Advertisement
E-Paper

প্রথাগত ইস্তাহার নয়, লোকসভা নির্বাচন শুরুর দু’দিন আগে ‘দিদির ১০ শপথ’ ঘোষণা তৃণমূলের

‘দিদির শপথ’-এ ১০টি প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে তৃণমূল। তাতে ১০০ দিনের কাজ থেকে শুরু করে রেশন, সিলিন্ডার, আবাসন এবং সিএএ, এনআরসি, অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মতো আইনের কথাও উঠে এসেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৫৯
(বাঁ দিক থেকে) অমিত মিত্র, ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। বুধবার তৃণমূল ভবনে লোকসভা নির্বাচনের ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে।

(বাঁ দিক থেকে) অমিত মিত্র, ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। বুধবার তৃণমূল ভবনে লোকসভা নির্বাচনের ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।

লোকসভা নির্বাচন শুরু হতে আর দু’দিন বাকি। শুক্রবার প্রথম দফায় দেশের ১০২টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। তার আগে বুধবার নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করল বাংলার শাসকদল তথা কেন্দ্রের বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র অন্যতম শরিক তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র তৃণমূল ভবন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে দলের ১০টি প্রতিশ্রুতি পাঠ করেছেন। তবে একে প্রথাগত ‘ইস্তাহার’ বলতে চাইছে না তৃণমূল। একে বলা হচ্ছে ‘দিদির শপথ’। কেন্দ্রে ‘ইন্ডিয়া’ সরকার গঠন করলে এই প্রতিশ্রুতিগুলি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

তৃণমূলের এই ১০টি প্রতিশ্রুতিতে ১০০ দিনের কাজ থেকে শুরু করে রেশন, সিলিন্ডার, আবাসনের পাশাপাশি সিএএ, এনআরসি, অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মতো আইনের কথাও উঠে এসেছে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই যেন কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের একাধিক প্রকল্প এবং প্রতিশ্রুতির বিকল্প ঘোষণা করেছে তৃণমূল। উল্লেখ্য, এ বার লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বিজেপির তরফে বার বার উঠে এসেছে ‘মোদীর গ্যারান্টি’র প্রসঙ্গ। মোদী নিজেও বাংলায় এসে এই দুই শব্দবন্ধে জোর দিয়েছেন। জানিয়েছেন, তিনি ভোটের আগে যে গ্যারান্টিগুলি দিচ্ছেন, নিশ্চিত ভাবেই ভোটের পর তা পালন করা হবে। বিজেপির সেই ‘মোদীর গ্যারান্টি’র বিকল্প হিসাবেই ইস্তাহারে ‘দিদির শপথ’ পাঠ করল তৃণমূল। প্রধানমন্ত্রীর আবাস যোজনার বিকল্প হিসাবে সেখানে রয়েছে গরিবদের পাকা বাড়ি গড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। ‘লাখপতি দিদি’র বিকল্প হিসাবে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর ধাঁচে মহিলাদের মাসিক আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছে তৃণমূল। রয়েছে ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর বিকল্প স্বাস্থ্যসাথী বিমা। এ ছাড়া, সিএএ, এনআরসি এবং অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মতো যে সব আইন চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদী, তা সম্পূর্ণ বিলোপ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মমতা।

তৃণমূলের ইস্তাহারে বলা হয়েছে—

  • দেশের সমস্ত জব কার্ড হোল্ডারকে ১০০ দিনের কাজের গ্যারান্টি দেওয়া হবে। দেশ জুড়ে সব শ্রমিক দৈনিক ৪০০ টাকা বর্ধিত ন্যূনতম মজুরি পাবেন।
  • সমস্ত দরিদ্র পরিবারের জন্য আবাসন নিশ্চিত করা হবে। নিরাপদ, পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে সব পরিবারকে।
  • দেশের প্রত্যেক বিপিএল পরিবার বছরে ১০টি করে সিলিন্ডার বিনামূল্যে পাবেন। পরিবেশবান্ধব রন্ধনের প্রক্রিয়া ব্যবহারের অভ্যাস বৃদ্ধি করা হবে এর মাধ্যমে।
  • প্রতি মাসে দেশের প্রত্যেক রেশন গ্রাহককে পাঁচ কেজি রেশন বিনামূল্যে দেওয়া হবে। বিনামূল্যে রেশনের খাদ্যসামগ্রী মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে।
  • প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যুবকদের উন্নতির স্বার্থে তফসিলি জাতি, জনজাতি প্রভৃতি অনগ্রসর জাতির উচ্চশিক্ষার বৃত্তি বাড়ানো হবে। ৬০ বছরের বেশি বয়স্কদের বার্ধক্যভাতার পরিমাণও বৃদ্ধি করা হবে। তাঁরা মাসে ১০০০ টাকা করে বার্ষিক ১২ হাজার টাকা পাবেন।
  • স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুসারে দেশের সমস্ত কৃষককে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রদানের আইনগত গ্যারান্টি দেওয়া হবে। যা সমস্ত ফসলের উৎপাদনের গড় খরচের চেয়ে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বেশি ধার্য করা হবে।
  • পেট্রল, ডিজ়েল এবং এলপিজি সিলিন্ডারের দাম সাশ্রয়ী মূল্যে সীমাবদ্ধ করা হবে। এগুলির দামের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণের জন্য মূল্য স্থিতিশীলতা তহবিল (প্রাইস স্টেবিলাইজেশন ফান্ড) তৈরি করা হবে।
  • ২৫ বছর পর্যন্ত দেশের সকল স্নাতক এবং ডিপ্লোমা অর্জনকারীর দক্ষতা বাড়াতে এক বছরের শিক্ষানবিশ প্রতিশিক্ষণ প্রদান করা হবে। শিক্ষানবিশদের অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য মাসিক বৃত্তি দেওয়া হবে। এ ছাড়া, উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারীরা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা পাবেন।
  • সিএএ বিলুপ্ত করা হবে। এনআরসি বন্ধ করা হবে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কোথাও প্রয়োগ করা হবে না।
  • বাংলার কন্যাশ্রী প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সি মেয়েদের শিক্ষার জন্য বার্ষিক এক হাজার টাকা এবং এককালীন ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। সমস্ত মহিলাকে মাসিক আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। কেন্দ্রের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের বদলে উন্নততর স্বাস্থ্যসাথী বিমা চালু করা হবে। যার ফলে ১০ লক্ষ টাকার বিমার সুবিধা পাওয়া যাবে।

সাংবাদিক বৈঠকে অমিত ছাড়াও ছিলেন ডেরেক ও’ব্রায়েন, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যেরা। চন্দ্রিমা জানান, তাঁদের ইস্তাহার প্রায় ১০০ পাতা দীর্ঘ। ‘দিদির শপথ’গুলিকে সেখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ১০টি শপথের পাশাপাশি রাখা হয়েছে ১৫টি অধ্যায়। কেন্দ্রে ‘ইন্ডিয়া’ ক্ষমতায় এলে এই প্রতিশ্রুতি পালনে দেশের মানুষের কাছে তৃণমূল দায়বদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন চন্দ্রিমা।

Lok Sabha Election 2024 TMC Election Manifesto
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy