পার্টি অফিসে তৃণমূল প্রার্থী কালীপদ মণ্ডল।
টানা দু’মাসের দৌড়াদৌড়ির ধকল সত্তর পেরোনো শরীরটা টানতে পারছিল না। তাই ভোট শেষ হতেই দিন চারেক দলের কর্মীদের কাছ থেকে জোর করেই প্রায় ‘আউট অব সাইট, আউট অব মাইন্ড’ হয়ে গিয়েছিলেন। চার দিন টানা ঘুম। তারপর অবশ্য ফের যুতে এসেছে শরীর। ফের ফিরেছে পুরনো রুটিন। দুপুর-বিকেলের রোদের ঝাঁঝ নামতেই সন্ধ্যায় হাজির হয়ে যাচ্ছেন দলের অফিসে। তার পর রাত পর্যন্ত চলছে দেদার আড্ডা। ৭৪ বছরের বিদায়ী বিধায়ক তথা হাওড়ার শ্যামপুরের তৃণমূল প্রার্থী কালীপদ মণ্ডলের এটাই ভোট পরবর্তী রোজনামচা।
বললেন, ‘‘দিনের বেলা টুকটাক কাজে সময় কাটছে। সন্ধে হলেই পার্টি অফিস আর দলের কর্মীরা যেন টানে।’’ অফিসে রাত পর্যন্ত টিভিতে ভোটের ফলের নানা আলোচনা শুনতে শুনতেই সময় কাটান তিনি। ওই সব আলোচনা শুনে ১৯ মে’র ফল নিয়ে টেনশন হয় না?
প্রশ্নটা শুনে গম্ভীর মুখে বললেন, ‘‘এখান থেকেই টানা তিনবার জিতেছি। ভোটের আগে ভেবেছিলাম মার্জিনটা ৫০ হাজার রাখতে পারব। কিন্তু এখন দেখছি তা হবে না।’’ জোটের হাওয়ায় আত্মবিশ্বাসে চিড়? প্রশ্নটা শুনে সরাসরি দায় চাপালেন প্রতিপক্ষ জোটের কংগ্রেস প্রার্থীর উপর, ‘‘জানেন, কংগ্রেস প্রার্থী প্রচুর টাকা ছড়িয়েছেন!’’ একটু পরেই অবশ্য স্বর নামিয়ে বলেন, ‘‘এখানে বাম-কংগ্রেস জোট বেশ জোরদার হয়েছে। বিশেষ করে সিপিএম কংগ্রেস প্রার্থীকে যে ভাবে বরণ করে নিয়েছে তার গুরুত্ব অস্বীকার করা যাবে না। তবে জিত আমার হবেই। জয়ের ব্যবধানটা কমে ২৫ হাজারে দাঁড়াবে মনে হচ্ছে।’’
মেয়ের পাশের খবরে বাড়িতে ভিড় কংগ্রেস প্রার্থী অমিতাভ চক্রবর্তীর।ছবি: সুব্রত জানা।
কলকাতার যাকে বলে একেবারে ‘হার্ট অব দ্য সিটি’র বাসিন্দা। কিন্তু ভোট বড় বালাই। তাই জোটের হয়ে শ্যামপুরের কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণা হতেই শশাটিতে আস্তানা গাড়েন অমিতাভ চক্রবর্তী। সেখান থেকেই ভোটের দিন পর্যন্ত চলেছে এলাকায় জনসংযোগ, বাম ও কংগ্রেস কর্মীদের নিয়ে ভোটের প্রচার। তবে ভোট শেষ হলেও ভাড়া বাড়ি ছাড়েননি। জিনি যে বহিরাগত নন, তাঁদেরই ঘরের লোক তা বোঝাতে ভোট মিটলেও সকাল-সন্ধে শশাটির বাড়িতে চলছে আড্ডা। ভোটের ধকল টকল যে তাঁর অভিধানে নেই তা বোঝাতে বলেন, ‘‘ভোট মিটেছে তো কী? কত কাজ পড়ে। সপ্তাহে দু-তিনবার প্রদেশ অফিসে যেতে হয়। বাকিটা এখানেই কাটাচ্ছি।’’ ১৯মে’ কী হবে, তা নিয়ে টেনশন হচ্ছে না?
প্রশ্ন শেষ হতেই উত্তর এল, ‘‘টেনশন হচ্ছিল ভীষণ। তবে এখন আর তা নেই।’’ বলেন কী? নিজেই ভুলটা ভাঙিয়ে দেন, ‘‘আরে ভোট নয়, মেয়ের আইসিএসি পরীক্ষীর রেজাল্ট নিয়ে টেনশন ছিল। মেয়ে ভালভাবে পাশ করেছে। এখন মিষ্টিমুখের পালা।’’
তা হলে ভোট নিয়ে কোনও চিন্তা নেই বলছেন?
এ বার উত্তর, ‘‘কী হয় কী হয়, একটা ভাব যে নেই তা নয়। আমি সাধ্যমতো ভালভাবে পড়ে পরীক্ষা দিয়েছি।’’
প্রতিপক্ষের ‘টাকা ছড়ানোর’ অভিযোগ নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কোনও টাকা পয়সা ছড়াতে হয়নি। এখানকার গৃহশিক্ষকেরা আমাকে ভালই গাইড করেছেন। ফল নিয়ে আমি যথেষ্ট আশাবাদী।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy