Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

দুরন্ত ফিল্ডিংয়ে আটকাল রান, সজাগ আম্পায়ারও

বীরভূমে রবিবারের ল়ড়াইটা ছিল রান রেট বাড়িয়ে রাখার। সব প্রস্তুতিও ছিল গত বারের চ্যাম্পিয়নদের। কিন্তু স্লগ ওভারে দুর্দান্ত ফিল্ডিং করল চ্যালেঞ্জার টিম। আম্পায়াররাও উল্টোপাল্টা সিদ্ধান্ত তেমন নেননি

বোলপুরের নিচুপট্টি পার্টি অফিসে অনুব্রত মণ্ডল। ছবি : স্বাতী চক্রবর্তী।

বোলপুরের নিচুপট্টি পার্টি অফিসে অনুব্রত মণ্ডল। ছবি : স্বাতী চক্রবর্তী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৫:০৭
Share: Save:

বীরভূমে রবিবারের ল়ড়াইটা ছিল রান রেট বাড়িয়ে রাখার। সব প্রস্তুতিও ছিল গত বারের চ্যাম্পিয়নদের। কিন্তু স্লগ ওভারে দুর্দান্ত ফিল্ডিং করল চ্যালেঞ্জার টিম। আম্পায়াররাও উল্টোপাল্টা সিদ্ধান্ত তেমন নেননি। ফলে কাজের কাজটা হল কি না, চিন্তা রয়ে গেল বীরভূমে চ্যাম্পিয়ন টিমের ক্যাপ্টেন অনুব্রত মণ্ডলের। এ দিন দুপুর থেকেই তাঁর ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজে’ কিছুটা যেন আত্মবিশ্বাসের অভাব। লোকসভা ভোটে চ্যালেঞ্জারদের ঘরে ঢুকিয়ে ফিল্ডারহীন মাঠে রান তুলেছিলেন।
এ দিন কিন্তু ম্যাচের পরে চ্যালেঞ্জারেরা বলছেন, বল তেমন গলেনি। বরং ক্যাচ উঠেছে অনেক!

উত্তরবঙ্গের ৪৫টি ও বীরভূমের ১১টি-সহ মোট ৫৬টি আসনে ভোট হয়েছে এ দিন। উত্তরবঙ্গে খেলাটা যে শক্ত, স্বীকার করেছিলেন দিদিও। হাতে ছিল দক্ষিণবঙ্গের কিছু জেলা। যার মধ্যে বীরভূমেই রান রেট তুঙ্গে তোলার ছক ছিল তাঁর। বীরভূম অধিনায়ক তো চ্যালেঞ্জারদের ভ্যানিশ করার হুমকিও দিয়েছিলেন। কিন্তু খেলাটা যে একপেশে হল না তার একটা কারণ চ্যালেঞ্জারদের লড়াই। অন্যটা— কাজল শেখদের মতো কিছু খেলোয়াড়, যাঁরা নিজেদের টিমের ব্যাটসম্যানদেরই রান আউট করিয়ে দিয়েছেন। নানুরে তাই কিছু বুথে বেলা তিনটের আগে এজেন্টই দিতে পারেনি তৃণমূল। যখন এজেন্ট বসল, তত ক্ষণে পড়ে গিয়েছে ৬৭% ভোট!

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সজাগ ছিলেন ‘আম্পায়ার’রাও। লাভপুরে যে ভাবে আধাসেনা তৃণমূলের বাহিনীর দিকে ধেয়ে গিয়েছে, তাতে চ্যাম্পিয়নদের সহ-অধিনায়ক মনিরুল ইসলাম ক্ষুব্ধ। ইলামবাজারেও একটি বুথের সামনে গণ্ডগোল তুরন্ত সামাল দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। দিনের শেষে চ্যালেঞ্জারদের তরফে সিপিএমের মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘এ বার মানুষ জবাব দিতে তৈরি ছিলেন। বোমা, গুলি, গুড়-বাতাসা তাই সে ভাবে কাজে দেয়নি!’’ চ্যাম্পিয়ন শিবিরের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘উত্তরবঙ্গ থেকে বীরভূম— সর্বত্রই ভাল ভোট হয়েছে। চিন্তার কারণ দেখছি না!’’

মহাসচিব এ কথা বললেও চ্যাম্পিয়নদের কপালে ভাঁজ বাড়িয়ে এ দিন চোখে পড়ার মতো সক্রিয় ছিল রাজ্য পুলিশও। এর নেপথ্যেও একটি ঘটনা রয়েছে। দিন কয়েক আগে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ কলকাতায় এসে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে বলেছিল, ‘‘মনে রাখবেন, আপনি কমিশনের ডেপুটেশনে কাজ করছেন!’’ তার পরেই শুধুমাত্র বীরভূমের ভোটের দায়িত্ব দিয়ে আইজি পশ্চিমাঞ্চল জ্ঞানবন্ত সিংহকে এই জেলায় পাঠান ডিজি।

সূত্রের দাবি, শনিবার বীরভূমের সমস্ত আইসি-কে বৈঠকে ডেকে জ্ঞানবন্ত বলেন, ‘‘৩৬৪ দিন আপনারা অনুব্রতর হয়ে কাজ করেন। এই একটা দিন প্রশাসনের হয়ে কাজ করতে হবে।’’ আইজি জানিয়ে দেন, এর পরেও রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে ভোটে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠলে কমিশন তো ব্যবস্থা নেবেই, সেই সঙ্গে তিনিও সংশ্লিষ্ট অফিসারকে সাসপেন্ড করবেন। এরই ফল মিলেছে এ দিন। এবং তাতে বিরক্ত অনুব্রতও!

এখন প্রশ্ন, স্কোর কী হবে? লোকসভায় বীরভূমে ৭-৪ এগিয়ে ছিলেন দিদি। এ বার চেয়েছিলেন ১১-০। অথচ এ দিন দুপুরে দেখা যায়, চ্যাম্পিয়ন ড্রেসিং রুম থেকেই ফোনে বলা হচ্ছে— ‘‘৭-৪টা যেন থাকে, দেখিস। না বাড়ুক, যেন কমে না যায়!’’ সেখানে চ্যালেঞ্জারদের প্রত্যয়, ‘‘আমাদের পক্ষে ৬-৫ হচ্ছে। যেখানে অবাধ ভোট হয়েছে,
সেখানে ভোটটা আমাদের দিকেই বেশি পড়েছে বলে মনে হচ্ছে।’’ ল়়ড়াইয়ে তৃতীয় পক্ষও অবশ্য রয়েছে। তবে তারা যে খেলায় সে ভাবে নেই, তা বুঝতে পেরেই এ দিন বীরভূমের ১১টি কেন্দ্রেই পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিজেপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE