বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেতে পারে, কংগ্রেস-সিপিএম এক ক্যাম্পে বসতে পারে, কিন্তু তৃণমূলের বিবদমান সব পক্ষকে এক ছাতার তলায় বসানো যাচ্ছে না।
রাত পোহালেই ভোট গণনা। তার আগে বিধাননগর, রাজারহাটের ছবিটা অন্তত তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুরেও নিউ টাউনের থাকদাঁড়িতে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর সংঘর্ষ বাধে। অভিযোগ, কটূক্তি করাকে কেন্দ্র করে বিদায়ী বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের ঘনিষ্ঠ ভজাই সর্দারের অনুগামীদের সঙ্গে সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের অনুগামীদের গোলমালে জখম হন দু’জন। এর মধ্যেই বিধাননগর কলেজে তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট গণনাস্থলে একটিমাত্র ক্যাম্পে সন্তষ্ট নয় তৃণমূল। গণ্ডগোলের আশঙ্কা এড়াতে রাজারহাট-গোপালপুর ও রাজারহাট-নিউ টাউনের শাসক-সমর্থকদের এক জায়গায় এবং বিধাননগরের তৃণমূল সমর্থকদের আর একটি শিবির করার দাবি মেনে নিয়েছে পুলিশ।
থাকদাঁড়ির ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, এ দিন যারা সংঘর্ষে জড়ায়, তার প্রত্যেকেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত। আগে সকলেই একই শিবিরে ছিল। সিন্ডিকেটকে কেন্দ্র করেই দু’টি আলাদা গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। অভিযোগ যা-ই থাক, এলাকাবাসীরা বলছেন, এ দিন গণ্ডগোলের নেপথ্যেও ছিল সিন্ডিকেটের দখলদারিই। ভোট গণনার পরে এমন গণ্ডগোল বাড়বে বলেই তাঁদের আশঙ্কা। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সব্যসাচীর অনুগামীরা।
অন্য দিকে, তৃণমূলের তরফে আলাদা ক্যাম্পের দাবিতে পুলিশের সায় দেওয়ার পিছনেও একই ধরনের গোলমালের আশঙ্কা কাজ করছে বলে সূত্রের খবর। একই দাবি করেছে সিপিএম কংগ্রেস জোট শিবিরও। গণনার প্রস্তুতি শুরুর সময়ে শাসক দল ও জোটের শিবির করার জন্য প্রাথমিক ভাবে বিধাননগর কলেজের দু’পাশে দু’টি জায়গা বেছে রেখেছিল পুলিশ। বিধাননগর কমিশনারেটের অন্দরের খবর, ইতিমধ্যে সুজিত বসুর গোষ্ঠী ও সব্যসাচী দত্ত-পূর্ণেন্দু বসুর গোষ্ঠী দু’টি ভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প করতে চায়। বড় গোলমালের আশঙ্কা এড়াতে অগত্যা তৃণমূলের বিভিন্ন শিবিরের দাবি মেনে নিয়েছে পুলিশ। সব্যসাচী-পূর্ণেন্দুর তরফে রাজারহাট-গোপালপুর এবং রাজারহাট-নিউ টাউনের সমর্থকেরা বসছেন একত্রে এক জায়গায়। অন্য প্রান্তে বিধাননগরের সুজিত অনুগামী তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা ক্যাম্প করতে চলেছেন। একই দলের দু’টি শিবিরের আবেদন রক্ষা করতে গিয়ে শেষে জায়গা বদল হয়েছে জোট ক্যাম্পের। জোট শিবিরের দাবি, পুলিশই বিধাননগর কলেজের সোজাসুজি আর একটি জায়গায় ক্যাম্প করতে বলেছে।
ওই এলাকায় তৃণমূলের বিভিন্ন নেতাদের অনুগামীদের মধ্যে সংঘর্ষ নতুন কিছু নয়। কখনও সব্যসাচী-সুজিত, কখনও সব্যসাচী বনাম কাকলি-তাপস অনুগামীদের লড়াই দেখেছেন বাসিন্দারা। ভোটের আগেও তা বন্ধ হয়নি। ভোটের পরেও সেই ধারাই বজায় রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরেও নিউটাউনের থাকদাঁড়িতে তৃণমূলের দুই শিবিরের সংঘর্ষ হয়। আহত হন দু’জন। এমনকী তৃণমূলের অন্দর মহলেই এ বারের ভোটে বিবদমান গোষ্ঠীর একে অপরের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা নিয়ে গুঞ্জন চলছে। আর সেই গুঞ্জনই এলাকা জুড়ে গোলমালের ভয় উস্কে দিয়েছে। কথাটা গোপন থাকেনি। গিয়েছে পুলিশের কানেও।
আর তার ফল পেয়েছে জোট শিবির। বিধাননগরের জোট প্রার্থী অরুণাভ ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা এক জায়গায় ক্যাম্প তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। পুলিশের অনুরোধে জায়গা বদলাতে হয়েছে।’’
কিন্তু কেন? জোট শিবিরের একাংশের দাবি, সুজিত বসু এবং সব্যসাচী দত্তের অনুগামীদের একত্রে রাখলে দু’পক্ষে গোলমাল হতে পারে। পুলিশের সেই আশঙ্কারই খেসারত দিতে হচ্ছে তাঁদের। পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থকেরা যাতে একে অপরের কাছাকাছি যেতে না পারে এবং কোনও গোলমালে না জড়ায়, সে জন্যই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তারই একটি অংশ এই পরিকল্পনা। তবে রাজনৈতিক দলগুলি ভোটগণনা কেন্দ্র ঘিরে এক-এক জায়গায় ক্যাম্প করতে চেয়েছে। সেই পছন্দকে মান্যতা দিয়েই এমন পরিকল্পনা করা হয়েছে।
রাজারহাট-নিউ টাউনের তৃণমূল প্রার্থী সব্যসাচীবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘কে কোথায় ক্যাম্প করছে, জানি না। আমি আর পূর্ণেন্দুদা (রাজারহাট-গোপালপুরের প্রার্থী) এক ক্যাম্পেই থাকব।’’ আর সুজিত বসুর দাবি, ‘‘আমাদের মধ্যে দূরত্ব নেই। সবই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার।’’ তাঁর আরও দাবি, যাতায়াতের সুবিধার নিরিখেই দু’টি পৃথক জায়গায় শিবির হচ্ছে।
বিধাননগরের এক পুলিশকর্তার পাল্টা দাবি, রাজারহাট-নিউ টাউন, রাজারহাট-গোপালপুরের পাশাপাশি বিধাননগর থেকেও তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা বেশি সংখ্যায় ভিড় করতে পারেন। একটিমাত্র ক্যাম্পে তাঁদের স্থান সঙ্কুলান হওয়া মুশকিল। উপরন্তু নজরদারিতেও সমস্যা হতে পারে। তার প্রেক্ষিতেই পছন্দমতো জায়গায় শিবির করার আবেদন মানা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy