Advertisement
১৯ মে ২০২৪
এ পারে ভূত, ও পারেও

বৌদি, ডোমকল আটকে দিল

জলের গ্লাসটা এক নিঃশ্বাসে খালি করে তিনি বলছেন— ‘‘ঠিকঠাক আছে তো সব? চিন্তার কিছু নেই তো?’’ ফোন নামাতেই বেজে উঠছে অন্য ফোন —‘‘হ্যাঁ বল, ঠিকঠাক ভোট হচ্ছে তো?’’ সেটা নামাতেই ফের বাজছে আগেরটা।

ব্যস্ততায় চুমুক। — গৌতম প্রামাণিক

ব্যস্ততায় চুমুক। — গৌতম প্রামাণিক

শুভাশিস সৈয়দ
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:১২
Share: Save:

জলের গ্লাসটা এক নিঃশ্বাসে খালি করে তিনি বলছেন— ‘‘ঠিকঠাক আছে তো সব? চিন্তার কিছু নেই তো?’’

ফোন নামাতেই বেজে উঠছে অন্য ফোন —‘‘হ্যাঁ বল, ঠিকঠাক ভোট হচ্ছে তো?’’ সেটা নামাতেই ফের বাজছে আগেরটা।

—কি খবর বলো? তোমার ফোনের জন্যই বসে ছিলাম। হিসেব মত সব কিছু তো, রাখি তাহলে।’’

জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ের দোতলায় বাতানুকূল ঘরে নিজের চেয়ারের সামনে নিরন্তর বেজে চলেছে ফোন দু’টো। ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে তারা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী শুধু মুচকি হাঁসছেন, ‘‘এত কাঁপলে হবে!’’

টেবিলের এক কোনে পড়ে রয়েছে পেতলের একটি কামান। যেন গর্জে ওঠার অপেক্ষায়! এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর ভূমিকার সঙ্গে যা অনেকটাই মানানসই বলে জানিয়ে গেলেন দলের এক জন। তাই শুনে হো হো করে হেসেও উঠলেন।

অন্য দিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার সকালে একটু তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙেছে তাঁর। তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী গোবিন্দ বেহেরিয়া কাশিমবাজারের বাড়িতে পৌঁছানোর আগেই দেখেন ‘দাদা’ ঘুম থেকে উঠে গিয়েছেন। চিনি ছাড়া সবুজ চা দেওয়ার পরে আরও চার বার চা খাওয়ার জন্য দাদার কাছ থেকে ডাক আসে। সকাল সাড়ে দশটায় স্নান সেরে জলখাবার হিসেবে খান চিঁড়ের পোলাও। তার পরেই ডাউস প্যাজারো গাড়ি নিয়ে রওনা দেন জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে। তখন বেলা এগারোটা বেজে গিয়েছে।

জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে পৌঁছাতেই পরিচিত এক জন ঘরে ঢুকে জানিয়ে গেলেন, তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন ডোমকলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাই শুনে হাসতে হাসতে বলেন, ‘‘ব্যাটার হাল খারাপ। তাই এই বয়সে বাপকে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে।’’ গত এক মাস ধরে টানা সভা করে গলা অনেকটাই ভেঙে গিয়েছে। ভাঙা গলা নিয়েই দলীয় কার্যালয়ের ১২ ফুট বাই ১২ ফুট ঘরে বসে সকাল থেকেই ভোট পরিচালনা করলেন তিনি। কখনও নেতা-কর্মীদের ফোন করে নির্দেশ দিলেন। কখনও নেতা-কর্মীরা তাঁকে ফোন করে ভোটের ‘আপডেট’ দেন। কোথাও ভাল ভোট হচ্ছে শুনে দলীয় কর্মীদের উৎসাহ জোগান। কোথাও দলীয় কার্যালয়ে বসে দলের ঘনিষ্ঠ লোকজনের হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠলেন।

পরে দুপুরের, দিকে কাশিমবাজার পৌর-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান ভোট দিতে। এত দিন তিনি ভোট দিতেন গোরাবাজার শিল্পমন্দির উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। ভোট দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এত দিন দলের হয়ে ভোট দিতাম। এ দিন জোটের হয়ে ভোট দিলাম।’’ ভোট দিয়েই গাড়ি ঘুরিয়ে ফের জেলা কার্যালয়ে। নিজের চেয়ার টেনে বলতে না বসতেই ফোন দীপা দাশমুন্সির। আগে ঠিক ছিল ভোটপর্ব মিটতেই তিনি কলকাতা চলে যাবেন। এ দিন কলকাতায় তিনটে সভা ছিল তাঁর। কিন্তু ডোমকল উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় কলকাতা যাওয়া বাতিল করেন। ফোনে ‘দীপাবৌদি’কে সে কথা জানান।

ফোন রেখে বলতে শুরু করেন, ‘‘ডোমকলকে ঘিরে বড় পরিকল্পনা ছিল তৃণমূলের। কিন্তু তা ভেস্তে দিয়েছি। প্রথমে ডোমকলের আইসি-কে সরিয়ে দেওয়া গিয়েছে। পরে এক জন সাব-ইন্সপেক্টরকে সরিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন।’’ কিন্তু এসডিও-টাকে সরানো গেল না বলে একরাশ আক্ষেপ তাঁর গলায় ঝরে পড়ল।

এরই মধ্যে কে এক জন জানিয়ে গেলেন রেজিনগরে হুমায়ুন কবীর জিতবে। সঙ্গে সঙ্গেই ফোন করে জেনে নেন দলীয় প্রার্থীর কি অবস্থা। ‘হুমায়ুন জিতবে না কি রে?’ ফোনের ওপ্রান্তের গলা অবশ্য তাঁকে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দেয়। ওই ফোন রাখতে না রাখতেই ডোমকলের মোমিনপুর ও ঘোড়ামারা এলাকায় বিভিন্ন বুথে তৃণমূলের লোকজন ছাপ্পা ভোট মারার চেষ্টা করছে জানতে পেরে নির্বাচন কমিশনের সাধারণ পর্যবেক্ষক এবং পুলিশ পর্যবেক্ষক দুজনকেই ফোন করে গোটা পরিস্থিতি জানান। যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ওই এলাকায় আধা-সামরিক বাহিনী পাঠানো যায়। তার পরেই ডোমকলের এক নেতাকে ফোন করে উৎসাব দেন, ‘‘পর্যবেক্ষকদের বার বার করে ডোমকলের পরিস্থিতি জানিয়েছি। তবে ৪-৫টি বুথে ছাপ্পা ভোট দিলেও কিছু করতে পারবে না। তুমি চিন্তা করো না। তৃণমূলের রঙবাজি বেশি দিন চলবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 Adhir Chowdhury Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE