Advertisement
০২ মে ২০২৪

মদনের ভোটেও সিউড়ির আশিস

‘গুড়-জল’ তেমন কাজে আসেনি। এ বার ‘গ্লুকোজ-জল’ দিতে বীরভূমের সিউড়ি থেকে কামারহাটিতে হাজির হলেন তৃণমূলের এক নেতা! সোমবার সকাল থেকেই কামারহাটির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে মিলন তীর্থ স্পোর্টিং ক্লাবের সামনে ভোটারদের জন্য গ্লুকোজ-জল খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।

কামারহাটিতে তৃণমূলের ক্যাম্পে আশিস দে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়। (ইনসেটে) নার্সিংহোমের সেই সিসিটিভি ফুটেজ। —ফাইল চিত্র

কামারহাটিতে তৃণমূলের ক্যাম্পে আশিস দে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়। (ইনসেটে) নার্সিংহোমের সেই সিসিটিভি ফুটেজ। —ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০২:২২
Share: Save:

‘গুড়-জল’ তেমন কাজে আসেনি। এ বার ‘গ্লুকোজ-জল’ দিতে বীরভূমের সিউড়ি থেকে কামারহাটিতে হাজির হলেন তৃণমূলের এক নেতা!

সোমবার সকাল থেকেই কামারহাটির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে মিলন তীর্থ স্পোর্টিং ক্লাবের সামনে ভোটারদের জন্য গ্লুকোজ-জল খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। আর সেখানেই ভোটারদের হাতে জলের গ্লাস তুলে দিতে দেখা গেল বীরভূমের বিতর্কিত তৃণমূল নেতা আশিস দে-কে। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, ভোটের দিন বহিরাগত আশিসবাবুর সেখানে থাকার কথা নয়। তা হলে কী করছেন? আশিস খোলাখুলিই বলছেন, ‘‘মদনদা আমাদের প্রিয় নেতা। উনি জেলে রয়েছেন। তাই ওঁর হয়ে ভোট করতে নেমেছি। কামারহাটির মানুষকে ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল রাখতে গ্লুকোজ খাওয়াচ্ছি।’’ বহিরাগত আশিসকে নিয়ে বিরোধীরা শোরগোল শুরু করতেই দুপুরে সেখানে হাজির হয়ে যায় পুলিশের টহলদারি ভ্যান। নেমেই জলের কাউন্টার ঝটপট তুলে দেন তাঁরা। হুঁশিয়ারি দিয়ে যান, কথা না শুনলে গ্রেফতার করা হবে। চটপট এলাকা ফাঁকা করেন আশিসরা।

পেশায় সিউড়ি পুরসভার ক্লার্ক, বীরভূমের এই তৃণমূল নেতা অবশ্য এর আগেও খবরে শিরোনামে এসেছেন। একদা তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ এই নেতার বিরুদ্ধে ২০১২ সালে নভেম্বরে সিউড়ির একটি নার্সিংহোমে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তাঁর সেই দাদাগিরির ছবি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সিসিটিভি-তে ধরাও পড়েছিল। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ এক সঙ্গী-সহ আশিসকে গ্রেফতারও করেছিল। সিউড়ির তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ ঘটনার সমালোচনা করেছিলেন। সাংসদ শতাব্দী রায় অবশ্য দাবি করেছিলেন, আশিসবাবুকে আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল যদিও তখন বলেছিলেন, ‘‘কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকতেই পারে। তা বলে তিনি যদি কোনও অন্যায় করে থাকেন, তার দায় আমার নয়!’’

সেই আশিস কামারহাটিতে কী করে পৌঁছলেন? তৃণমূল সূত্রের খবর, সম্প্রতি কামারহাটিতে তৃণমূল প্রভাবিত পুরকর্মীদের সংগঠনের সম্মেলন ছিল। সেখানে তাঁকে সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক করা হয় বলে আশিসের দাবি। আর তখন থেকেই কামারহাটির তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে ভাব জমে ওঠে বীরভূমের এই নেতার। তারই সূত্রে আশিসের এ দিন কামারহাটি আগমন। যদিও এ দিনও তৃণমূলের সিউড়ি শহর সভাপতি অভিজিৎ মজুমদার দাবি করেছেন, আশিস দলের কেউ নন। জেলা তৃণমূল কার্যালয়েও তাঁর কোনও প্রবেশাধিকার নেই। আর পরিচিতেরা বলছেন, কী ভাবে প্রচারের আলো তাঁর উপরে থাকবে— সব সময় এই চেষ্টায় মশগুল থাকেন ওই তৃণমূল নেতা।

ঘটনা হল, জেলা তৃণমূল যতই তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখুক, যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছেন— সেটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন ওই বিতর্কিত নেতা। গত লোকসভা ভোটের আগে পর্যন্ত তিনি অনুব্রতর নেক নজরে ছিলেন। আবার তার ঠিক পরেই ২০১৪ সালে আশিসকে স্বপনকান্তির শিবিরে যোগ দিতে দেখা যায়। দলের দুই তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় এবং অনুপম হাজরা সিউড়ি জেলাশাসকের কার্যালয়ে যেদিন মনোনয়ন দাখিল করতে যান, সেই শোভাযাত্রায় দেখা গিয়েছিল আশিসকে। শুধু দেখা যাওয়াই নয়, হুডখোলা গাড়িতে দুই প্রার্থীর পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন আশিস। শোভাযাত্রা শুরুর আগের মুহূর্তের দায়দায়িত্ব সামলানোর কাজেও বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। তা নিয়ে চাপা গুঞ্জন উঠলেও স্বপনবাবু সে দিন বলেছিলেন, ‘‘কেউ একটা খারাপ কাজ করলে সারা জীবন তাঁকে নির্বাসনে পাঠাতে হবে, তার কী মানে আছে! কেউ যদি নিজেকে শুধরে নিয়ে মানুষের পাশে থাকে বা তাঁকে শুধরে নেওয়া যায় সেটা আমার রাজনৈতিক জীবনের প্রাপ্তি। এতে খারাপ কিছু নেই।’’ তৃণমূল সামনে যতই তাঁকে দলের কেউ নয় বলে দাবি করুক, লোকসভার পরে গত পুরভোটেও তৃণমূল প্রার্থীদের হয়ে সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছিল আশিসকে। সিউড়ির যে ওয়ার্ডে বাস করেন আশিস, সেই ৬ নম্বর ও পাশের ১৪ নম্বর — এই দু’টি ওয়ার্ডে ভোট করানোয় আশিসের সুনাম রয়েছে। যদিও দু’টি আসনেই গত পুরভোটে জয়ী হন বিরোধী প্রার্থীরা। তার পরেও দুই বিরোধী সদস্যকেই তৃণমূলে যোগ দিতে দেখা গিয়েছিল।

সেই আশিসকেই এ দিন কামারহাটির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নানা বুথে ঘুরে ভোট পরিচালনা ‘করতে’ দেখা গিয়েছে। এ দিন কামারহাটিতে তাঁর উপস্থিতি প্রবল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সিপিএম প্রার্থী মানস মুখোপাধ্যায় তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগও জানিয়েছেন। তাতেও অবশ্য দমবার পাত্র নন আশিস। বললেন, ‘‘দিল্লি থেকে সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, সীতারাম ইয়েচুরিরা যদি বাংলায় আসতে পারেন, তা হলে আমার কামারহাটিতে এসে ভোট করাতে বাধা কোথায়?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 Suri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE