Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

নতুন ভারত ঘরের ভিতরে ঢুকে শত্রুদের নিকেশ করে! দাবি করলেন মোদী, উল্টো সুর বিদেশ মন্ত্রকের

প্রধানমন্ত্রী যখন সীমান্ত পেরিয়ে হামলার কথা বলছেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পাকিস্তানের ভিতরে ঢুকে মারার কথা বলছেন, তখন বিদেশ মন্ত্রক কেন এ ধরনের গোপন শত্রু নিকেশ অভিযানকে সরকারি ভাবে মেনে নিচ্ছে না?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:৩৬
Share: Save:

বিহারের জামুইয়ে গত কাল এক সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশে জঙ্গি হামলা হলে প্রয়োজনে পড়শি দেশে ঢুকে জঙ্গি নিকেশের হুমকি দিয়েছিলেন। আজ রাজস্থানের চুরুর এক সভা থেকেও একই হুমকি দিলেন তিনি। লোকসভা নির্বাচনের আগে জাতীয়তাবাদকে উস্কে দিতে মোদী বারবার সীমান্ত পেরিয়ে হামলার কথা বললেও দেশের বিদেশ মন্ত্রক কিন্তু স্পষ্ট বলছে, বিদেশের মাটিতে গোপনে কোনও হামলা কিংবা হত্যাকাণ্ড চালানো মোটেই ভারতের নীতি নয়।

গত দশ বছরের মোদী জমানায় প্রথমে উরি ও পরে পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পরে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছিল ভারত। লোকসভা ভোটের আগে জাতীয়তাবাদকে হাতিয়ার করতে গত কাল বিহার এবং আজ রাজস্থানে সেই সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কথা মনে করিয়ে মোদী বলেন, ‘‘এই সরকার সীমান্তে সেনাকে পাল্টা জবাব দেওয়ার প্রশ্নে সম্পূর্ণ ছাড় দিয়ে রেখেছে। আজ শত্রুরাও জানে, এই ভারত নতুন ভারত, যারা ঘরের ভিতরে ঢুকে শত্রুদের নিকেশ করে।’’ কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহও আজ এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, যদি কোনও জঙ্গি ভারতের শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা করে, তা হলে সরকার উপযুক্ত জবাব দেবে। তাঁর কথায়, “যদি সে (জঙ্গি) পাকিস্তানে পালিয়ে যায়, আমরা তাকে অনুসরণ করব এবং পাকিস্তানের মাটিতে গিয়ে তাকে মারব। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঠিকই বলেছেন, ভারতের যে সেই ক্ষমতা রয়েছে, পাকিস্তানও তা বুঝতে শুরু করেছে।”

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

ভোটারদের মধ্যে জাতীয়তাবাদ উস্কে দিতে শত্রু দেশের সীমানা পেরিয়ে হামলার কথা মোদী-রাজনাথ বললেও দেশের বিদেশ মন্ত্রক এমন দাবি মানতে নারাজ। বরং সরকারি ভাবে এমন দাবি খারিজ করেছে তারা। গত কাল একটি বিদেশি সংবাদপত্রে দাবি করা হয়, ইজরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ ও রাশিয়ার এফএসবি-র মতোই ভারতীয় সংস্থা ‘র’ (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল উইং) পাকিস্তান-সহ অন্য দেশে লুকিয়ে থাকা ভারত-বিরোধী শক্তিকে ধারাবাহিক ভাবে নিকেশ করে চলেছে। ওই সংবাদপত্রটির দাবি, ২০২০ সাল থেকেই প্রতিবেশী দেশের মাটিতে ভারত-বিরোধী জঙ্গিদের গুপ্তহত্যা শুরু হয়েছে। কেবল গত বছরেই ১৫ জন জঙ্গিকে হত্যা করা হয়েছে, যারা ভারতে বিভিন্ন সময়ে নাশকতার সঙ্গে যুক্ত ছিল। মৃতদের অধিকাংশ লস্কর-ই-তইবা কিংবা জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি গোষ্ঠীর মাথা। নিহতদের অনেকেই কাশ্মীরে জঙ্গিদের হ্যান্ডলারের দায়িত্বে ছিলেন। সংবাদপত্রটির দাবি, ওই কাজে পাকিস্তানের তরুণ, স্থানীয় দুষ্কৃতী কিংবা আফগান ইনটেলিজেন্স নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হলেও পিছন থেকে এদের নিয়ন্ত্রণ করেছে ‘র’ বা পরোক্ষে নয়াদিল্লি। যদিও বিদেশি সংবাদপত্রটির ওই দাবি উড়িয়ে বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই রিপোর্টটি সম্পূর্ণ ভুয়ো ও ভারত-বিরোধী প্রচারের অঙ্গ। বিদেশের মাটিতে বেছে বেছে হত্যা করা কখনওই ভারত সরকারের
নীতি নয়।

প্রশ্ন উঠেছে, এক দিকে প্রধানমন্ত্রী যখন সীমান্ত পেরিয়ে হামলার কথা বলছেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পাকিস্তানের ভিতরে ঢুকে মারার কথা বলছেন, তখন বিদেশ মন্ত্রক কেন এ ধরনের গোপন শত্রু নিকেশ অভিযানকে সরকারি ভাবে মেনে নিচ্ছে না? রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, নির্বাচনী প্রচারে ভোট টানতে এ ধরনের রক্ত গরম করা বক্তব্য রাখা যায়। কিন্তু বিদেশনীতির ক্ষেত্রে কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে। তা ছাড়া কোনও একটি সার্বভৌম দেশ অন্য কোনও সার্বভৌম দেশে প্রবেশ করে সে দেশের নাগরিকদের হত্যা করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে তা যুদ্ধের নামান্তর। তাই যতই বিষয়টি ভারতের পক্ষে ইতিবাচক হোক না কেন, আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতায় এ ধরনের গোপন অপারেশনকে কোনও সময়েই স্বীকার করে নেওয়া হয় না। সব দেশই কমবেশি ওই নীতি মেনে চলে। এ ধরনের নিকেশ অভিযানে কোনও দেশের এজেন্ট ধরা পড়লে তাঁদের নাগরিক বলে মেনে নিতেও অস্বীকার করা হয়। নরেন্দ্র মোদীর দ্বিতীয় পর্বে পাকিস্তানে ভারত-বিরোধী একাধিক জঙ্গির ‘রহস্যমৃত্যু’র খবর মিলেছে। খলিস্তানি জঙ্গি নিজ্জরের ‘খুন’ নিয়ে কানাডা সরাসরি ভারতের দিকে আঙুল তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে বিদেশি সংবাদপত্রটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, সিআইএ, মোসাদ বা কেজিবির ধাঁচেই শত্রুরাষ্ট্রের ছত্রছায়ায় থাকা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে ভারতও। মোদী বরাবরই জঙ্গিদের দমনে কড়া বার্তা দিয়ে থাকেন। তাঁর সরকার সেই নীতি অনুসরণ করেই চলছে।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE