Advertisement
E-Paper

টাঙনের উপর বাঁশের সাঁকোই যেন ভবিতব্য

ব্লক সদর থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে। পিচের ভাঙাচোরা রাস্তা ধরে ২০ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ। এই সামান্য পথই যেন বিস্তর ফারাক গড়ে দিয়েছে।

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:৪৩

ব্লক সদর থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে। পিচের ভাঙাচোরা রাস্তা ধরে ২০ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ। এই সামান্য পথই যেন বিস্তর ফারাক গড়ে দিয়েছে। পুরাতন মালদহের মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের শিবগঞ্জ, বিধাননগর, সিন্ধিয়া, উত্তর লক্ষ্মীপুর, দক্ষিণ লক্ষ্মীপুর ও চর লক্ষ্মীপুর। এই ছয়টি গ্রামকে পৃথক করে দিয়েছে টাঙন নদী। গ্রামগুলির মানুষের যাতায়াতের জন্য ভরসা বলতে সরু দু’টি বাঁশ। গ্রামে একে সাঁকো বলেন সাধারণ মানুষ। এই সরু বাঁশের উপর দিয়ে যাতায়াত করছেন আট থেকে আশি, সব বয়সের মানুষ।

ছবি তুলতেই ওপার থেকে একাধিক প্রশ্ন। প্রবীণ বাসিন্দা হারাধন মণ্ডল বলেন, ‘‘আর ছবি তুলে কী হবে?’’ আবার মাঝবয়সী রাজীব সরকার বলেন, ‘‘ভোটের জন্য ছবি তুলে আমাদেরকে টোপ দিচ্ছেন নাকি। এখানে আর বাঁশের সাঁকো থাকবে না। পাকা সেতু করে দিবেন আমাদেরকে।’’ কোনও রকমে মানুষকে বোঝানো হয়, আমি এক জন সাংবাদিক। আপনাদের সমস্যার কথা তুলে ধরতে এসেছি। এখন তো ভোট। রাজনৈতিক দলের নেতারা নিশ্চয় গ্রামে প্রচারে আসছেন। সেতু নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন আপনাদের। এই প্রশ্নের উত্তরে প্রবীণ বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ সরকার, সুপর্ণা শর্মারা বলেন, এই গ্রামে জনসভা করে বরকতদা বলে গিয়েছিলেন, পাকা সেতু গড়ে দিতে পারলেই গ্রামে পা রাখবেন। প্রতিশ্রুতির পর কেটে গিয়েছে দুই দশকেরও বেশি। প্রয়াত হয়েছেন গণিখান চৌধুরীও। তবে আমাদের ছ’টি গ্রামের বাসিন্দাদের কপালে আজও জুটল না পাকা সেতু। ফলে বছরের পর বছর ধরে নড়বড়ে বাঁশের মাঁচার কিংবা বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে আমাদেরকে।

মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্য দিয়ে টাঙ্গন নদী প্রবাহিত হওয়ায় এই পঞ্চায়েতের ছ’টি গ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এই গ্রামগুলিতে কয়েক হাজারেরও বেশি জনসংখ্যা রয়েছে। তাঁদের যাতায়াতের জন্য একমাত্র মাধ্যম হল নদীপথই। শুখা মরসুমে টাঙন নদীতে জল তেমন না থাকায় বাসিন্দারা বাঁশের মাঁচা ও দু’টি বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে যাতায়াত করেন। আর বর্ষাকালে নদী ফুলেফেঁপে উঠলে বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য নৌকার উপরে নির্ভর করতে হয়। এই ছ’টি গ্রামে দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এই দুই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের এই ভাবে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়।

এই গ্রামগুলির বাসিন্দাদের নদী পার হয়ে যেতে হয় হবিবপুর ব্লকের বুলবুলচণ্ডীতে। বুলবুলচণ্ডী থেকেই ওই ছয়টি গ্রামের হাজার হাজার বাসিন্দাকে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়। দিনের বেলা যাতায়াতে তেমন সমস্য না হলেও রাতের দিকে গ্রামবাসীদের সমস্য চরম আকার ধারণ করে। কারণ, নদীঘাটে কোনও আলোর ব্যবস্থা না থাকায় অন্ধকারেই নদী পারাপার করতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয় গ্রামবাসীদের। বিশেষ করে অসুস্থ রোগীদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয় পরিবারের লোকেদের। প্রসূতি মহিলাদের নিয়েও পরিবারের লোকেদের বিপাকে পড়তে হয়।

এক কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে বুলবুলচণ্ডী গ্রামীণ হাসপাতাল। সামান্য এই পথ অতিক্রম করতেই নাজেহাল হতে হয় গ্রামবাসীদের। অনেক সময় মুমূর্ষু রোগীরা এই ভাবে যাতায়াত করতে না পারায় রাতভর রোগীকে ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতেই রেখে দেন আত্মীয়স্বজনরা। অনেক সময় প্রাণহানিও ঘটে। তবুও ওই ছ’টি গ্রামের বাসিন্দাদের কপালে আজও জুটল না পাকা সেতু। ফের আর একটা নির্বাচন এসে গিয়েছে। বিধানসভা ভোট আসতেই এলাকায় যাতায়াত শুরু হয়েছে নেতানেত্রীদের। সেতু না হওয়ার জন্য এলাকার মানুষ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়ে রয়েছেন। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যাগুলি থাকলেও পতাকা, ফেস্টুনে ছেয়ে গিয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। মাটির বাড়ি হোক কিংবা মাটির দেওয়াল। গ্রামগুলিতে ঘুরলে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে দেওয়াল লিখন। এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন বিদায়ী বিধায়ক ভূপেন্দ্রনাথ হালদার। এ ছাড়া তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন দুলাল সরকার এবং বিজেপির দশ বারের পঞ্চায়েত সমিতির পদে থাকা গোপাল সাহা।

গ্রামবাসীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, ১৯৮৬ সালে গ্রামে সভা করতে গিয়েছিলেন সাংসদ গণিখান চৌধুরী। সেই সময় গ্রামবাসীদের তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, টাঙন নদীর উপর অবশ্যই পাকা সেতু হবে। আর পাকা সেতু গড়ে দিতে না পারলে গ্রামে কোনও দিন পা রাখবেন না। যেমন পাকা সেতু হয়নি, তেমনই কথামতো গ্রামেও পা রাখেননি গণিখান চৌধুরী। তবে উৎপল সরকার, গৌতম সরকার প্রমুখ বলেন, ডুমুরের ফুলগুলো গ্রামে আসতে শুরু করে দিয়েছে। গ্রামে গ্রামে সভা করে বলছে এ বার সেতুর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা জানি, এ বারও আমাদেরকে তাঁরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কারণ এ বার অধিকাংশ প্রার্থীর কাছেই অজানা নেই আমাদের সমস্যার কথা। তবে, আমরা আদৌ পাকা সেতু পাব কি না তা ভগবানই জানেন।

assembly election 2016 Avijit Saha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy