Advertisement
১৯ মে ২০২৪

সেই ভবানী রোড থেকেই ভবানীপুরের যুদ্ধে দীপা

বিয়ের পর এই ভাড়া বাড়িতেই এসে প্রথম উঠেছিলেন। রাজ্য তো বটেই, জাতীয় রাজনীতিতেও তত দিনে পা অনেকটা জমিয়ে ফেলেছেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। বাংলার রাজনীতির ব্যস্ত ঠিকানাগুলোর মধ্যে তত দিনে এই বাড়িটাও একটি। সকাল-বিকেল বহু লোকের আনাগোনা। সেই ভিড়ের মধ্যেই তিনতলার চিলতে ঘরগুলো সাজিয়ে গুছিয়ে নতুন সংসার শুরু হয়েছিল তাঁর!

সিপিএমের দফতরে দীপা দাশমুন্সি। শুক্রবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

সিপিএমের দফতরে দীপা দাশমুন্সি। শুক্রবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

দেবারতি সিংহচৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৬ ০৪:০২
Share: Save:

বিয়ের পর এই ভাড়া বাড়িতেই এসে প্রথম উঠেছিলেন। রাজ্য তো বটেই, জাতীয় রাজনীতিতেও তত দিনে পা অনেকটা জমিয়ে ফেলেছেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। বাংলার রাজনীতির ব্যস্ত ঠিকানাগুলোর মধ্যে তত দিনে এই বাড়িটাও একটি। সকাল-বিকেল বহু লোকের আনাগোনা। সেই ভিড়ের মধ্যেই তিনতলার চিলতে ঘরগুলো সাজিয়ে গুছিয়ে নতুন সংসার শুরু হয়েছিল তাঁর!

৬ এ, রানি ভবানী রোডের বাড়িটা হঠাৎই যেন পুরনো ব্যস্ততা ফিরে পেয়েছে। এবং সেই আগের মতোই তিনতলার ঘরগুলো ফের সাজিয়ে নিতে শুরু করে দিলেন প্রিয়-ঘরণী দীপা দাশমুন্সি। কেননা টালিগঞ্জ থানার অদূরে এই বাড়িটাই যে এখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর ‘ওয়ার রুম’! ভবানীপুর কেন্দ্রে লড়ার জন্য সনিয়া গাঁধীর নির্দেশ পেয়ে শুক্রবার দুপুরে তাই দিল্লি থেকে দীপা সোজা এসেছেন এই বাড়িতে।

ভোট রাজনীতিতে দীপার প্রথম হাতেখড়ি উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরে। সে দিন এই বাড়ির প্রয়োজন বিশেষ ছিল না। এ বার আছে। তাই প্রথম দিন প্রচারে বেরনোর আগে দীপার স্মৃতিপথে বারবার ফিরে আসছিল এই বাড়িতে প্রিয়রঞ্জনের রাজনৈতিক কর্মব্যস্ততার কথা। বলছিলেন, থিয়েটার জগৎ থেকে একটু একটু করে তাঁর রাজনীতির বৃত্তে চলে আসার শুরুও যে এ বাড়িতেই! বলছিলেন বাড়ির সহায়কদের কথাও। ‘‘প্রিয়দার আমল থেকে এ বাড়িতে শেখরদা, নবেন্দুদা আছেন। তাঁরা প্রিয়দার ভোটে যে ভাবে কাজ করতে পারতেন, এ বার বয়সের ভারে তেমন পারবেন না।’’ তবু তাঁদের উপর ভরসা রেখেই ভবানীপুরের অলি-গলিতে যেতে চান দীপা। যেতে চান বাম নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়েই। বিরোধী ভোটকে এককাট্টা হলে মমতা কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে পারেন বলে বিশ্বাস করেন দীপা। তাই এ দিন বিকেলে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর নাম ঘোষণার পরে প্রচারে বেরিয়ে ভবানীপুরে কংগ্রেসের ব্লক অফিসে কিছুক্ষণ কাটিয়ে সটান চলে গেলেন তাঁর প্রতিপক্ষের বাড়ির অদূরে সিপিএম পার্টি অফিসে।

বৃহস্পতিবার সনিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পরে দিল্লির হাসপাতালে গিয়ে প্রিয়কে দেখে এসেছেন দীপা। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হচ্ছেন শুনে অভিনন্দন জানিয়েছে ছেলে প্রিয়দীপ। দিল্লিতে ছেলেকে একলা রেখে আগামী দু’মাস দীপার ঠিকানা এখন কলকাতা। মাঝে অবশ্য উত্তর দিনাজপুরে নিজের গড়ে প্রচারে যেতে হবে। ছেলের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে পাশে না-থাকতে পারার উদ্বেগ চেপে রেখে বললেন, ‘‘এ লড়াই কঠিন লড়াই বুঝেছেন। এ লড়াই জিততেই হবে।’’

সেই লড়াইয়ের প্রথম দিনে কর্মীদের মাঝে গিয়ে দীপা তাই বললেন, ‘‘তৃণমূল রাজ্যটাকে যে অরাজক অবস্থায় নিয়ে গিয়েছে, মানুষ তার থেকে প্রতিকার চায়। প্রতিকার পেতে মানুষের দাবিতে তাই বাম ও কংগ্রেস একজোট হয়েছে।’’ আর সেই প্রসঙ্গে সরাসরি আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রীকেও। বললেন, ‘‘সারদা থেকে নারদা-র পথটা গিয়েছে কালীঘাট হয়ে। না হলে এ রাজ্যের এমন সর্বনাশ কখনওই হতো না।’’ প্রত্যাঘাতে তাঁকে যে ব্যক্তি-আক্রমণের মুখে পড়তে হবে, তা-ও জানেন দীপা। তাঁর কথায়, ‘‘যুক্তি হারিয়ে ফেললে মানুষ ব্যক্তি আক্রমণের পথ নেয়। তৃণমূলের কাছে তো এটাই হাতিয়ার! কিন্তু ব্যক্তিগত আক্রমণ আমার রুচি-শিক্ষার বিরোধী।’’

প্রশ্ন হল, মমতার বিরুদ্ধে দীপাকে কেন বেছে নিলেন সনিয়া? এর কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা কংগ্রেস সূত্রে মেলেনি। দীপা-ঘনিষ্ঠরা বলছেন, তৃণমূল শাসন থেকে বাংলাকে মুক্ত করতে চান বলেই দীপার মতো কট্টর তৃণমূল-বিরোধী কণ্ঠস্বরকে মমতার প্রতিপক্ষ হিসেবে বেছে নিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। দীপা এ দিন বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের পরে ভেবেছিলাম, এ বার বিধানসভা ভোটে প্রচারের দায়িত্বই সামলাব। কিন্তু সনিয়াজির নির্দেশেই চ্যালেঞ্জ নিতে হল।’’ কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় স্তরের নেতাদের মতে, সনিয়ার নির্দেশের অর্থ হলো, তিনি বাংলার ভোটকে এ বার গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। দীপাকে প্রার্থী করে এই মানসিকতার বার্তা রাজ্যের সব আসনে পৌঁছে দিতে চাইলেন তিনি।

আবার অনেকের মতে, প্রিয়বাবুর আগ্রাসী রাজনীতি পছন্দ করতেন সনিয়া। প্রিয়বাবু অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁর ও তাঁর পরিবারের প্রতি তিনি খুবই সহানুভূতিশীল। তবে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনেকে এ-ও মনে করেন, সনিয়ার এমন ধারণাও হয়ে থাকতে পারে যে, মমতার বিরুদ্ধে ওজনদার প্রার্থী না-দিয়ে রাজ্য কংগ্রেস নেতারা তৃণমূলের সঙ্গে আপস করছেন। ঠিক যে ভাবে অতীতে নাফিসা আলির মতো দুর্বল প্রার্থী দিয়ে তাঁর সুবিধা করে দেওয়া হয়েছিল, হতে পারে সেই ধারা এখনও চলছে। তাই সনিয়া নিজে উদ্যোগী হয়ে দীপাকে প্রার্থী হওয়ার নির্দেশ দেন।

তবে কারণ যা-ই হোক, কঠিন চ্যালেঞ্জ এখন দীপার সামনে। আর সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই নতুন করে চনমনে হয়ে উঠে লড়াইয়ে ফিরছে ৬ এ, রানি ভবানী রোড।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE