হাসপাতালে চিকিৎধীন আহত সিপিএম কর্মী। —নিজস্ব চিত্র।
ফল ঘোষণা হতে বাকি আরও চবিবশ ঘণ্টা। কিন্তু সোমবার বুথ ফেরত সমীক্ষায় তৃণমূলের এগিয়ে থাকার খবর প্রকাশ হতেই রাত থেকে তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে আরামবাগ শহর-সহ মহকুমার বেশ কিছু ব্লক। পুরশুড়া, গোঘাট, আরামবাগ এবং খানাকুলের বেশ কিছু গ্রামে এবং বাজার সংলগ্ন এলাকায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে বোমাবাজি, হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে সিপিএম।
সোমবার রাতে আরামবাগের মাধবপুর পঞ্চায়েতের অজয়পুরে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে দু’পক্ষের ৮ জন জখম হন। তাঁদের আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। দু’পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। মঙ্গলবার দুপুরেও আরামবাগেরই মলয়পুর বাজারে ৫ জন সিপিএম কর্মীকে লাঠি এবং বাঁশ দিয়ে পেটানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আহতদের আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খানাকুলের বালিপুর বাজারে দীর্ঘদিন ধরে তালাবন্ধ থাকা সিপিএমের কার্যালয়টি পুলিশের হস্তক্ষেপে ভোটের আগে খুলেছিল। অভিযোগ, সোমবার রাতে কার্যালয় ঘেরাও করে সামনে বোমা ফাটিয়ে সেখান থেকে সিপিএমের লোকজনদের চলে যাওয়ার হুমকি দেয় তৃণমূলের শ’খানেক কর্মী-সমর্থক। ঘটনাস্থলের কাছেই শেখ ফিরোজ হোসেন নামে এক সিপিএম সমর্থকের দোকানেও ভাঙচুর-সহ বেশ কিছু সিপিএম সমর্থকের দোকান বন্ধ রাখার ফতোয়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
সিপিএমের আরামবাগ জোনাল নেতা তথা জেলা সম্পাদকমণ্ডলী সদস্য মোজাম্মেল হোসেন বলেন, “বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল দেখেই লাগামছাড়া সন্ত্রাস শুরু করেছে তৃণমূল। আমাদের দাবি প্রশাসন অবিলম্বে এই সব বিশৃঙ্খলা কঠোরভাবে দমন করুক।” আরামবাগ তৃণমূল ব্লক সভাপতি তথা পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী বলেন, “সর্বত্র সিপিএমই এলাকা উত্তপ্ত করতে প্ররোচিত করছে। আমাদের দলের কর্মীরা সংযতই আছে।’’ মহকুমা জুড়ে যে কোনওরকম গোলমাল থামাতে প্রশাসন যে কড়া পদক্ষেপ করবে তা জানিয়ে মহকুমা শাসক প্রতুলকুমার বসু বলেন, “সোমবার বিকালেই গ্রাম এবং পাড়াস্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার আবেদন জানিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক করেছি। তার পরেও কোনও বিশৃঙ্খলা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
খানাকুলের ঘোষপুর, বন্দিপুর, পুরশুড়ার ন্যাওটা, সোদপুর, ভাঙামোড়া, গোঘাটের উল্লাসপুর, কামারপুকুর চটি, রঘুবাটি, আরামবাগের নৈসরাই, পুইন, বাতানল ইত্যাদি গ্রামে হুমকি এবং চড়-চাপড় চলছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। সব ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত তৃণমূল। এখনও ভোট গণনা হয়নি। শুধু সমীক্ষার ফল প্রকাশেই যদি এমন গোলমাল শুরু হয়, তা হলে ফল প্রকাশের পর কী হবে তা ভেবেই আতঙ্কিত মহকুমাবাসী। আর তাই ৬৩টি পঞ্চায়েত এলাকার গ্রামবাসীরা তাঁদের এলাকায় পুলিশ ক্যাম্পের দাবি জানিয়েছেন। চাইছেন আধা সামরিক বাহিনীর টহলদারি। মহকুমা শাসক বলেন, ‘‘এ বিষয়ে কেউ লিখিত জানালে আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
মঙ্গলবার সকাল থেকে খানাকুলের বালিপুর, রাজহাটি, খানাকুল, পুরশুড়ার খুশিগঞ্জ, সোদপুর, চিলাডাঙ্গী, গোঘাটের বদনগঞ্জ, গোঘাট, বালি দেওয়ানগঞ্জ, কিংবা আরামবাগের মলয়পুর, তিরোল, হরিণখোলা ইত্যাদি প্রাচীন বাজারগুলি সুনসান। ওই সব বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা দেখছেন রাজনৈতিক উন্মাদনার প্রথম কোপ পড়ে স্থানীয় বাজার-হাটে। সমিতিগুলির দাবি প্রশাসন বাজারগুলিতে পুলিশ ক্যাম্পের ব্যবস্থা করুক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy