Advertisement
E-Paper

ভোটের দিন বিকেলে চওড়া হাসি জোটের

বীরভূমের মতো পাহাড় কিংবা সমতলে কেষ্ট-বিষ্টু কেউ নেই। তবুও উত্তরের কঠিন ঠাঁইয়ে দাঁত ফোটানোর কত চেষ্টাই না হল দিনভর। পাহাড়ে যা ‘অন্য ভূতের উপদ্রব’, তাতে দাঁত ফোটানোর জন্য হাঁ করাই হল না। সমতলে সেটা হলেও কোথাও দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম। কোথাও দাঁত ভেঙে গেল।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩৪
ভোট মেটার পরে খোশ মেজাজে অশোক, (ডান দিকে) উদ্বেগ ভাইচুং-এর চোখে মুখে।  ছবি:বিশ্বরূপ বসাক।

ভোট মেটার পরে খোশ মেজাজে অশোক, (ডান দিকে) উদ্বেগ ভাইচুং-এর চোখে মুখে। ছবি:বিশ্বরূপ বসাক।

বীরভূমের মতো পাহাড় কিংবা সমতলে কেষ্ট-বিষ্টু কেউ নেই। তবুও উত্তরের কঠিন ঠাঁইয়ে দাঁত ফোটানোর কত চেষ্টাই না হল দিনভর। পাহাড়ে যা ‘অন্য ভূতের উপদ্রব’, তাতে দাঁত ফোটানোর জন্য হাঁ করাই হল না। সমতলে সেটা হলেও কোথাও দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম। কোথাও দাঁত ভেঙে গেল। কোথাও দাঁতের মালিককে ধরতে বাধ্য করল বিরোধী জোট। বিভিন্ন বুথের কাছে কেন্দ্রীয় বাহিনীকেও দেখা গিয়েছে। তবুও উত্তরবঙ্গের ৪৫ আসনে ভোটের শেষে অন্তত ২০টি আসন মিলবে বলে আশাবাদী তৃণমূল শিবিরের অনেকেই।

যা শুনে জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের বামেরা অনেকেই যেন কংগ্রেসের দিকে চোখ মটকে হাসছেন। কংগ্রেসকর্মীদের অনেকেই বামেদের পিঠে চাপড় মেরে অট্টহাসিতে ভরিয়ে দিচ্ছেন মালদহ থেকে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর ও চা বলয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা। বাম-কংগ্রেস জোটের অনেকের হিসেব অনুযায়ী, ৬ জেলা মিলিয়ে বড় জোর ৫-৭টি আসন হাতছাড়া হতে পারে। উত্তরের বিরোধী জোটের মুখ তথা ‘শিলিগুড়ি মডেল’-এর জনক অশোক ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘উত্তরবঙ্গে কোনও দাদাগিরি, জারিজুরি চলবে না। বোমা-পিস্তল, গুড়-বাতাসার রাজনীতি এখানে আমদানির চেষ্টা করলে কেমন প্রতিরোধ হবে, তা ফের বোঝানো গেল। খুচখাচ চেষ্টা করলেও মানুষ রুখে দিয়েছেন।’’

তা হলে শঙ্কর চক্রবর্তী, বিপ্লব মিত্র, কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী, সাবিত্রী মিত্র, আবু নাসের খান চৌধুরী, অমল আচার্যদের কী হবে? আব্দুল করিম চৌধুরী, হামিদুর রহমান, গৌতম দেব, সৌরভ চক্রবর্তী, জেমস কুজুর কিংবা উইলসন চম্প্রমারির ভবিষ্যৎ কী? তৃণমূল শিবির দাবি করছে, সারা দিনে ‘যে ভাবে ভোট করানো গিয়েছে’ তাতে উত্তরের এই তারকা নেতারা অনেকটাই নিরাপদ। কিন্তু, শিবিরের অন্য গোষ্ঠীর হিসেব অনুযায়ী, কয়েকজন তারকার হারের আশঙ্কা জোরদার হয়েছে। বরং, অনন্তদেব অধিকারী, অনিল অধিকারী, খগেশ্বর রায়ের মতো স্বল্পখ্যাতরাই ‘চুটিয়ে ভোট’ করানোর ফল ঘরে তুলতে পারবেন।

কী ভাবে চুটিয়ে ভোট হয়েছে! দাঁত ফোটানোর চেষ্টাই বা কোথায় কেমন হল, কতটা ব্যর্থ হল দেখে নেওয়া যাক।

রাজগঞ্জ, ময়নাগুড়িতে দুই প্রার্থী খগেশ্বর ও অনন্তদেব ভোর থেকে ছোটাছুটি করেছেন। তাঁদের দলের বিরুদ্ধেই বিস্তর ‘বুথ জ্যাম’ করানোর অভিযোগ উঠেছে। রাজগঞ্জের তালমাহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সিপিএমের এজেন্টকে হুমকি দিয়ে বার করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সিপিএমের পোলিং এজেন্ট রণজিৎ দাস বলেন, ‘‘এই সময়ে ভিতরে কী যে হয়েছে কে জানে! এমন কত জায়গায় না জানি হয়েছে।’’ ওই এলাকার কুকুরজান সহ বিস্তীর্ণ জায়গায় বাইকবাহিনীর হুমকিতে ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ। সিপিএমের কয়েকজন নেতা মানছেন, রাজগঞ্জের বেশ কিছু এলাকায় পিছিয়ে পড়েছেন। ময়নাগুড়ির অন্তত ৩৫টি বুথেও ঠিকঠাক ভোট হয়নি বলে দাবি বামেদেরই।

মালদহের সুজাপুরেও আসাদুল্লা বিশ্বাসকে সামনে রেখে ভোটারদের চমকানো হয়েছে বলে বলে দাবি বিরোধী জোটের। কমিশনের নির্দেশে আসাদুল্লা নজরবন্দি। কিন্তু, বাড়িতে বসে ৫-৬টি ফোন নিয়ে লাগাতার যে হারে নির্দেশ, হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি তাতেই গাড়ির পিছনের সিটে হেলান দিয়ে নিশ্চিন্তে চোখ বুজেছেন লেবুবাবু তথা আবু নাসের খান চৌধুরী। ততটা স্বস্তিতে নন ইংরেজবাজারের কৃষ্ণেন্দুবাবু কিংবা সাবিত্রী দেবী। গোল রয়েছে ঘরের মধ্যেও। ফলে মালদহের বাকি অংশে উদ্বেগের ছায়া রয়েই যাচ্ছে। ঘরের গোলমালের জের যে শেষ পর্যন্ত কাকে কোথায় নিয়ে ফেলবে, তা নিয়ে হিসেব কষা চলছে বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর, কুশমণ্ডিতে।

অভিযোগের বয়ান অনুযায়ী, উত্তর দিনাজপুরে দাঁত ফোটানোর চেষ্টা করতে গিয়ে পালিয়ে পথ পাননি তৃণমূলের একদল নেতা-সমর্থক। সেখানে শিলিগুড়ি মোড় এলাকায় ভোলা দেবশর্মা নামে এক কংগ্রেস সমর্থককে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে রায়গঞ্জের প্রার্থী মোহিত সেনগুপ্ত সদলবলে গিয়ে এমন চেঁচামেচি, অবরোধ করেন যে পুলিশ ঘেমে ওঠে। হামলাকারীরা এলাকা ছেড়ে পালায়। এর পরে মোহিতবাবু প্রায় গোটা শহরে দাপিয়ে বেড়ান। সঙ্গে সিপিএমও। যা শোনার পরে উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের দাবি, ‘‘নির্বাচনের দিন রাজনৈতিক স্বার্থে তৃণমূলপন্থী ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে কংগ্রেস-সিপিএম মিথ্যা অভিযোগ তুলছে। ভোটাররা ইভিএম মেশিনেই এর জবাব দিয়েছেন।’’

কিন্তু, ভোটে জিতছেন বলে দাবি করতে অসুবিধে কোথায়? শাসক দলের নেতাদের সম্পর্কে হাসতে হাসতে এমন কথা বলছেন বাম-কংগ্রেস জোটের অনেকেই। যেমন, কুমারগ্রাম বিধানসভার কোটিপতি প্রার্থী তথা সদ্য অবসর নিয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া জেমস কুজুর বলে বেড়াচ্ছেন, ‘‘যা করার করেছি। সব ঠিক আছে। জেতাটা একশো শতাংশ নিশ্চিন্ত।’’ ওই বিধানসভায় ১৬টি চা বাগানের মধ্যে ১১টিতে কোনও সংগঠনই নেই তৃণমূলের। তার পরেও! জলপাইগুড়ির প্রাক্তন এএসপি মৃদু হেসে বলছেন, ‘‘ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়।’’

আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস নেতা তথা শহরের প্রার্থী বিশ্বরঞ্জন সরকার এ সব ‘তুকতাক’য়ে বিশ্বাসী নন। তিনি বলেন, ‘‘কত ধানে কত চাল তা সকলেই টের পাবেন। আমরা কোথাও খাপ খুলতে দিইনি। দু-একটা জায়গায় দাঁত ফোটানোর চেষ্টা করলেও জনতা রুখে দাঁড়িয়েছে। কুমারগ্রাম শুধু নয়, আলিপুরদুয়ার সদর সহ গোটা জেলায় জোটের বাতাস।’’

জলপাইগুড়ির মতো সিপিএমের ঘাঁটিতে অবশ্য ভোটের দিন খাপ খোলার খুব একটা অবকাশ শাসক দল পায়নি বলে দাবি জোটের। দৃষ্টান্ত হিসেবে তাঁরা বলছেন, ওঁদের কয়েক জনকে বুথের আসেপাশে প্রচারে নামানো হয়েছিল। খবর পেয়ে কমিশনের লোককে জানিয়ে ৩ জনকে হাতেনাতে পাকড়াও করতে হয়েছে পুলিশকে। এমনকী, খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর বিধানসভায় এলাকায় বাইক বাহিনী ঘুরছে খবর পেয়ে জোটের তরফে এমন চাপ দেওয়া হয়েছে পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনী গ্রামে-গ্রামে ঘুরে বেড়াতে বাধ্য হয়েছে। খোদ মন্ত্রী গৌতম দেবকে কেন্দ্রীয় বাহিনী একটি বুথে ঢুকতে বাধা দিয়েছে।

দিনের শেষে উত্তরের ৬ জেলায় তাই জোটের নেতাদের স্বস্তিতে দেখা যাচ্ছে। সিপিএমের সিটুর জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক জিয়াউল আলম বলেন, ‘‘ডুয়ার্স এলাকায় অশান্তি ছড়ানোর মতো সংগঠন ওদের নেই। যেটুকু চেষ্টা ওরা করেছে তা মানুষই প্রতিহত করেছে।’’

assembly election 2016 ashok bhattacharya TMC cpim
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy