প্রচারে মোদী। শহিদ মিনার ময়দানে রবিবার।- নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের জারি করা বিধিভঙ্গের নোটিসের জবাব মুখ্যসচিব দিয়ে পরিস্থিতি ঘোরালো করেছেন— গত কালই বলেছিল আনন্দবাজার। আজ তারই প্রতিধ্বনি করে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন মুখ্যসচিবের এই ধরনের নোটিসের জবাব দেওয়া ঠিক নয়। অন্য দিকে কমিশন সূত্রের ইঙ্গিত, মুখ্যসচিবের জবাবকে তারা গ্রাহ্যের মধ্যেই আনছে না।
নির্বাচন কমিশনের পাঠানো নোটিসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামের পরে মুখ্যমন্ত্রী লেখা হয়েছে এবং চিঠিটি নবান্নে পাঠানো হয়েছে, এই যুক্তিতে তাঁর হয়ে জবাব পাঠিয়েছেন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক নেতার স্টাইলে কমিশনকে কটাক্ষও করেছেন। ফলে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, এর পরে মুখ্যসচিব কি তৃণমূলের মিছিলে হাঁটবেন? রাজ্যের প্রশাসনিক মহলের বড় অংশও বলছে, মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে মুখ্যসচিব তাঁর মেরুদণ্ডহীনতার পরিচয়ই দিয়েছেন। আইএএস অফিসার হিসেবে মুখ্যসচিব আদতে যাঁর অধীনে সেই প্রধানমন্ত্রী (কর্মিবর্গ দফতর তাঁরই এক্তিয়ারে) আজ কলকাতায় ভোটপ্রচারে এসে বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন তৃণমূল নেতা মমতাদিদিকে, ভবানীপুরের প্রার্থী মমতাদিদিকে নোটিস দিয়েছিল। তার জবাব দিলেন মুখ্যসচিব! ওই জবাব তো তৃণমূল বা তাদের উকিল বা স্বয়ং মমতাদিদির দেওয়া উচিত ছিল। মুখ্যসচিব কেন দিলেন? দল আর সরকারে কোনও ফারাক নেই? এখান থেকেই স্পষ্ট মমতাদিদি সরকারের অপব্যবহার করছেন।’’
আমলাতন্ত্রকে দলদাসে পরিণত করার জন্য মমতাকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মোদী বলেন, ‘‘ইন্দিরা গাঁধীর ৬ বছরের জন্য সাংসদপদ বাতিল হয়ে গিয়েছিল। কারণ, তিনি সরকারের অপব্যবহার করেছিলেন। মমতাজি, আইন আইনের কাজ করবে। জয় পরাজয় হতে থাকে। গণতন্ত্রের এটাই নিয়ম। কিন্তু যদি কেউ ব্যবস্থাকেই নষ্ট করে, সেটা আমি মানতে পারি না।’’ মমতা কেন কমিশনের বিরুদ্ধে লড়ছেন এই প্রশ্ন তুলে মোদীর মন্তব্য, ‘‘আম্পায়ার ভুল করলেও তাঁকে কেউ অসম্মান করে না। আপনি কমিশনের সঙ্গে লড়ছেন। আপনার কিছু বলার থাকলে কমিশনে গিয়ে বলুন!’’
এ দিনই চৌরঙ্গির সভায় মমতার অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, ‘‘কেন মুখ্যসচিব জবাব দেবেন না? চিঠিটা তো মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়েছে। তৃণমূলের নেত্রীকে তো দেয়নি! সরকারের অনেক প্রোটোকল রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিলে মুখ্যসচিবই জবাব দেয়।
প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীকে কোনও চিঠি দিলে তার জবাব মুখ্যমন্ত্রীই দেবেন। না জেনে এ সব কথা বলছেন! এতে দেশ চলবে?’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী বলে সম্বোধন করে কেন চিঠি দিল নির্বাচন কমিশন? এই প্রশ্নের জবাবে উপ নির্বাচন কমিশনার সন্দীপ সাক্সেনার যুক্তি, ‘‘কাউকে যখন চিঠি পাঠানো হয়, তখন যথোচিত সৌজন্য দেখিয়েই সম্বোধন করা হয়। কিন্তু নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগে শো-কজ করার অর্থ, তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা বা নেত্রী হিসেবেই বিধি ভেঙেছেন।’’
যার অর্থ স্পষ্ট। মমতাকেই জবাব
দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে কি ফের মমতাকে চিঠি পাঠানো হবে? কমিশন সূত্রে বলা হচ্ছে, শো-কজের নোটিসেই বলা হয়েছে যে ১৬ তারিখ বেলা তিনটের মধ্যে জবাব না এলে
কমিশন আর কিছু না জানিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবে।
তা হলে কি মুখ্যসচিবের জবাব গ্রাহ্য করা হবে না?
সাক্সেনা বলেন, ‘‘এটি এখন কমিশনের বিবেচনাধীন। খুব শীঘ্রই পরবর্তী পদক্ষেপ জানানো হবে।’’ কমিশন সূত্র অবশ্য বলছে, জবাব মমতাকে বা তাঁর উকিলকে বা তাঁর দলকে দিতে হবে। অন্য কারও জবাবের কোনও মূল্যই নেই।
বাসুদেববাবু এ দিন চিঠি-বিতর্ক সংক্রান্ত কোনও প্রশ্নের জবাব না-দিলেও তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, নির্বাচন কমিশন চিঠি দিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে। মুখ্যসচিব তার উত্তর দিতেই পারেন। তৃণমূলনেত্রী বা ভবানীপুরের প্রার্থীকে কমিশনের চিঠির জবাব মুখ্যসচিব দিলে তা বেআইনি কাজ হতো।
মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। এ সম্পর্কে বাসুদেববাবুর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন আদালতে যাওয়া যায় না। ভোটের পরে যদি কেউ আদালতে যায়, তখন মুখ্যসচিব তার জবাব দেবেন।
কমিশনের কাছে আজ চিঠি-বিতর্কে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুনীল গুপ্তর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি।
নসীম জৈদীর কাছে বিজেপির প্রতিনিধিদল অভিযোগ জানিয়েছে, সুনীলবাবুই তৃণমূলনেত্রীকে শো-কজ নোটিস না পাঠিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে সেটি মুখ্যমন্ত্রী মমতার নামে পাঠিয়েছেন। ফলে অবিলম্বে সুনীলকে পদ থেকে সরানো হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy