Advertisement
১৭ মে ২০২৪

দলীয় কোন্দলে জোর নেই খাদেমের প্রচারে

ভরতপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও চওড়া হল। নিজে প্রার্থী হতে না পেরে দলীয় প্রার্থী খাদেম এ দস্তোগিরির বিরোধীতা করছিলেন ভরতপুর-২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান সুমন। তিনি নির্দল হিসেবে ওই কেন্দ্রে দাঁড়ানোর কথাও ভাবনা-চিন্তা করছিলেন।

ষষ্টী মালের প্রচারে মুস্তাফিজুর রহমান সুমন। শুক্রবার কৌশিক সাহার তোলা ছবি।

ষষ্টী মালের প্রচারে মুস্তাফিজুর রহমান সুমন। শুক্রবার কৌশিক সাহার তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কান্দি শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩৪
Share: Save:

ভরতপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও চওড়া হল। নিজে প্রার্থী হতে না পেরে দলীয় প্রার্থী খাদেম এ দস্তোগিরির বিরোধীতা করছিলেন ভরতপুর-২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান সুমন। তিনি নির্দল হিসেবে ওই কেন্দ্রে দাঁড়ানোর কথাও ভাবনা-চিন্তা করছিলেন। পরে জেলা নেতৃত্বের মধ্যস্থতায় তিনি সে দফায় রণে ভঙ্গ দেন। কিন্তু দ্বন্দ্ব পুরো মেটেনি। বরং আরও বেড়েছে। শুক্রবার তিনি বড়ঞার তৃণমূল প্রার্থী ষষ্ঠীচরণ মালের সমর্থনে মিছিল করলেন। আর মাঝপথে খাদেমকে দেখেই মুখ লুকোলেন।

মাস খানেক আগেই জেলা পরিষদের সদস্য খাদেম কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। তিনি সুমনের হাত ধরে তৃণমূলে ভেড়েন। আর যোগদানের পুরস্কার হিসেবে খাদেমকে ভরতপুর বিধানসভা কেন্দ্রের টিকিট দেয় তৃণমূল। আর এতেই বেজায় চটেছেন সুমন। কারণ, মাস দু’য়েক আগে থেকেই দলের জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ ইঙ্গিত দিয়েছিল, ভরতপুর কেন্দ্রে সুমনকে প্রার্থী করা হবে। বাড়া ভাতে ছাই পড়ায় রুষ্ট সুমন ঘনিষ্ট মহলে জানান, এ যেন খাল কেটে কুমীর আনার সামিল। খাদেমকে তিনিই দলে আনলেন। এখন খাদেমের হাতেই তাঁর রাজনৈতিক মৃত্যু হল। প্রার্থী বদলের আর্জি জানানো হয় জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীর কাছে।

দিন দু’য়েক আগে শুভেন্দু জেলার নেতাদের সঙ্গে বিশেষ নির্বাচনী বৈঠক করেন। আসেন। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে খাদেম ও সুমনের অনুগামীরা নিজেদের মধ্যে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। ওই বৈঠকে খাদেম অভিযোগ করেন, সুমন তাঁর বিরুদ্ধে অর্ন্তঘাত করছেন। সুমনকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবিও তোলা হয় ওই বৈঠকে। খাদেমের এক ঘনিষ্ঠ অনুগামী বলেন, ‘‘সুমন নিজে তো প্রচারে নামছেন না। তার উপরে দলের অন্যান্য কর্মীদেরও তিনি নিষ্ক্রিয় থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। এলাকায় গোপনে খাদেমের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছেন সুমন।’’ দলেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, বৈঠকে সুমের লোকজনও খাদেমের বিরুদ্ধে গলা চড়ান। তাঁরা খোলাখুলি জানান, খাদেমকে তাঁদের প্রার্থী হিসেবে না-পছন্দ। তবে তাঁরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষেই ভোট দেবেন। কিন্তু প্রচারে নামতে পারবেন না। শুভেন্দু তারপর মুস্তাফিজুর রহমানকে ভরতপুর থেকে সরিয়ে বড়ঞার দায়িত্ব দেন। যদিও বৈঠক শেষে শুভেন্দু বলেন, ‘‘সুমনকে ভরতপুর থেকে সরানো হয়নি। বরং তাঁকে বড়ঞা ও কান্দির অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে কোনও দ্বন্দ্ব নেই।”

জেলা পর্যবেক্ষক দ্বন্দ্বের কথা না মানলেও এ দিন অবশ্য ভিন্ন চিত্র দেখা গেল। দুপুরে ষষ্ঠীচরণবাবুর বাড়ি যান সুমন। সেখান থেকে দলবল জুটিয়ে দু’জনে মিছিল করে পৌঁছন কান্দি মহকুমাশাসকের দফতরে। আর এ দিনই মনোনয়ন পেশ করতে যান খাদেম। মহকুমাশাসকের দফতরে খাদেম ও সুমন মুখোমুখি হয়ে পড়লেও, দু’জনে কেউ কারও দিকে ঘুরেও তাকাননি। বরং মুখ ঘুরিয়ে চলে যান।

দিন কুড়ি পরে ভোট। আর এখনও ভরতপুরে দলীয় কোন্দল পুরোমাত্রায় বজায় থাকায় চিন্তিত জেলা তৃণমূলের নেতারা। জেলা তৃণমূলের সভাপতি মান্নান হোসেন অবশ্য বলছেন, ‘‘মুস্তাফিজুরকে ওই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হবে। এমনটা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু আচমকা খাদেমকে প্রার্থী করাই দলের অন্দরে কিছুটা ক্ষোভ ছড়িয়েছে।’’ খাদেম এ দস্তোগিরি স্পষ্ট করে বলছেন, ‘‘আমি নিজে সুমনের বাড়ি গিয়েছিলাম। ওঁকে প্রচারে নামার জন্য অনুরোধও করি। কিন্তু উনি নিজেও আমার হয়ে প্রচারে নামছেন না। আবার দলের অঞ্চল সভাপতিদেরও প্রচারে নামতে বাঁধা দিচ্ছেন। তবে আমি শুভেন্দুবাবুর কাছে সুমনের বিরুদ্ধে কোনও নালিশ জানাইনি।’’ সুমন অবশ্য বলছেন, ‘‘নির্দল প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত আমি কোনওদিন চিন্তাই করিনি। দল বড়ঞার দায়িত্ব দিয়েছে। তাই এ দিন ষষ্ঠীচরণের সঙ্গে মিছিল করেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

campaign assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE