Advertisement
E-Paper

ঘরবন্দি তৃণ আর জোট বাগানের চারা

চকচকে পালিশ করা খাটে এ দিক ও দিক ছড়ানো বই। ইংরাজি নভেল কোনওটা, তো কোনওটা বাংলা।খাটের এক পাশেও ডাঁই করা বই। তার ভিতর থেকে উঁকি মারছে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের মোটা মোটা উপন্যাস।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০৩:১১
ফোনে-বইয়ে অবসর গৌরীর। চারায় জল ঢালছেন রণজিৎ।

ফোনে-বইয়ে অবসর গৌরীর। চারায় জল ঢালছেন রণজিৎ।

চকচকে পালিশ করা খাটে এ দিক ও দিক ছড়ানো বই। ইংরাজি নভেল কোনওটা, তো কোনওটা বাংলা।

খাটের এক পাশেও ডাঁই করা বই। তার ভিতর থেকে উঁকি মারছে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের মোটা মোটা উপন্যাস। খাটে ছড়ানো একাধিক বাংলা কাগজ। দামি সরু ফ্রেমের চশমা চোখে তাতে ডুবে আছেন গৌরীশঙ্কর দত্ত।

ভোটের পরে নিরবচ্ছিন্ন অবসর কাটছে। ভোটের কারণে একটা দীর্ঘ সময় বইপত্তর নিয়ে বসা হয়নি। এখন হয়তো কিছুটা পুষিয়ে নিতে চাইছে‌ন। আর প্রচারে বের হওয়ার তাড়া নেই। একটু বেলা করে ঘুম থেকে ওঠা। চিনি ছাড়া চায়ের সঙ্গে পড়ে ফেলা প্রায় সব ক’টি সংবাদপত্র। টিভিতে খবরের চ্যানেল খুলে ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে দেখে নেওয়া। তার পর নিজের ঘরে ঢুকে বই মুখে বসা।

এ ভাবেই আপাতত দিন কাটছে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা তেহট্টের প্রার্থী গৌরী দত্তের। দলের কর্মীরা এলে নীচে নেমে দেখা করে আসেন। কথা বলেন। তার পর ফের নিজের ঘরে ফেরা। গৌরীবাবু বলছেন, ‘‘আসলে কি জানেন? বেশ কিছু ভাল ভাল বই কিনেছিলাম। কিন্তু ভোটের সময়ে পড়ার সুযোগ পাইনি। এখন সেগুলো পড়ে ফেলছি।’’

সত্যিই কি তাঁর পক্ষে আর কোনও দিকে মন না দিয়ে থাকা সম্ভব? মাঝে-মধ্যেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মীদের ফোন আসে— ‘‘দাদা, ভোটের কি রেজাল্ট হবে?’’ কিংবা ‘‘দাদা, নাকাশিপাড়ায় আমাদের এক কর্মীকে সিপিএমের লোকরা কুপিয়ে খুন করেছে।’’ শীতঘুম থেকে বেরিয়ে সেই সব কথার উত্তর দিতে হয়। প্রয়োজনীয় নির্দেশও।

মাঝে মধ্যে পুরনো বন্ধুরা আসেন। তাঁদের নিয়ে সটান নিজের ঘরে চলে যান। তখন কথা হয় মূলত রাজনীতি সরিয়ে রেখেই। তবে ফোন আসতেই থাকে, তাঁকে উত্তরও দিতে হয়।

সে দিনও কোনও ব্যতিক্রম নেই। কথার মধ্যেই ফোন এল। মন দিয়ে ও প্রান্তের কথা শুনে নিয়ে ঠান্ডা গলায় গৌরী বললেন, ‘‘চিন্তা করিস না। আমি দেখছি।’’ ফোন নামিয়ে রেখে বললেন, ‘‘বিএসএফ কাঁটাতারের এ পারে পাটের জমিতে জল দিতে বাধা দিচ্ছে। দেখি, জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’’ এরই মধ্যে চিনি ছাড়া লিকার চা আসে। পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে গৌরী বলেন, ‘‘এই বইটা দেখুন। ভারতে কেন বামপন্থীরা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে, তার ব্যাখ্যা দেওয়া আছে।’’

তেহট্টের বিদায়ী বিধায়ক তথা সিপিএম প্রার্থী রণজিৎ মণ্ডলের কিন্তু এই অখন্ড অবসর নেই। তিনি নাটনা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। প্রায় দেড় মাস ছুটিতে ছিলেন। ভোটের জন্য স্কুল যাওয়া হয়নি। অনেক কাজ বাকি পড়ে গিয়েছে। ২১ তারিখ ভোট হয়ে যাওয়ার পর মাত্র এক দিন বিশ্রাম নিয়েছেন। ২৩ তারিখ থেকে আবার স্কুল চালু।

স্কুলে এখন বিধায়ক তহবিলের টাকায় রং হচ্ছে। সেটারও তদারকি করতে হচ্ছে রণজিৎকে। বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টে পর্যন্ত স্কুলে কাটে তাঁর। তার পরে ফেরেন নাটনার পৈতৃক বাড়িতে। মা, দাদা আর ভাইরা রয়েছেন। ভাইপো-ভাইঝি, নাতি-নাতনিদের ভিড়। বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করে একটু বিশ্রাম নিয়ে সোজা তেহট্টের দলীয় কার্যালয়ে। তিনি তো আবার এবিটিএ-র জেলা সম্পাদকও বটে। পার্টি অফিস থেকে বিভিন্ন গাঁ-গঞ্জে গিয়ে কর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে রাত সাড়ে ন’টায় ফেরেন বাড়ি। স্নান করে খাওয়া দাওয়া সেরে নিজের ঘরে। রবীন্দ্রনাথ বা শরৎচন্দ্রের উপন্যাস পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়া।

সকালে ঘুম ভাঙে নাতিনাতনিদের দরজা ধাক্কানোর শব্দে। সেই ভিড়ে পাড়ার অন্য বাচ্চারাও থাকে। ‘লজেন্স দাদুর’ হাত থেকে লজেন্স নিয়ে তাদের শান্তি। মাঝে এক দিন কৃষ্ণ‌গরের বাড়িতে এসেছিলেন। দুপুরে স্নান খাওয়া সেরে লেগে পড়লেন গাছের পরিচর্যায়। বললেন, ‘‘আসলে কি জানেন তো, ভোট নিয়ে আর একদম ভাবতে ইচ্ছা করছে না। ও নিয়ে কথা বলতেও ইচ্ছা করছে না। কিন্তু কর্মীরা কি শুনতে চায়?’’

saradindu Bandhapadhay Gauri Dutta assembly election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy