E-Paper

প্রচারে প্রণত হাজির প্রতিপক্ষের পৈতৃক বাড়িতে

লালগড়ের রঘুনাথপুর গ্রামের ওই বাড়িতে থাকেন কালীপদর দাদা শ্রীরাম সরেনের পরিবার। প্রতিপক্ষ প্রার্থীর পৈতৃক বাড়িতে প্রণতকে ঢুকতে দেখে অবাক হয়ে যান স্থানীয়রা।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:০৪
তৃণমূল প্রার্থীর ভাইপো মিঠুন সরেনের সঙ্গে কথা বলছেন বিজেপি প্রার্থী প্রণত টুডু। সোমবার লালগড়ের রঘুনাথপুর গ্রামে।

তৃণমূল প্রার্থীর ভাইপো মিঠুন সরেনের সঙ্গে কথা বলছেন বিজেপি প্রার্থী প্রণত টুডু। সোমবার লালগড়ের রঘুনাথপুর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।

সোমবার দুপুর। সূর্য তখন মধ্যগগনে। ঠা-ঠা রোদ মাথায় বাড়ি-বাড়ি জনসংযোগ যাত্রায় হাঁটছেন ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের পদ্মপ্রার্থী প্রণত টুটু। লালগড় ব্লকের বেলাটিকরি অঞ্চলের আদিবাসী অধ্যুষিত রঘুনাথপুর গ্রামের একটি বাড়ির সামনে থমকে দাঁড়ালেন তিনি। তারপর উঠোন পেরিয়ে অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া দাওয়ায় বসে পড়লেন। ওই বাড়িটি তৃণমূল প্রার্থী কালীপদ সরেনের পৈতৃক বাড়ি। কালীপদ অবশ্য বহু বছর ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দা।

লালগড়ের রঘুনাথপুর গ্রামের ওই বাড়িতে থাকেন কালীপদর দাদা শ্রীরাম সরেনের পরিবার। প্রতিপক্ষ প্রার্থীর পৈতৃক বাড়িতে প্রণতকে ঢুকতে দেখে অবাক হয়ে যান স্থানীয়রা। পদ্মপ্রার্থীকে বাড়িতে দেখে কিছুটা অবাক ও অপ্রস্তুত হন কালীপদর ভাইপো মিঠুন সরেনও। মিঠুনকে দেখে করজোড়ে প্রণত বলেন, ‘‘আপনাদের গ্রামে প্রচারে এসেছিলাম। তাই দেখা করতে এলাম।’’ এরপর প্রণত মিঠুনের কাছে জানতে চান তিনি কতদূর পড়াশোনা করেছেন। মিঠুন জানান, মাধ্যমিকের পর আর পড়াশোনা হয়নি। তিনি চাষবাস করেন। এরপরই প্রণত বলেন, ‘‘এলাকায় শিল্প কারখানা থাকলে কাজ করতে পারতেন। এলাকায় তো কল কারখানাই তৈরি হয়নি। আমরা বিজেপি সরকারের থেকে চেষ্টা করব যাতে কলকারখানা হয়। শিল্প হলে কর্মসংস্থানও হবে। মানুষ কাজ পাবেন।’’ মিঠুন এরপর জানান, সরকারি সেচের অভাবে চাষবাসের খুবই সমস্যা হয়। এলাকার রাস্তাঘাটের অবস্থাও খারাপ।

যা শুনে প্রণত বলেন, ‘‘১২ বছর তৃণমূলের সরকার চলছে। অথচ সরকারি সেচের ব্যবস্থা নেই। তাই তো!’’ মৃদু হেসে মিঠুন বলেন, ‘‘হ্যাঁ চলছে।’’ তখন পাশ থেকে বিজেপির ঝাড়গ্রাম বিধানসভার পর্যবেক্ষক রমেশ সরকার বলে ওঠেন, ‘‘আমাদের প্রার্থী (প্রণত) জিতলে সাংসদ তহবিলের টাকায় এই গ্রামে সেচের ব্যবস্থা আর রাস্তা হবে, গ্যারান্টি দিতে পারি।’’ এবার মিঠুন জানান, আগের সাংসদ এসে পরিস্থিতি দেখে গিয়েছিলেন। প্রণত তারপরে আশ্বাস দেন, ‘‘এবার কাজ আমরা করব। অবশ্যই করব।’’

রমেশ যোগ করেন, ‘‘বিদায়ী সাংসদের তহবিলের টাকা কিন্তু নেই। কোথাও না কোথাও খরচ করা হয়েছে। এই এলাকাটি হয়তো নজরে পড়েনি। আমাদের প্রার্থী জিতলে সেচ ও রাস্তা হবে।’’ মিঠুন জানান, তাঁদের অবস্থা আগে খুবই খারাপ ছিল। তাঁর কাকা (কালীপদ) ব্যাঙ্কে চাকরি পাওয়ার পর পাকা বাড়ি হয়েছে। ফের করজোড়ে প্রণত মিঠুনকে বলেন, ‘‘আপনাদের গ্রামে প্রচারে এসে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে গেলাম।’’ মিঠুনও বলেন, ‘‘প্রত্যন্ত গ্রামে আমরা কেমন আছি সেটা দেখতে আসা দরকার!’’

পরে গ্রামের জাহের থানে পুজো দেন প্রণত। এরপর সরু আলপথ ধরে ভাগাবাঁধ গ্রামে পদযাত্রা ও জনসংযোগ করেন। প্রণতের প্রচার সঙ্গী জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রিমঝিম সিং, মহিলা মোর্চার জেলা নেত্রী পুষ্প চেট্যালের দাবি, প্রার্থী প্রতিদিন প্রত্যন্ত এলাকায় প্রচারে যাচ্ছেন। আমরা-ওরার বিভাজন ঘুচিয়ে সবার কাছেই আশীর্বাদ ও সমর্থন চাইছেন। ভাল সাড়াও পাচ্ছেন।

প্রতিপক্ষের বাড়িতে প্রণতের মিনিট পাঁচেকের এই সৌজন্য নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে জেলায়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, এর আড়ালে রয়েছে তৃণমূলকে চাপে ফেলার রাজনীতি। উল্লেখ্য, গোড়া থেকেই প্রণত প্রত্যন্ত এলাকায় প্রচারে যাচ্ছেন। বলা ভাল তৃণমূল প্রার্থী যাওয়ার আগেই নেতাই ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রচার সেরে ফেলেছেন প্রণত। এবার গেলেন প্রার্থীর পৈতৃক গ্রামে।

কালীপদ অবশ্য প্রার্থী হওয়ার পর এখনও পৈতৃক গ্রামে যাননি, এমনই খবর স্থানীয় সূত্রে। কালীপদ নিজে বলছেন, ‘‘ওই এলাকার রাস্তা অনেকটাই হয়ে গিয়েছে। নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় আমার গ্রামের রাস্তার অংশটুকু এখন করা যাচ্ছে না। বিজেপি প্রার্থী স্রেফ নোংরা রাজনীতি আর মিথ্যাচার করতে গিয়েছিলেন। এসব প্রচারের চমক। লাভ কিছু হবে না। আমার পরিবার ও আমার গ্রামবাসী আমার সঙ্গে আছেন। নিজের গ্রামে আমার প্রচারের দরকার নেই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Jhargram BJP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy