কী একটা এইমাত্র ছিল, এখন আর নেই!
আড়মোড়া ভাঙার ভঙ্গিতেই বোঝা যাচ্ছে, না থাকারই কথা। তবে তা যে একেবারে হারিয়ে গিয়েছে, এমনটা বলা যাচ্ছে না। টেবিলের উপরে ফরফর করে উড়ছে যে ফুলস্কেল খাতার পাতাটা, তাতে ২৫, ২৭ ২৯ এপ্রিলের অজস্র তারিখ। কে আসছেন, কোথায় ছুটতে হবে, কোন অফিসে কার সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট সময় ধরে লেখা রয়েছে তাও।
তিনি নন, তাঁরা সেনাপতি। ভোট, শেষ হয়েও হইল না শেষ গোছের মুখ নিয়ে এখনও আড়মোড়া ভেঙে পরক্ষণেই ক্লান্তি দূর করে ফেলতে হচ্ছে তাঁদের। শঙ্কার সিংহের দুলাল যেমন। দাদার ঠাণ্ডা জলের বোতল থেকে পরের দিনের খুঁটিনাটি সব টুকে-মনে রেখে মাস দেড়েক সামাল দেওয়ার পরেও বলছেন, ‘‘এত তাড়াতাড়ি কি কাজ গোটানো য়ায়। এখনও খেলা অনেক বাকি ভাই।’’ শুক্রবারও তাই সক্কাল সক্কাল হাজির হয়ে গিয়েছিলেন চাকদহের সিংহবাগানের বাড়িতে। রুটিনে কোনও ফাঁক নেই তাঁর এ দিনও। দাদার সার্টিফিকেটও পেয়ে যাচ্ছেন— ‘‘আরে ও না থাকলে অনেক কিছুই ঘেঁটে য়েত। এমন গুছিয়ে দিয়েছে না!’’
ডোমকলের শাসক দলের প্রার্থী সৌমিক হোসেনের নির্বাচনী প্রতিনিধি আর কেউ নন, মা বুলবুল বেগম। ডাকাবুকো ছেলেটা একটু জড়োসড়ো হয়েই জানাচ্ছেন, সঙ্গে না বেরলোও, সকালে তাঁর বেরনো থেকে রাতে ঘরে ফেরা পর্যন্ত মা’ই তাঁর সেনাপতি! বলছেন, ‘‘ডোমকল অফিস থেকে বেরোতেই বেলা গড়িয়ে যেত। রাতে বহরমপুরে মা’র কাছে না ফেরা পর্যন্ত সারাক্ষণ যেন মা’ই নিয়ন্ত্রণ করত!’’
ভোট মিটতে তাঁর সেনাপতিরও যেন ছুটি অনেক দিন পর শুক্রবার সন্ধেয় বসেছেন চেনা সিরিয়াল দেখতে। বলছেন, ‘‘বাব্বাঃ কতদিন পরে।’’ বুলবুল বেগমের উল্টো দিকে রয়েছেন মুস্তাফিজুর। আনিসুর রহমানের সেনাপতি, সিপিএমের ডোমকলের জোনাল কমিটির সম্পাদক। তাঁর অবশ্য এ দিনও ছুটি মেলেনি। বলছেন, ‘‘কাল পর্যন্ত আনিসুরদাকে সামলেছি, আজ থেকে শুরু হয়েছে, ভোটের দিন তৃণমূলের সন্ত্রাসে ঘরছাড়া এবং খুন হওয়া দলীয় কর্মী তাহিদুলের পরিবারের জন্য সময় দেওয়া। ছুটি নেই গো ছুটি নেই।’’ আনিসুরও মেনে নিচ্ছেন, ‘‘শরীর ভাল নেই, ও না থাকলে থই পেতাম না।’’
মুর্শিদাবাদের রানিনগরের জোটের প্রার্থী কংগ্রেসের ফিরোজা বেগমের নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন নিখিলচন্দ্র দেবনাথ। অনেক দিন পরে যেন লম্বা একটা শ্বাস নিলেন নিখিল। তিনি বলেন, ‘‘ভোট শেষে ইভিএমগুলি স্ট্রং রুমে ঢুকিয়ে সিল করে বাড়িতে ফিরতেই ভোর চারটে বেজে গিয়েছিল। আর এ দিন সকালেই ছুটতে হয়েছে পর্যবেক্ষকের কাছে। এই মাস দুয়েকে গড়ে ঘম্টা দুয়েকের বেশি ঘুম হয়নি তাঁর। বলছেন, ‘‘এ ক’দিন পথে প্রচারে খাওয়া বলতে রোদ আর ঘুম বলতে ঘম্টা তিন।’’ এ বার ঘুমোতে চাই!’’
বহরমপুরের শাসক দলের প্রার্থী সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইলেকশন এজেন্ট ছিলেন তাঁর স্বামী কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়। আড়াল তেকে স্ত্রী হয়ে তিনিই সামলে দিয়েছেন ভোট। পরিপাটি সাজিয়ে দিয়েছেন, কখন কোথায়, এমনকী কেন’র উত্তরও। কৌশিক বলছেন, ‘‘গত কয়েক মাস ধরে ভোটের শ্রমে কেটেছে। ভোটপর্ব মিটে গেলেও শুক্রবারও সকাল থেকেই অন্য এক ব্যস্ততায় কেটেছে। বহরপুরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলীয় কর্মীরা এ দিন সকাল থেকে আসতে তাকেন, কোথায় কি রকম ভোট হয়েছে সেই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা— ভোট কী অত তাড়াতাড়ি মেটে!’’
জঙ্গিপুরের কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন কংগ্রেসের মহম্মদ সোহরাব। বয়স হয়েছে, মধ্য আসির প্রার্তীর সব কিছুই তাই হাতের কাছে এগিয়ে দিয়ে সাহায্য করতে হয়েছে। শুক্রবার সকালেও সোহরাব তাই চোকে হারাচ্ছেন যাঁকে তাঁর নাম, হাসানুজ্জামান বাপ্পা। জরুরি বৈঠক থেকে প্রার্থীর সঙ্গে প্রচার— বাপ্পা ছাড়া সোহরাব প্রায় অন্ধ। দলের কর্মীরা আড়ালে বলছেন, ভোট তো মিটল, কিন্তু সোহরাম সাহেবের ‘দৃষ্টি’ কিন্তু ফেরেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy