বহু প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও তাঁর সরকার এই ক’বছরে বেশির ভাগ কাজই করে ফেলেছে, একাধিকবার এই দাবি শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। কিন্তু বিধানসভা ভোটের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে শুধু হাওড়া জেলাতেই দেখা যাচ্ছে, এতদিনে তাঁর দলের বেশির ভাগ বিধায়ক নিজেদের তহবিলের ৭৫ শতাংশ টাকাই খরচ করতে পারেননি। আমতার কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্রের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের দাবি, উদাসীনতার কারণেই বিধায়কেরা নিজেদের তহবিলের টাকা খরচ করতে পারেননি। অধিকাংশ বিধায়কই অবশ্য সে কথা মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, পুরো বরাদ্দই তাঁরা খরচ করেছেন। কিন্তু সময়মতো কাজের শংসাপত্র (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) না যাওয়ায় খরচের পুরো হিসাব প্রতিফলিত হয়নি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যেক বিধায়ককে তাঁর এলাকা উন্নয়নের জন্য বছরে ৬০ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ করা হয়। সেই টাকায় বিধায়কের দেওয়া প্রস্তাব মোতাবেক উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়। পুরো বিষয়টির তত্ত্বাবধান করে জেলা পরিকল্পনা দফতর। এই দফতরই বিধায়ক তহবিলের টাকা খরচের বিষয়টি দেখভাল করে। প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলার ১৬ জন বিধায়কের মধ্যে ১৫ জনই তৃণমূলের। এই সরকারের আমলে বিধায়ক তহবিলে জেলায় মোট বরাদ্দ হয়েছে ৪৪ কোটি ২৯ লক্ষ ১৮ হাজার ৬৬৭ টাকা। খরচ হয়েছে ৩৪ কোটি ১৮ লক্ষ ৭৭ হাজার ৫৭৫ টাকা। অর্থাৎ, ৭১.২২ শতাংশ।
কেন এই অবস্থা?
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বিধায়কেরা জেলা পরিকল্পনা দফতরে কাজের প্রস্তাব জমা দিয়েই হাত গুটিয়ে নেন। প্রস্তাব অনুমনোদ ও ব্যয় বরাদ্দ অনুমোদন করা— এই সব দিকগুলি যেখানে বিধায়কদেরই উদ্যোগী হয়ে করার কথা, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সেটি তারা করেন না। জেলা প্রশাসনকেই উদ্যোগী হতে হয়। ফলে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি করা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে বিধায়ক তহবিলের টাকা ফেরত চলে যায়। তবে, ব্যতিক্রমও রয়েছে। ডোমজুড়ের বিধায়ক তথা বিদায়ী সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় মোট বরাদ্দের ৯৯.২৯ শতাংশ টাকা খরচ করতে পেরেছেন বলে প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, এক বিধায়ককে বারবার চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছিল তাঁর প্রস্তাবগুলি আইনানুগ পদ্ধতি মেনে জমা দেওয়ার জন্য। তা তিনি করেননি। ফলে, তাঁর বিধায়ক তহবিলের অনেক টাকা ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
হিসেব বলছে, এ পর্যন্ত, বালিতে বিধায়ক তহবিলের ৫৫.১১ শতাংশ, হাওড়া উত্তর কেন্দ্রে ৭০.০৬ শতাংশ, সাঁকরাইলে ৭১.০৩ শতাংশ, পাঁচলায় ৭০.১৮ শতাংশ, উলুবেড়িয়া পূর্বে ৭৪.২৫ শতাংশ, হাওড়া দক্ষিণ কেন্দ্রে ৬৯.৪৭ শতাংশ টাকা খরচ হয়েছে। এমন উদাহরণ আরও রয়েছে। তৃণমূল বিধায়কদের মধ্যে সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা উদয়নারায়ণপুরের সমীর পাঁজার। তিনি খরচ করতে পেরেছেন মাত্র ৪৬.৭৮ শতাংশ টাকা। তবে, টাকা খরচের ক্ষেত্রে জেলায় সব থেকে পিছিয়ে রয়েছেন আমতার কংগ্রেস বিধায়ক। তিনি খরচ করতে পেরেছেন মাত্র ৪২.৪৬ শতাংশ।
কী বলছেন বিধায়কেরা?
উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজার দাবি, ‘‘নির্বাচনবিধি চালু হওয়ায় ঠিকাদারদের টাকা দেওয়া যায়নি। ফলে, ইউসি জমা দেওয়া যায়নি। তাই খাতায়-কলমে পুরো হিসাব দেখানো যায়নি।’’ কংগ্রেসের অসিতবাবুর দাবি, ‘‘আমার পুরো বরাদ্দেরই কাজ চলছে। আমার সমস্ত প্রস্তাবই অনুমোদন পেয়েছে। পুরো কাজই হবে।’’ উলুবেড়িয়া দক্ষিণের বিধায়ক পুলক রায়ের দাবি, তিনি প্রায় একশো শতাংশই কাজ করে ফেলেছেন। কাগজপত্র জমা দেওয়া হচ্ছে।
ডোমজুড়ের বিধায়ক রাজীববাবু পদ্ধতি মেনে কাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে বলে জেলা প্রশাসনের কর্তারাই মেনে নিয়েছেন। কী ভাবে এটা সম্ভব হল? রাজীববাবু বলেন, ‘‘শুধু বিধায়ক কোটার কাজ দেখভাল করতে আমার দু’জন কমী আছেন। প্রয়োজনে নিজেও হস্তক্ষেপ করি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy