চতুর্দিকে অন্ধকারের মধ্যে আচমকাই কিছু আলোকবিন্দু। যেন কিছু দ্বীপ, গভীর নিকষ কালোর মধ্যে ঐশ্বর্যের ইঙ্গিত। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বেরোল মঙ্গলবার। জেলায় জেলায় ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য রত্ন আবিষ্কারের দিন ছিল এটা।
ম্যালেরিয়ার দাপট থেকে এ বঙ্গীয় পল্লীসমাজ অনেকটা মুক্ত হয়েছে হয়তো, কিন্তু অন্যথায়, চণ্ডীমণ্ডপ চর্চিত বিদ্বেষ-ঘৃণা-হিংসাদীর্ণ শরৎচন্দ্রীয় সমাজের থেকে খুব যে উত্তরণ হয়েছে, এমনটা জোর গলায় বলা কঠিন হয়ে পড়ে। চারিদিকে নেতির এই রমরমার সময়ে, অকস্মাৎ এক ঝলক খোলা সতেজ হাওয়ার মতো নবীন অনেক ছেলে-মেয়ের মুখ ভেসে এল পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত প্রান্তগুলো থেকে। কেউ এসেছে দশে কেউ বা প্রথম একশোয়, নিতান্ত দরিদ্র পরিবারের প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া কোনও সন্তান হয়তো বা উত্তীর্ণ হয়েছে সসম্মানে, অজস্র প্রতিকূলতা ঠেলে কেউ বা উঠে এসেছে সামনের সারিতে। কলুষহীন দীপ্ত ওই চোখগুলোতে এক স্বপ্নের হাতছানি।
এ বঙ্গের ভাণ্ডারে এত রত্ন, কিন্তু তার জন্য যোগ্য আধার হয়ে উঠতে পারছি আমরা? এই মেধা, এই প্রতিভাকে ধরে রাখার মতো পরিসর তৈরি করতে পারছি? ভূমিপুত্র হিসাবে গৌরব বোধ করব কিন্তু সেই ভূমিতে যথেষ্ট জল সি়ঞ্চন করতে পারছি আমরা?
শিল্পহীন, কর্মসম্ভাবনাহীন, স্বপ্নহীন এই দগ্ধ রাজ্যের অধিবাসী হিসাবে উত্তরপুরুষের উদ্দেশে শুভেচ্ছা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। শুভেচ্ছা জানালাম নবীন প্রজন্মকে।
এ বঙ্গকে এই প্রজন্মের বাসযোগ্য করার স্বপ্নটা কিন্তু ছাড়লাম না।