—ফাইল চিত্র।
আগামী ১ জুন দক্ষিণ কলকাতায় লোকসভা ভোট। সেই ভোটের প্রস্তুতিস্বরূপ দক্ষিণ কলকাতার সাতটি পৃথক জায়গায় কমিশনিং এবং মকপোলের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে গিয়ে প্রকট হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ কলকাতা জেলা বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা, এমনটাই অভিযোগ। নিয়মানুযায়ী, ইভিএম সঠিক রয়েছে কি না, তা দেখতেই এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হয় সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের। শুক্র, শনি এবং রবি— এই তিন দিন ধরে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এই অংশে কাজ চলছে দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন কলেজ এবং স্কুলে। এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে অন্য রাজনৈতিক দলগুলির থেকে পিছিয়ে পড়েছে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি। কমিশনিং এবং মকপোলে শাসকদল তৃণমূল এবং সিপিএম প্রার্থীর হয়ে অংশ নিতে যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়েছে, সেখানে বিজেপির তরফে নামমাত্র প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে দলের অন্দরেই।
নির্বাচন প্রক্রিয়ার এই অংশের বিধানসভা ভিত্তিক ভাগ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাই কসবা বিধানসভার মোট কমিশনের কাজ হচ্ছে গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে। ভবানীপুর বিধানসভার কাজ হচ্ছে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুলে। রাসবিহারী কেন্দ্রের কাজ হচ্ছে বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলে। কলকাতা পোর্টের কাজ হচ্ছে সেন্ট থমাস স্কুলে। বালিগঞ্জ বিধানসভার কাজ হচ্ছে ডেভিড হেয়ার স্কুলে। বেহালা পূর্ব বিধানসভার কাজ হচ্ছে ব্রতচারী স্কুলে। ঠাকুরপুকুর বিবেকানন্দ কলেজে হচ্ছে বেহালা পশ্চিমের কাজ। দক্ষিণ কলকাতায় তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়ের সঙ্গে শাসকদলের আরও এক জন ডামি প্রার্থী রয়েছেন। বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের জোট প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম ছাড়াও তাদের আরও এক জন নির্দল প্রার্থী রয়েছে। বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরীর সঙ্গে আরও এক জন ডামি প্রার্থী দিয়েছে। কিন্তু মক পোলে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাকি দুই প্রার্থী থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন বিজেপির দেবশ্রী।
কমিশনিং এবং মকপোলে বিধানসভা ভিত্তিক ৩৪-৩৫টি টেবল রয়েছে। সব মিলিয়ে টেবলের সংখ্যা ২০০-র বেশি। শুক্রবার এই কাজের প্রথম দিনেই সব টেবলে এজেন্ট দিতে পারেনি বিজেপি। তৃণমূলের তরফে প্রার্থী মালা এবং ডামি প্রার্থীর জন্য প্রায় ৪০০ জন প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে। বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী ও ডামি প্রার্থীর ক্ষেত্রে ২০০-র বেশি প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বিজেপির ক্ষেত্রে এজেন্টের সংখ্যা মাত্র ৭০-৭৫ জন। শুক্রবারের পর শনিবারও একই চিত্র ধরা পড়েছে। সব টেবলে এজেন্ট না দিতে পারায় নির্বাচনী আধিকারিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন বিজেপি নেতারা। দক্ষিণ কলকাতা লোকসভার সাতটি কেন্দ্র মিলিয়ে মোট বুথের সংখ্যা ২০০০-এর বেশি। তাই এমন সাংগঠনিক ব্যর্থতার পর স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠছে, ভোটের দিন সব বুথে আদৌ এজেন্ট দেওয়া যাবে কি? এমন প্রশ্নের মুখে নিরুত্তর বিজেপির দক্ষিণ কলকাতা জেলা নেতৃত্ব। পাশাপাশি দক্ষিণ কলকাতায় বিজেপির প্রচারে সে ভাবে লোক পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। ভোট এবং গণনার দিন কী ভাবে বিজেপি পরিস্থিতি সামাল দেবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। ভবানীপুর বিধানসভার এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর নামে ভোট হবে। তাই এই বিষয়গুলো নির্বাচনের দিন নজরে আসবে না।’’ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, প্রধানমন্ত্রী নাম নিয়ে কি নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকা সম্ভব?
অন্য দিকে, উত্তর কলকাতায় বিজেপির লড়াই অনেক বেশি সঙ্ঘবদ্ধ। কমিশনিং এবং মকপোলে বিধানসভা ভিত্তিক পর্যাপ্ত পরিমাণে এজেন্ট দিয়েছে তারা। উত্তর কলকাতায় সাতটি কেন্দ্র মিলিয়ে মোট বুথের সংখ্যা ১৯০০-রও বেশি। ভোটের দিন দশেক আগেই সব বুথে এজেন্ট দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উত্তর কলকাতা জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। লড়াইয়ের ক্ষেত্রে তিনি শাসকদল তৃণমূলকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে চান না বলে জানিয়েছেন উত্তর কলকাতার বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়। উত্তর কলকাতার এমন সঙ্ঘবদ্ধ লড়াই দেখে তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে দক্ষিণ কলকাতার বিজেপি। কারণ, তৃণমূলের ‘দুর্গ’ দক্ষিণ কলকাতাতেই যদি ভাল ভাবে লড়াই করা সম্ভব না হয়, তা হলে রাজ্যের মানুষের কাছে ভুল বার্তা যেতে পারে বলেই মনে করছে দক্ষিণ কলকাতা বিজেপির একাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy