Advertisement
E-Paper

গাড়িতে বসে দেখি বাইরে সাদা ধোঁয়া

গাড়ির ভিতর বসে আছি। হঠাৎ কানে লাগল তীব্র আওয়াজ। বাইরে চেয়ে দেখি আকাশা সাদা ধোঁয়া পাকিয়ে উঠেছে। পাশ থেকে এক জন বলল, ফের একটা বোমা ফাটল। ততক্ষণে খবর এসেছে ডোমকলে এক জন খুন হয়ে গিয়েছেন। এক সকাল সকাল খুনোখুনির ঘটনায় ভেতরে ভেতরে তির তির করে কাঁপছি। আতঙ্ক ও আশঙ্কায় ঘনঘন শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বইছে।

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৬ ০২:২৫
গ্রামপঞ্চায়েত দফতরের কর্মী

গ্রামপঞ্চায়েত দফতরের কর্মী

গাড়ির ভিতর বসে আছি। হঠাৎ কানে লাগল তীব্র আওয়াজ। বাইরে চেয়ে দেখি আকাশা সাদা ধোঁয়া পাকিয়ে উঠেছে। পাশ থেকে এক জন বলল, ফের একটা বোমা ফাটল। ততক্ষণে খবর এসেছে ডোমকলে এক জন খুন হয়ে গিয়েছেন। এক সকাল সকাল খুনোখুনির ঘটনায় ভেতরে ভেতরে তির তির করে কাঁপছি। আতঙ্ক ও আশঙ্কায় ঘনঘন শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বইছে।

এ বার ডোমকলের ১১টি বুথের সেক্টর অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলাম আমি। ভোটকর্মীদের ডোমকলের ১৭৫ থেকে ১৮৫ নম্বর মোট ১১টি বুথে পৌঁছে দেওয়া থেকে ভোটকর্মীদের যাবতীয় দেখভালের দায়িত্ব ছিল আমার উপরে। গত ২০ এপ্রিল ভোটের আগের দিন সকালে বহরমপুরের বাড়ি থেকে গাড়িতে চেপে ডোমকল মহকুমা প্রশাসনিক দফতরে যাই। সেখান থেকে ১১টি বুথের ভোটকর্মীদের একটি বাস, একটি লরি এবং একটি ট্রেকারে করে নিয়ে গিয়ে প্রতিটি বুথে নামাতে নামাতে যাই। একই ভাবে ফেরার পথে কোনও সমস্যা রয়েছে কি না জানতে প্রতিটি বুথে ঢুকে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলি। কোনও রকম অসুবিধে নেই জেনে জিতপুর গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ে খোলা সেক্টর অফিস রাত কাটাই। কিন্তু বিছানা করে শুয়ে ঘুমোনোর মতো কোনও পরিস্থিতি ছিল না। কারণ আগে থেকে ওই পঞ্চায়েত কার্যালয় সাফ-সুতরো করার কোনও সময় মেলেনি। ফলে চেয়ারের উপরে পা তুলে অন্য চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমোনোর চেষ্টা করি।

এমনিতেই ক’দিন ধরে খুব ছোটাছুটি করতে হয়েছে। শরীর এতো ক্লান্ত ছিল যে চেয়ারে গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়ি। খানিক পরে ধপাস করে পড়লাম মেঝের উপর! ঘুমের মধ্যে হা-পা ছোড়াছুড়িতে চেয়ার দু’টো কখন সরে গিয়েছিল। যাই হোক, কোমরে ব্যথা নিয়ে কোনও রকমে উঠে পড়ি। তারপর আর ঘুমোয়ইনি। চারটে নাগাদ স্নান সেরে দোকানে গিয়ে চা-বিস্কুট খেলাম। সকাল ছ’টায় মক পোলিং ছিল। তা ঠিক মতো হচ্ছে কি না খতিয়ে দেখতে প্রতিটি বুথে যাই। সঙ্গে ছিল রাজ্য পুলিশের এক কর্মী এবং চার জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান।

প্রথমে যাই বর্তনাবাদ প্রাথমিক স্কুল যেখানে ১৮৪-১৮৫ নম্বর দু’টি বুথ রয়েছে। সেখান থেকে শিরোপাড়া অঞ্চলে ১৭৭-১৭৮ নম্বর বুথে। তত ক্ষণে সেখানে ভোট শুরু হয়ে গিয়েছে। ওই বুথে বেশ কয়েক জন ভোটার এসে অভিযোগ করেন, যে তাঁরা ভোট দিতে আসার সময়ে তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। সে সমস্যা মিটতে না মিটতেই হরিডোবা অঞ্চলের ১৭৫ ও ১৭৬ নম্বর বুথে অশান্তি হচ্ছে বলে খবর পাই। গাড়ি ঘুরিয়ে সেখানে যেতে না যেতেই খবর আসে শিরোপাড়া বুথে এক জন খুন হয়ে গিয়েছেন। রাস্তায় শুনতে পাই বোমার আওয়াজ। মাঠের মধ্যে ধোঁয়া উঠতে দেখি। ভেতরে ভেতরে তির তির করে কাঁপছিলাম। আতঙ্ক ও আশঙ্কা মিলে ঘনঘন শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বইছিল। বুথের কাছে গিয়ে দেখি সেখানে কুইক রেসপন্স টিম আগেই পৌঁছে গিয়েছে। বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ডোমকল থানার আইসি। খবর পেয়ে নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষকও এসে যান। সকলেই চাইছেন শান্তিপূর্ণ ভাবে যাতে দ্রুত ভোটপর্ব মিটিয়ে ফেলতে।

ঠিক তখনই খবর পেলাম মোল্লাপাড়া বুথে ইভিএম বিকল হয়ে যাওয়ার। ফের সেখানে ইভিএম পৌঁছে দেওয়ার জন্য গাড়ি ঘুরিয়ে সেখানে ছুটতে হয়। ইভিএম খারাপ হয়ে যাওয়ায় সেখানে ভোট কিছুক্ষণ বন্ধ ছিল। পরে আমরা গিয়ে নতুন ইভিএম দেওয়ায় সেখানে নতুন করে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সব মিলিয়ে ভোটগ্রহণপর্ব মিটিয়ে ডোমকলে যখন ফিরে আসি তখন রাত ৮টা। ১১টি বুথের সমস্ত কাগজপপত্র বুঝিয়ে বাড়ি ফিরতে রাত ১টা বেজে যায়। সারা দিন খাওয়া হয়নি। সকালে এক কাপ চা এবং তার পরে যেখানে পেরেছি লাল চা খেয়েই কাটিয়েছি।

বাড়িতে যখন ধ্বস্ত শরীরে ফিরলাম তখন খাওয়ার ইচ্ছেটাই চলে গিয়েছে। এক কাছ থেকে এ ভাবে একজনের মরে যাওয়া আগে কোনও দিন অনুভব করিনি। যতবার সেই দৃশ্যের কথা মনে পড়ছিল ততই মন খারাপ ঘিরে ধরছিল।

assembly election 2016 bombs vote
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy