Advertisement
২০ মে ২০২৪

কমিশনের কড়া নজরে সিন্ডিকেট

রাজ্য বিধানসভার ভোটে নির্বাচন কমিশনের নজরে উঠে এল ‘সিন্ডিকেট’। তা রইল দুষ্কৃতী, অপরাধী, বাহুবলীদের সঙ্গে এক পং‌ক্তিতে। শুধু তা-ই নয়, ওই নির্দেশিকায় ‘সিন্ডিকেট’ শব্দটিকে মোটা হরফে চিহ্নিত করে কমিশন বলেছে, নির্বাচনের আগে সমাজবিরোধীদের পাশাপাশি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।

-‘সিন্ডিকেট পোষক’ তৃণমূল প্রার্থী সব্যসাচী দত্তের সমর্থনে হোর্ডিং। শনিবার, নিউ টাউনে। — স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

-‘সিন্ডিকেট পোষক’ তৃণমূল প্রার্থী সব্যসাচী দত্তের সমর্থনে হোর্ডিং। শনিবার, নিউ টাউনে। — স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ও শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৬ ০১:১৫
Share: Save:

রাজ্য বিধানসভার ভোটে নির্বাচন কমিশনের নজরে উঠে এল ‘সিন্ডিকেট’। তা রইল দুষ্কৃতী, অপরাধী, বাহুবলীদের সঙ্গে এক পং‌ক্তিতে। শুধু তা-ই নয়, ওই নির্দেশিকায় ‘সিন্ডিকেট’ শব্দটিকে মোটা হরফে চিহ্নিত করে কমিশন বলেছে, নির্বাচনের আগে সমাজবিরোধীদের পাশাপাশি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।

ভোটের সঙ্গে সিন্ডিকেটের সম্পর্ক ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এনেছেন সিন্ডিকেট সাম্রাজ্যের অন্যতম নিয়ন্ত্রক বলে অভিহিত, রাজারহাট-নিউ টাউনের তৃণমূল প্রার্থী সব্যসাচী দত্ত। ‘টাইমস নাও’ চ্যানেলের স্টিং ভিডিওয় তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘এই ব্যবসায় হাত দিতে গেলে সরকার উল্টে যাবে।’’ এ-ও কবুল করেন, তিনি সিন্ডিকেটের ছেলেদের মদতেই ভোট করেন। তারাই তাঁর হয়ে পোস্টার, ব্যানারের ব্যবস্থা করে। দেওয়াল লিখে দেয়। সেই ভিডিও সামনে আসার পরেও নিজের অবস্থান থেকে সরেননি সব্যসাচীবাবু। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর জনসভায় সিন্ডিকেট প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূলকে আক্রমণ করার পরে সব্যসাচী কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছিলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা থাকলে সিন্ডিকেট বন্ধ করে দেখান।’’

এমন পরিস্থিতিতে কী ভাবে কমিশনের নির্দেশ কার্যকর করবে বিধাননগর পুলিশ? কী ভাবেই বা রুখে দেবে এই বাহিনীকে? বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার জাভেদ শামিম শুধু বলছেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য সব ব্যবস্থাই নিয়েছি।’’ এর বেশি আর মুখ খোলেননি পুলিশ কমিশনার।

তবে পুলিশ সূত্রের খবর, পুরভোটে সন্ত্রাসের যে চেহারা বেআব্রু হয়েছিল, তাতে উর্দিতে কালি লেগেছিল কমিশনারেটের কর্তাদের। কেউ কেউ তো পুরভোটের সন্ধ্যায় ঘনিষ্ঠ মহলে কার্যত ভেঙেও পড়েছিলেন। এ বার তাই আগেভাগেই ঘুঁটি সাজিয়েছে বিধাননগর পুলিশ। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ সেই পরিকল্পনা আরও জোরালো করেছে।

বিরোধীরা বলছেন, সিন্ডিকেটের চাঁইরাই এ বার রাজারহাট, গোপালপুর, নিউ টাউনে শাসক দলের ভোটবাহিনীর ‘ক্যাপ্টেন’, ‘মেজর’, ‘কর্নেল’। তাদের কারও নাম ডাম্পি, কারও নাম গফ্‌ফর, কারও নাম বাবাই। এদের অধীনে থাকা ‘সেপাই’রা সিন্ডিকেটের সদস্য। ভোটের দিন ঢোকানো হয় ভাড়াটে সেনাও। সেই সেপাইরা কী করে, বিধাননগর পুর নিগমের ভোটেই চাক্ষুষ করেছে মানুষ। ১ থেকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে শাসক দলের পক্ষে ভোটের হার দেখে হেঁচকি ওঠার জোগাড় হয়েছিল তৃণমূলের একাংশেরই। এমনকী, সিন্ডিকেট চত্বরের চেনা মুখ সমীর সর্দার (ভজাই) এ বার নিউ টাউনের ভোটে নির্দল প্রার্থী। অনেকের মতে, তিনি সব্যসাচীর ‘ডামি’ হিসেবেই রয়েছেন।

পুলিশ সূত্রের দাবি, যে সব সিন্ডিকেট চাঁইয়ের বিরুদ্ধে আগে অপরাধের অভিযোগ উঠেছে, তাদের ধরে ধরে মুচলেকা লেখানো হয়েছে। বাকিরা নজরে রয়েছে। বেচাল দেখলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিন্ডিকেটের ঘাঁটিগুলিতে নজরদারি শুরু হয়েছে। বাইরে থেকে ভাড়াটে সেনা যাতে না ঢুকতে পারে, তার জন্য ৬৫টি মোড়ে নাকা তল্লাশি চলছে। হোটেল, লজ, গেস্ট হাউস মালিকদের মুচলেকা লেখানো হয়েছে, নির্দিষ্ট পরিচয়পত্র ও কারণ ছাড়া কোনও লোককে থাকতে দেওয়া যাবে না। নয় তো লাইসেন্স বাতিল হবে। রাতে ওই সব হোটেলে হানা দেওয়া হচ্ছে। নজরদারি চলছে নির্মীয়মাণ বাড়িগুলিতেও।

বিধাননগর কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, বিধাননগর কলকাতার লাগোয়া এলাকা। উত্তর কলকাতার ভোটে সল্টলেকের দুষ্কৃতীরা যাতে না ঢুকতে পারে, তার জন্য বিধাননগর পুলিশ সীমানা এলাকায় নজর রেখেছিল। এ বার সীমানা এলাকায় নজরদারি চালানোর জন্য কলকাতা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রাখা হচ্ছে। দুই পুলিশের কর্তারা সমন্বয় করে একাধিক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছেন বা এলাকা ছাড়া করেছেন।

তবে বিরোধীদের অভিযোগ, স্থানীয় থানাগুলির সঙ্গে সিন্ডিকেটের সুসম্পর্ক রয়েছে। নিউ টাউন থানার আইসি-র অপসারণের পিছনেও এই কারণকেই দায়ী করা হচ্ছে। নজরদারির অভাব রয়েছে সুকান্তনগর, কুলিপাড়া, মহিষবাথান এলাকায়। ফলে ওই সব দিক থেকে থানার ‘অজ্ঞাতে’ ভাড়াটে সেনারা সল্টলেকে ঢুকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মহিষবাথান, দত্তাবাদ এলাকায় প্রচারেও সিন্ডিকেট চাঁইদের ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে। পুলিশের অবশ্য বক্তব্য, শনিবার সন্ধ্যা থেকেই ওই সব এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ‘‘প্রয়োজনে উপযুক্ত দাওয়াইয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে,’’ বলছেন এক পুলিশকর্তা।

ভোট শুরুর পরে সব্যসাচীবাবু সিন্ডিকেটের সঙ্গে সম্পর্ক কবুল করলেও দল প্রকাশ্যে তাঁর বিরোধিতা করেনি। তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে, এমন খবরও নেই। দলীয় সূত্রের খবর, ভোটের সময়ে তাঁকে চুপ করে থাকার ‘উপদেশ’ দিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এ দিন কমিশনের নির্দেশ নিয়ে সব্যসাচীবাবুকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘যা খুশি লিখুন, আমার কিছু বলার নেই।’’ রাজারহাট-গোপালপুরের তৃণমূল প্রার্থী পূর্ণেন্দু বসু বলছেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের আইনানুগ নির্দেশ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE