Advertisement
E-Paper

বিজেপির ভোটই ফারাক গড়েছে

লাভ হল না। কিন্তু অঙ্কের হিসেবে দেখলে ক্ষতিও হল না তৃণমূলের। গত বার তারা পেয়েছিল ১৩টি আসন। পরে শান্তিপুরে কংগ্রেসের অজয় দে দল বদল করায় ঝুলিতে আসে আরও একটি আসন।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস ও সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০১:৪৫

লাভ হল না। কিন্তু অঙ্কের হিসেবে দেখলে ক্ষতিও হল না তৃণমূলের।

গত বার তারা পেয়েছিল ১৩টি আসন। পরে শান্তিপুরে কংগ্রেসের অজয় দে দল বদল করায় ঝুলিতে আসে আরও একটি আসন।

সেই অজয়বাবু এ বার পরাজিত। কিন্তু তৃণমূল পেয়েছে সাকুল্যে সেই ১৩টি আসনই।

সিপিএম গত বার এক লপ্তে করিমপুর, তেহট্ট, পলাশিপাড়া জিতেছিল। এ বার এক দিকে মহুয়া মিত্র নামক বহিরাগত ঝড়, অন্য দিকে গৌরী দত্ত-তাপস সাহা আপৎকালীন গাঁটছড়ার কল্যাণে ওই তিন আসনই ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল।

কিন্তু অন্য দিকে চারটে আসন তাদের হাতছাড়া হয়েছে। তার মধ্যে তিনটি— কালীগঞ্জ, রানাঘাট উত্তর পশ্চিম এবং শান্তিপুর জিতে নিয়েছে কংগ্রেস। রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্র জিতে নিয়েছে জোট-শরিক সিপিএম।

ফলে, এ কূল ও কূল সমান।

জোট করতে গিয়ে তিন আসন থেকে একটি আসনে নেমে এসেছে সিপিএম। গোটা রাজ্যে যা হয়েছে, নদিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়।

চওড়া হাসি হাসছে এক মাত্র কংগ্রেস। অজয় দে কুলত্যাগ করার পরে শূন্যে নেমে এসেছিল তারা। সেখান থেকে এক লাফে তিন। তা-ও আবার অজয়বাবুকে হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে।

কী ভাবে এমন সাফল্য পেল কংগ্রেস?

প্রথমেই বলতে বাণপ্রস্থ থেকে ফিরে আসা শঙ্কর সিংহের কথা, যিনি শুধু নিজেই জিতেছেন তা নয়, গোটা জোট শিবিরকেই উজ্জীবিত করেছেন। অনেকেই মনে করেছিলেন, দ্বিতীয় ইনিংসে জিততে পারবেন না শঙ্কর। কিন্তু এক দিকে পুরনো জনপ্রিয়তা, অন্য দিকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, দুই মিলে তাঁকে আটকানো যায়নি।

শান্তিপুরে রাজ্য যুব কংগ্রেস সভাপতি অরিন্দম ভট্টাচার্য সাফল্যে পেয়ে গিয়েছেন স্রেফ অজয় দে-র জার্সি পাল্টানোর জেরেই। সেখানকার পুরনো কংগ্রেস ভোটারেরা নেতার চেয়ে দলের প্রতিই আনুগত্য বজায় রেখেছেন। ফলে কংগ্রেস জিতেছে।

কালীগঞ্জে কংগ্রেসের জয়ের অন্যতম বড় কারণ তাদের প্রার্থী হাসানুজ্জামান শেখের জন্য বাম নেতা-কর্মীদের জান লড়িয়ে দেওয়া। প্রায় কান ঘেঁষে নাসিরুদ্দিন আহমেদ যে হেরেছেন, তার একটা কারণ ওই এলাকায় তৃণমূলের সংগঠন তলায় তলায় ক্ষয়ে যাওয়া।

তৃণমূলের এ বার মানসম্মানের লড়াই ছিল জেলা সভাপতি গৌরী দত্তকে তেহট্ট থেকে জিতিয়ে আনা। গত বার তেহট্টের তৃণমূল নেতা তাপস সাহা বেঁকে বসায় এই কেন্দ্রে তাঁকে হারতে হয়েছিল। তৃণমূল নেত্রী তাপসকে কালীঘাটে ডেকে সমঝে দেন। তাঁকে পাশের পলাশিপাড়া আসনে টিকিটও দেন। সেই সঙ্গে বলে দিয়েছিলেন, করিমপুর তেহট্ট ও পলাশিপাড়া এই তিনটি কেন্দ্রই তাপসকে জিতিয়ে আনতে হবে। তাপস সেই ‘অসাধ্যসাধন’ করে দেখিয়েছেন। নিজে শক্ত আসনে তুলনামূলক কম ব্যবধানে জিতলেও বাকি দু’জন জিতেছেন হইহই করে।

চাপড়ায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অনেক দিন ধরেই তৃণমূলের মাথাব্যথার অন্যতম কারণ ছিল। দীর্ঘ দিন ধরে ‘বহিরাগত’ রুকবানুর রহমানের বিরোধিতা করে এসেছেন তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী। ভোটের দিনও তাঁরা বাড়িতে বসেছিলেন। তা সত্ত্বেও রুকবানুর জিতেছেন। ‘দিদি’ যে তাঁর উপরে ভরসা রেখেছিলেন, কার্যত তার মান রেখেছেন রুকবানুর।

কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র্রে তৃণমূলের প্রার্থী, বিদায়ী বিধায়ক অবনীমোহন জোয়ারদার আদৌ জিততে পারবেন কি না, তা নিয়ে বহু মহলেই সন্দেহ ছিল। কিন্তু সারা দিন দড়ি টানাটানির পরে কান ঘেঁষে তিনি বেরিয়ে গিয়েছেন। জেলাসদরে শাসক দলের নাম টিঁকিয়ে রেখেছেন। সেই সঙ্গে কংগ্রেসের জেলা সভাপতিকে হারিয়ে খানিক স্বস্তিও দিয়েছেন দলকে।

কিন্তু সিপিএমের ফল এত খারাপ হল কেন?

তার একটা কারণ জোট শরিকের জন্য জান কবুল করলেও নিজের আসন অক্ষত রাখতে না পারা। কংগ্রেসের পুরো ভোট বামেদের বাক্সে না আসাও একটা বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। আর একটা প্রধান কারণ, বিজেপি-ফেরত ভোটের একটা বড় অংশ তৃণমূলের দিকে চলে যাওয়া, যা অন্য রকম হবে বলে আশা করেছিল জোট শিবির।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-ও বলছেন, ‘‘বিজেপির একটা বড় ভোট শাসকের সঙ্গে গিয়েছে। এ ছাড়া কোথাও কোথাও আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতাও ছিল।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি অসীম সাহাও বিজেপি-ফ্যাক্টরকেই দায়ী করেছেন।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘সারা বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি মানুষ যে আস্থা রেখেছে, নদিয়াও সেই প্রবণতার ব্যতিক্রম নয়।’’

assembly election 2016 TMC BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy