Advertisement
E-Paper

প্রার্থিপদের টোপে ১৬ লাখ লোপাট

তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের হাতে লাখ লাখ নগদ টাকা গুঁজে দেওয়ার বিতর্কিত ভিডিও ফুটেজ ঘিরে নির্বাচনী রাজনীতি যখন উত্তাল, ঠিক তখনই তৃণমূলের ‘প্রার্থিপদ পাইয়ে দেওয়া’র নাম করে নগদ ১৬ লক্ষ টাকা প্রতারণার নতুন অভিযোগ সামনে এল।

শিবাজী দে সরকার ও সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৩:৩৪
বনমালী হাজরা

বনমালী হাজরা

তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের হাতে লাখ লাখ নগদ টাকা গুঁজে দেওয়ার বিতর্কিত ভিডিও ফুটেজ ঘিরে নির্বাচনী রাজনীতি যখন উত্তাল, ঠিক তখনই তৃণমূলের ‘প্রার্থিপদ পাইয়ে দেওয়া’র নাম করে নগদ ১৬ লক্ষ টাকা প্রতারণার নতুন অভিযোগ সামনে এল।

এবং ঘটনার সঙ্গে নাম জড়াল বর্ধমানের ভাতারের বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক বনমালী হাজরার। যাকে এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে দল টিকিট দেয়নি। ব্যাপারটা ঠিক কী?

প্রাথমিক ভাবে লালবাজার জানতে পেরেছে, তৃণমূলনেত্রী প্রার্থী-তালিকা ঘোষণা করে দেওয়ার পরে কলকাতা থেকে এক জন ফোন করেছিল বনমালীর অনুগত শেখ নুর আলমকে। ভাতারের পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তথা তৃণমূলের ভাতার ব্লকের সাধারণ সম্পাদক নুরকে ফোনে বলা হয়, বনমালীকে আবার প্রার্থিপদ পাইয়ে দেওয়া যাবে। তার কথা শুনে ওঁরা আশ্বস্ত হয়েছিলেন। এবং লোকটির মতো ওঁরা কলকাতার কসবায় নির্দিষ্ট জায়গায় তার প্রতিনিধির টাকা পৌঁছে দেন। কিন্তু পরে আর ওর পাত্তা পাওয়া যায়নি। যদিও ভোটের টিকিট পাওয়ার আশায় অচেনা মানুষকে নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে— এমন কথা কলকাতা পুলিশের কাছে পেশ করা লিখিত অভিযোগে নুর উল্লেখ করেননি।

অভিযোগে ওঁরা কী লিখেছেন?

লালবাজারের খবর: লিখিত অভিযোগে নুর বলেছেন, ‘তৃণমূলের প্রার্থী-তালিকা ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরে, গত ৭ মার্চ জনৈক আসগর কলকাতা থেকে আমায় ফোন করে। তৃণমূল নেতা হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে সে দাবি করে, তার সঙ্গে দলের উঁচু মহলের অনেকের বিলক্ষণ চেনা-জানা আছে। বেশ কিছু মন্ত্রীর সঙ্গেও ভাল রকম দহরম-মহরম আছে।’ পুলিশের দাবি: নুর জানিয়েছেন, বনমালীর টিকিট না-পাওয়ার বিভিন্ন ‘কারণ’ও আসগর সে দিন ফোনে ব্যাখ্যা করেছিল।

লালবাজারের তদন্তকারী-সূত্রের খবর: আসগরের আশ্বাসবাণী শুনে ভাতারের বেশ কয়েক জন তৃণমূল নেতার সঙ্গে নুর আলম বিস্তারিত আলোচনা করেন। এবং আসগরের কথা অনুযায়ী পর দিনই সংশ্লিষ্ট ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে হাজির হয়ে যান কসবার একটি দোকানের সামনে। সেখানে নগদ ১৬ লক্ষ টাকা তুলে দেন আসগরের ‘প্রতিনিধি’র হাতে, যে কিনা টাকা নিয়েই উধাও হয়ে যায়। সেই ইস্তক আসগরের মোবাইল ফোনটি বন্ধ। এক সপ্তাহ অপেক্ষা করার পরে নুর বুঝতে পারেন, তিনি বিলকুল ঠকে গিয়েছেন।

অতঃপর লালবাজারে গিয়ে নালিশ। যার ভিত্তিতে কসবা থানায় একটা প্রতারণার মামলা (কেস নম্বর ১২৪, তারিখ: ১৬ মার্চ ২০১৬) দায়ের করে তদন্তে নেমেছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। কিন্তু এত টাকা এক জনকে হঠাৎ কেন দেওয়া হল, নুর সে বিষয়ে লিখিত ভাবে পুলিশকে কিছু না-জানানোয় তদন্তকারীদের মনে জোরালো প্রশ্ন উঠেছে।

টাকা দেওয়া হল কেন?

বৃহস্পতিবার বনমালীবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করে এটা জানতে চাওয়া হলে তিনি পুরো ঘটনা বেবাক অস্বীকার করেছেন। ‘‘আমি কোথাও অভিযোগ দায়ের করিনি। প্রার্থী হওয়ার জন্য কাউকে টাকাও দিইনি।’’— মন্তব্য বিদায়ী বিধায়কের। এ দিন নুর আলমকেও ফোনে ধরা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘ব্যস্ত আছি।’’ বলেই ফোন কেটে দেন। পরে আর ফোন ধরেননি।

এ দিকে কসবার যে দোকানের সামনে টাকা লেনদেন হয়েছে বলে নুরের দাবি, তার মালিকের নামের সঙ্গে প্রতারকের নামের মিল রয়েছে। সেই দোকান-মালিককে এ দিন বিকেলে লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তদন্তকারীরা তাঁকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। পরে ওই দোকান-মালিক দাবি করেন, তিনি কাউকে ফোন করেননি, কারও থেকে কোনও টাকাও নেননি।

আর এখানেই তদন্তকারীদের কপালে গভীর ভাঁজ পড়ছে। তাঁদের বক্তব্য: কেউ সত্যি ১৬ লক্ষ টাকা কাউকে দিয়ে থাকলে কারণটা কী? লিখিত অভিযোগে কারণের উল্লেখ নেই কেন? টাকার উৎসই বা কী? তা ছাড়া ভোটের মরসুমে ৫০ হাজার টাকার বেশি বহন করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু কড়াকড়ি রয়েছে। অভিযোগকারী কি সেগুলো মেনে চলেছিলেন? বস্তুত শুধু অচেনা এক জনের ফোনের উপরে ভিত্তি করে এত টাকা অচেনা কারও হাতে তুলে দেওয়া হল কেন, তার যুক্তিসঙ্গত উত্তর তদন্তকারীরা এখনও খুঁজে পাননি।

এমতাবস্থায় গোয়েন্দাদের একাংশের প্রাথমিক অভিমত, অভিযোগের মধ্যেই যথেষ্ট অসঙ্গতি রয়েছে। লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার পর্যবেক্ষণ, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে অভিযোগকারীকে আরও খুঁটিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।’’ লালবাজার সূত্রের জানা যাচ্ছে, যে মোবাইল নম্বর থেকে নুরকে ফোন করা হয়েছিল, সেটি এখনও বন্ধ করা আছে। প্রতারণার উদ্দেশ্যে নাম ভাঁড়িয়ে কেউ ফোনটি করেছিল বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।

তবে সে জন্য ‘টোপ’ কী দেওয়া হয়েছিল, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।

assembly election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy