ছোটবেলায় ভোটের যে জিনিসটা নিয়ে আমার সবচেয়ে বেশি কৌতূহল ছিল সেটা হল ভোটের কালি। শুধু ভাবতাম, ওটা এমন কী দিয়ে তৈরি যেটা লাগালে ওঠে না! নখ বেড়ে গেলে দেখতেও বেশ খারাপ লাগে। আমি নিজে যখন ভোট দিতে শুরু করলাম, তখনও দেখেছি হালকা রঙের নেলপলিশ লাগালে বাজে ভাবে নখে ওই কালির দাগটা দেখা যায়। পরে অবশ্য বুঝেছি ব্যাপারটা অত কঠিনও নয়। কখনও কখনও ওই কালিটা তোলা এতই সহজ যে, একদন লোক ১০ বার দাগ তুলে ১০ বার ভোট দিতে পারে। সত্য সেলুকাস কী বিচিত্র এই দেশ!
দেখতে দেখতে আরও একটা ভোট চলে এল। যদি ফ্ল্যাশব্যাকে যাই, গত পাঁচ বছরে পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক হিসেবে আমার কোনও ব্যক্তিগত ক্ষতি হয়নি। মানে আমার ল্যাজে কারও পা পড়েনি এটা ঠিক। কিন্তু চারপাশে যা দেখছি, তাতে বেশ ভয় লাগছে। সবাই এত চুপ কেন? এত কিছু ঘটে যাচ্ছে, তবু সবাই এত চুপ কেন?
ধরুন শিলাদিত্য চৌধুরী। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। চাষবাস নিয়ে দিব্যি ছিলেন। দুম করে একদিন একটা প্রশ্ন করে ফেঁসে গেলেন। আমার কথা হল, আমি ভুল করে তাঁকে মাওবাদী ভেবে নিতেই পারি, কিন্তু যখন সত্যিটা জানলাম সেটা স্বীকার করে নেব না? এইটুকু সততা তো মানুষ আশা করতেই পারেন। ইদানিং এটা খুব দেখছি। একটা কথা ভুল বলে সেটাকেই ঠিক প্রমাণ করার আমরণ চেষ্টা!
ওদিকে অম্বিকেশ বাবু তো আবার ভোটেই দাঁড়িয়ে পড়লেন। তাঁর গল্পটাও অনেকটা একই রকম। তবে গল্পের শেষটা ১৯ মে জানা যাবে। কবি বেঁচে থাকলে আজকের দিনে লিখতেন, ভোটের আমি ভোটের তুমি, ভোট দিয়ে যায় চেনা! আর বাংলার বাজারে ভোটের হাল দেখে বাংলার বাইরের বন্ধুরা আজকাল বেশ টিটকিরি দেয়। রীতিমতো ঠাট্টা করে। স্পোর্টিংলি নিই বটে, তবে ভেতরে ভেতরে মাথাটা নিচু হয়ে যায় বৈকি! এটা অনস্বীকার্য।
হবে নাই বা কেন? যদি আমাদের ইন্ডাস্ট্রির কথাই ভাবি, অনেকেই তো এই সরকারের আমলে পলিটিক্স জয়েন করলেন। অনেক সরকারি পদও পেলেন। কিন্তু যখন দেখি, এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমার কোনও সিনিয়র হাতে মাইক নিয়ে জনসভায় বলছেন, আমাকে বিনা পয়সায় সামনে থেকে দেখতে পাচ্ছেন, তাই ভোট দিন। পয়সা চাইছি না, ভোট চাইছি। অথবা কেউ বাড়িতে ছেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন তখন আবার সেলুকাসের কথাই মনে পড়ে যায়!
রাজনীতিতে আসার অফার আমার কাছেও টুকটাক এসেছে। তবে আমি সে সব মোটে পাত্তা দিইনি। হ্যাঁ রাজনীতি আমার ভালই লাগে। কিন্তু আমি এত বেশি নিজের মতে চলি, যে দলের নিয়ম মানাটা বোধহয় কনটিনিউ করতে পারব না। তাই আমার সক্রিয় রাজনীতিতে না যাওয়াই ভাল।
এ বছর তো আবার ভোটের নাটকে নতুন সিন-জোটের নাটক। ছোট থেকে যাদের দুই যুযুধান পক্ষ বলে জেনে এলাম, তারা যদি ওয়ান ফাইন মর্নিং হঠাত্ বন্ধু হয়ে যান তখন কবীর সুমনের কথা মনে পড়ে— ‘কাছেই কারুও একখানা হাত ধরো, পাশেই কাউকে তোমার বন্ধু করো।’ না না, তৃণমূল কংগ্রেসের কবীর সুমন নন, আমাদের কবীর সুমনের কথা বলছি।
তবে এত হত-আশার মধ্যে আশার কথা একটাই। কলেজ ক্যাম্পাস আবার রাজনীতিতে ফিরেছে। যমুনার তীরে কানহাইয়ার বাঁশি আবার বাজছে। চারিদিকে ‘কলরব’ আরও বেশি বেশি হচ্ছে। তবে আমআদমির চাহিদার বিশেষ কোনও ফারাক ঘটেনি গত পাঁচ থেকে ৫০ বছরে। সিনেমা মানে তাঁদের কাছে এন্টারটেনমেন্ট, এন্টারটেনমেন্ট অ্যান্ড এন্টারটেনমেন্ট। আর নেতার কাছে চাওয়ার জিনিস, রোটি, কাপড়া অউর মকান…আজও। দি এন্ড।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy