অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
কড়া বার্তা দিয়েছেন দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক স্বয়ং! আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই বার্তা পেতেই কার্যত ‘সামাল সামাল’ রব বীরভূমের তৃণমূলের নেতাদের। তৃণমূল সূত্রে দাবি, দলের ‘শাস্তি’ এড়াতে নিজেদের এলাকায় ভোটের ‘লিড’ কী ভাবে রক্ষা করা যায় আপাতত তা নিয়েই চিন্তিত জেলার বহু নেতা।
বুধবারই তারাপীঠে কর্মিসভায় এসে তৃণমূলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, যে নেতা যে এলাকার দায়িত্বে সেখানে ভোটের ‘লিড’ তাঁকে রক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে পুরসভা এলাকার পুরপ্রধান, উপ-পুরপ্রধান ও টাউন সভাপতিদের দায়িত্বের উপরে জোর দেন তিনি। প্রত্যাশিত লিড না থাকলে ভোটের পরে ‘ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে বলেও কড়া বার্তা দেন অভিষেক। তার পরেই জেলা তৃণমূলের নেতারা নড়েচড়ে বসেছেন বলে দল সূত্রে দাবি।
তৃণমূল সূত্রে খবর, শহরের অনেক নেতাই নিজেদের ওয়ার্ডে এ বার ‘মান সম্মানের লড়াই’ বা ‘নিজের অস্তিত্বের লড়াই’ বলে অনুগামীদের নিয়ে প্রচার শুরু করেছেন। অনেকে কর্মী এবং কাউন্সিলরদের নিয়ে তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকেছেন বলেও তৃণমূল সূত্রে দাবি। কেউ আবার ধীরে চলো নীতি নিয়ে এগোতে চাইছেন বলেও খবর।
বস্তুত, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জেলার দু’টি আসনে তৃণমূল জয়ী হলেও জেলার ৬টি পুরসভার মধ্যে একমাত্র নলহাটি পুরসভা এলাকা ছাড়া বাকি রামপুরহাট, সিউড়ি, সাঁইথিয়া, দুবরাজপুর, বোলপুরের মতো সব ক’টি পুরসভা এলাকাতেই বিজেপি জয়ী হয়েছিল। গত বিধানসভা নির্বাচনেও তৃণমূল জেলার ১১টি বিধানসভার মধ্যে ১০টিতে জয়ী হলেও নলহাটি আর দুবরাজপুর ছাড়া বাকি ৪টি পুরসভা এলাকায় বিজেপি জয়ী হয়। দুবরাজপুর পুরসভায় তৃণমূলের লিড থাকলেও বিধানসভা আসনে জয়ী হয় বিজেপি।
দুবরাজপুর পুরসভা এলাকায় ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আড়াই হাজার ভোটে তৃণমূলের থেকে বিজেপি এগিয়ে ছিল। দুবরাজপুরের পুরপ্রধান পীযুষ পাণ্ডে অবশ্য বলছেন, ‘‘বিধানসভা ভোটে আমরা লোকসভার ফল পুররুদ্ধার করে ৩২৮ ভোটে জয়ী হই।’’ তবে পীযূষ মানছেন, ‘‘পুর এলাকায় কিছু কিছু জায়গা আছে সেখানে বিজেপির বুথে লোক নেই অথচ বিজেপি এগিয়ে থাকছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এই সমস্ত ছোট ছোট বিষয়গুলি নিয়ে অবশ্যই আমরা দলের কর্মীরা, কাউন্সিলরেরা নিজেদের মধ্যে পর্যালোচনা করছি। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ মতো পুরসভা এলাকায় লিড রাখার চেষ্টা করব।’’
অভিষেক বার্তা দেওয়ার পরদিনই সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় নিজের ৯ নম্বর ওয়ার্ডেই বৃহস্পতিবার কর্মী-বৈঠক ডাকেন। দল সূত্রে দাবি, নিজেদের ভুল শুধরোতেই এই বৈঠক। উজ্জ্বল নিজে বললেন, ‘‘শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ অনুসারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনকল্যাণমুখী প্রকল্প, লক্ষ্মীর ভান্ডার-সহ আরও বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে প্রচার করব। সেই সঙ্গেই পেট্রল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের মতো অত্যাবশকীয় জিনিসের মুল্যবৃদ্ধি নিয়েও শহরের মানুষকে বোঝাব।’’
গত লোকসভায় ‘পিছিয়ে থাকা’ আর এক পুরসভা সাঁইথিয়ার পুরসভার পুরপ্রধান বিপ্লব দত্ত দাবি করলেন, ‘‘গত লোকসভা নির্বাচনে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিজেপি ভোট করেছিল। এ বারে মানুষ নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। তাই সাঁইথিয়া পুরসভায় এবার অবশ্যই লিড থাকবে।’’ একই কথা জানালেন রামপুরহাট শহর তৃণমূলের সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বিজেপির শহরে কর্মী কোথায়, যে ভোট করবে?’’ রামপুরহাটের পুরপ্রধান সৌমেন ভকত বলছেন, ‘‘আমরা পুর এলাকায় প্রতিটি ওয়ার্ডে জয় যাতে হয় সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’’
গত লোকসভা ভোটে জেলায় একমাত্র নলহাটি পুরসভা এলাকাতেই ‘লিড’ ছিল তৃণমূলের। সেই নলহাটির পুরপ্রধান, বিধায়ক রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিংহ বলছেন, ‘‘লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের মতো এ বারেও আমাদের শহরে লিড থাকবে।’’
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শহরাঞ্চলের ভোট নিয়ে কর্মীদের যে কড়া বার্তা দিয়েছেন তা নিয়ে বীরভুম লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দেবাশিস ধরের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কর্মীদের কড়া বার্তা ইত্যাদি তাদের দলীয় ব্যাপার। তবে মানুষ যদি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিতে পারেন তাহলে শহর কেন, গ্রামাঞ্চল-সহ সব জায়গাতেই তৃণমূল হারবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy