন বিশ্বের ‘সর্বশক্তি ধর’ রাষ্ট্রনায়ক বারাক ওবামা। অন্য প্রান্তে ‘লড়াকু’ দেশে কিউবার প্রধান রাউল কাস্ত্রো। বংশসূত্রে যিনি আবার কমিউনিজমের ‘শেষ সূর্য’ ফিদেল কাস্ত্রোর ভাই। কথা হল ৪৫ মিনিট। দীর্ঘ শীতলতা, বৈরির শিকল ছিঁড়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে এগিয়ে যেতে রাজি হলেন দু’জনেই। মুক্তি দেওয়া হল দু’দেশে বন্দি থাকা বেশ কয়েক জন নাগরিককে। সিদ্ধান্ত হল বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপনের। বিস্ময়ে নড়েচড়ে বসল বাকি বিশ্ব।

প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচনাও শুরু হল। সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ এল ঘর থেকে। আমেরিকায় নির্বাসিত অধিকাংশ কিউবার নাগরিকরা তীব্র প্রতিবাদ জানালেন। সমালোচনা করলেন রিপাবলিকান দলের অধিকাংশ নেতাও। কিন্তু অবিচল ওবামা দেশবাসীকে জানালেন, ৫৪ বছর ধরে কিউবাকে বিছিন্ন করে রাখার নীতি বিশেষ কাজ করেনি। তাই আমেরিকা তার বিদেশনীতি বদলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশবাসীকে প্রায় একই কথা জানালেন রাউল কাস্ত্রোও। যে ভাষণ শুনতে কিউবাবাসী ভিড় জমিয়েছিলেন টিভির সামনে। আমেরিকাকে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে অনুরোধ করলেন তিনি। হাভানায় বেজে উঠল চার্চের বেল।

কিউবার সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সলতে পাকানো শুরু কিন্তু এক বছর আগে। এর একটি আভাস মিলেছিল নেলসন ম্যান্ডেলার স্মরণ সভায়। বৃষ্টিমগ্ন সে দিনে সিঁড়ি দিয়ে উঠে বারাক ওবামা সরাসরি হাত মিলিয়েছিলেন রাউল কাস্ত্রোর সঙ্গে। বিস্মিত হয়েছিলেন পাশে থাকা অন্য দেশের রাষ্ট্র নায়করা। শুরু হয়েছিল কানাঘুষো। এর পরে এ দিকে বিশেষ নজর দেয়নি কেউ। না রাজনৈতিক মহল। না সংবাদমাধ্যম। কিন্তু কাজ চলছিল গোপনে। দু’দেশের প্রশাসন আলোচনা চালাচ্ছিলেন কানাডা এবং ভ্যাটিকানে। পোপ ফ্রান্সিস এই অলোচনার সঙ্গে গভীর ভাবে জড়িয়ে ছিলেন। যাঁকে ভাষণে ধন্যবাদ জানিয়েছেন স্বয়ং রাউল কাস্ত্রো।

প্রাথমিক পর্বে আলোচনা চলে বন্দি মুক্তি নিয়ে। পাঁচ বছর ধরে কিউবায় বন্দি মার্কিন ত্রাণকর্মী অ্যালেন গ্রসের মুক্তির দাবিতে আমেরিকা বেশ কয়েক বছর ধরেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিউবায় ১৫ বছরের সাজা কাটাচ্ছিলেন গ্রস। বেশ কয়েক বার তাঁকে মুক্ত করতে প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিল আমেরিকা। রাউল কাস্ত্রো-সহ কিউবার প্রশাসনের সঙ্গে তাঁদের সবিস্তার আলোচনাও হয়। কিন্তু কিউবার দাবি ছিল বন্দি প্রত্যর্পণের। আমেরিকায় বন্দি সে দেশের বেশ কয়েক জন নাগরিকের মুক্তি চাইছিল তাঁরা। এঁদের মধ্যে বেশির ভাগই গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধে শাস্তি পেয়েছেন। পাশাপাশি সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা তোলার দাবিও ছিল। মার্কিনি এই নিষেধাজ্ঞা কিউবার অর্থনীতিকে পঙ্গু করে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের হিসেবে কিউবার অর্থনীতির এই ৫৪ বছরে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১.১ ট্রিলিয়ন ডলার। বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা তোলায় বিশেষ আপত্তি ছিল না ওবামা-র। কারণ এতে মার্কিন অর্থনীতিরও প্রতি বছর ১.২ বিলিয়ন ডলার নষ্ট হচ্ছিল।


৮ জানুয়ারি ১৯৫৯। বাতিস্তার সেনা ছাউনিতে ফিদেল কাস্ত্রো। ফাইল চিত্র।

প্রাথমিক ভাবে বন্দি-মুক্তিতে আপত্তি ছিল ওবামার। ঠিক এখানেই আসরে নামেন পোপ ফ্রান্সিস। দু’দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে এ বিষয়ে বার বার অনুরোধ করেন তিনি। ওবামা ভ্যাটিকান সফরে গেলে তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। অবশেষে বরফ গলে। শুধু অ্যালেন গ্রস নন, প্রায় দু’দশক ধরে বন্দি এক মার্কিন চরকে ছাড়তেও রাজি হল কিউবা। এই চর এখনও এতই গুরুত্বপূর্ণ যে তার নাম প্রকাশ করছে না আমেরিকা। বিনিময়ে তিন কিউবার চরকে ছাড়তে রাজি হয় আমেরিকা। আমেরিকার নানা সেনা ঘাঁটি থেকে তথ্য পাচার করার অপরাধে বেশ কয়েক দশক ধরে জেল খাটছিলেন তাঁরা। পাশাপাশি কিউবার সঙ্গে ৬০ দশকে ছিন্ন হয়ে যাওয়া বৈদেশিক সম্পর্ক গড়ে তোলার কাজও শুরু হয়েছে। হাভানায় কয়েক মাসের মধ্যে মার্কিন দূতাবাস খোলা সম্ভব হবে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ দিনের ভাষণে আশা প্রকাশ করেছেন। ওয়াশিংটনেও খুলবে কিউবার দূতাবাস।

কিন্তু কেন বিদেশনীতির এমন আমূল পরিবর্তন করলেন বারাক ওবামা? কেন বেছে নিলেন এই সময়কে? বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে ক্ষমতায় বসেছিলেন ওবামা। তাঁর পরিবর্তনের ডাকে আলোড়িত হয়েছিল সারা বিশ্ব। হাতে উঠেছিল নোবেল পুরস্কারও। কিন্তু যত দিন গিয়েছে সেই পরিবর্তনের আলো ক্রমেই নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছে। ইরাক, আফগানিস্তান, প্যালেস্তাইন-ইজরায়েল থেকে ঘরের স্বাস্থ্যনীতি- কাক্ষিত ফল মেলেনি অনেক ক্ষেত্রেই। মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর নীতির ফলশ্রুতি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। উপরন্তু তাঁর সময়েই বেড়েছে ড্রোন হামলা। যে হামলায় বহু নিরাপরাধের মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। অনেকের মতে, এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ক্ষমতার শেষ কয়েক বছরে বেশ কিছু স্মরণীয় কাজ করে যেতে চাইছেন তিনি। এর মধ্যে আমেরিকায় বেআইনি ভাবে বসবাসকারীদের সাময়িক ভাবে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো বন্ধ করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন নিজের বিশেষ ক্ষমতা বলে। যা নিয়ে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ মার্কিন আইনসভার নিম্ন কক্ষ কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যরা। অনেকই একে তাঁদের অধিকারে হস্তক্ষেপ বলে মনে করছেন। এর পরেই ৯/১১ পরবর্তী সিআইএ-র হাতে বন্দিদের উপরে অত্যাচার নিয়ে মার্কিন সেনেটের রিপোর্টের ‘এগজিকিউটিভ সামারি’ প্রকাশিত হয়। যাতে সিআইএ-র সে সময়ের নীতির তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। অনেকেই এই রিপোর্ট প্রকাশের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু ওবামা শুধু রিপোর্টটি প্রকাশের পক্ষেই দাঁড়াননি, সিআইএ-র সেই সময়ের আচরণের তীব্র নিন্দাও করেছেন। ক্ষমতায় আসার পরে সিআইএ-র এই ধরনের জেরার পদ্ধতি বন্ধ করে দেন ওবামা। এর পরেই কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত। ওবামার সামনে কোনও বড় নির্বাচন নেই। ফলে এটিই কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি।


৩ জানুয়ারি ১৯৬১। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কিউবা ছাড়ার নির্দেশের পর সে দেশের মার্কিন দূতাবাসের সামনে ভিড় দূতাবাসের কর্মীদের। ফাইল চিত্র।

বেশ কঠিন এই সিদ্ধান্ত। ৫০ বছরের নীতিকে হঠাৎ করে ভুল বলা বড় সহজ কাজ নয়। ঘরে শুরু হওয়া প্রতিবাদ তারই প্রতিফলন। এর যোগ্য কারণও রয়েছে। কাস্ত্রো ক্ষমতায় আসার পর পরই বৈদেশিক সম্পর্ক ছিন্ন করে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয় আমেরিকা। ১৯৬১ সালে ফিদেল কাস্ত্রোকে ক্ষমতা থেকে সরাতে নির্বাসিত কিউবার নাগরিকদের নিয়ে অভিযান চালিয়েছিল সিআইএ। ‘বে অফ পিগস’-এর সেই অভিযান ব্যর্থ হয়। এর পরে কাস্ত্রোকে হত্যা করার বেশ কিছু চক্রান্তও হয়। ১৯৬২-তে কিউবায় সোভিয়েত রাশিয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের ঘাঁটি তৈরি আটকাতে পারমাণবিক যুদ্ধের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল রাশিয়া ও আমেরিকা।

নির্বাসিত কিউবার নাগরিকদের বড় ঘাঁটি মায়ামি। সেখানের বাসিন্দারা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পথে নেমেছেন। অধিকাংশ রিপাবলিকান নেতা এর তীব্র বিরোধিতা করেছেন। বিরোধীরদের অন্যতম মুখ ফ্লোরিডার সেনেটর মার্কো রুবিও। যাঁকে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টের দৌড়ে অন্যতম রিপাবলিকান সদস্য বলে মনে করছেন অনেকেই। রুবিও-র মতে, ওবামা তাঁর দেখা সবচেয়ে খারাপ বোঝাপড়াকারী। কারণ, এ ভাবে বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপনের বিনিময়ে প্রায় শূন্য হাতে ফিরেছেন ওবামা। তাঁর আরও দাবি, কিউবায় এখনও ব্যক্তিস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র নেই। কিউবা এখনও সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্রগুলিকে নানা ভাবে সাহায্য করে। এখানেই তৈরি হয়েছে আশঙ্কা। কারণ, কিউবার অনুরোধ মতো ওবামার পক্ষে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা তোলাও সম্ভব নয়। সেই দায়িত্ব মার্কিন কংগ্রেসের। সেখানে রিপাবলিকান-রা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ওবামা এই সিদ্ধান্ত কে ঐতিহাসিক বললেও যথেষ্ট সতর্ক ছিলেন রাউল কাস্ত্রো। তাঁর ক্ষেত্রেও যথেষ্ট কঠিন সিদ্ধান্ত। ক্ষমতা হাতে আসার পরে কিউবার দম বন্ধ করা পরিবেশ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করছেন তিনি। ছোটখাটো অর্থনৈতিক সংস্কারও করেছেন। তবে দাদা ফিদেল এখন জীবিত। কোনও ভুল পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আবার ঘোরালো করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁর।


হাভানা ছাড়ছেন অ্যালান গ্রস। ছবি: রয়টার্স।

সময়-সরণিতে কিউবা-আমেরিকা

১৯৫৯:

স্বশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে আমেরিকা সমর্থিত বাতিস্তা সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় বসলেন ফিদেল কাস্ত্রো।

১৯৬০-৬১:

কিউবায় মার্কিন শিল্প ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির জাতীয়করণ হল। এ জন্য কোনও ক্ষতিপূরণ পেল না আমেরিকা। প্রতিবাদে কিউবার সঙ্গে বৈদেশিক সম্পর্ক ছিন্ন করল আমেরিকা। শুরু হল বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা।

১৯৬১:

সিআইএ-র মদতে আমেরিকায় নির্বাসিত কিউবার নাগরিকরা কাস্ত্রোকে ক্ষমতা থেকে সরাতে অভিযান চালাল। ‘বে অফ পিগস’-এর এই অভিযান ব্যর্থ হয়।

১৯৬২:

কিউবায় দূরপাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের ঘাঁটি তৈরির ছবি তুলল মার্কিন ইউ-২ বিমান। রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র কিউবায় আসা আটকাতে এবং ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি তৈরি বন্ধ করতে নৌসেনাকে কিউবা অবরোধ করতে বললেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডি। প্রথমে অনড় ছিলেন তৎকালীন সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট স্ক্রুশ্চেভ। সারা বিশ্ব পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়ে আক্রান্ত হয়েছিল। পরে ঘাঁটি বন্ধ করতে রাজি হয় সোভিয়েত রাশিয়া। বিনিময়ে তুরস্ক থেকে তাঁদের ক্ষেপণাস্ত্রের ঘাঁটি সরিয়ে নেয় আমেরিকা।

২০০১:

মার্কিন সেনা ঘাঁটি থেকে তথ্য পাচারের অপরাধে পাঁচ কিউবার নাগরিক শাস্তি পেলেন। এঁদেরই ‘কিউবান ফাইভ’ বলে।

২০০৮:

অবসর নিলেন ফিদেল কাস্ত্রো। কিউবার প্রেসিডেন্ট হলেন রাউল কাস্ত্রো। ধীরে ধীরে কিউবায় সংস্কারে শুরু হল। কিউবায় মার্কিন নাগরিকদের যাতায়াত বাড়ল।

২০০৯:

মার্কিন ত্রাণকর্মী অ্যালেন গ্রস বন্দি হলেন।

cuba america raul kastro barack obama pact
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy