Advertisement
০৪ মে ২০২৪

এক যাত্রায় কেন আলাদা ফল, ধন্দ লালবাজারেই

কিছু দিন আগেই ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান আর এস কাহালোঁকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। তখন লালবাজারের তরফে বলা হয়েছিল, নির্দিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়েছে ওই আইএএস অফিসারকে।

যৌথ মিছিল। বেকারদের কাজের দাবিতে পথে ডিওয়াইএফআই ও যুব কংগ্রেস।— নিজস্ব চিত্র

যৌথ মিছিল। বেকারদের কাজের দাবিতে পথে ডিওয়াইএফআই ও যুব কংগ্রেস।— নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৬ ০৪:২৪
Share: Save:

কিছু দিন আগেই ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান আর এস কাহালোঁকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। তখন লালবাজারের তরফে বলা হয়েছিল, নির্দিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়েছে ওই আইএএস অফিসারকে। পরের দিন আদালতের বাইরে কাহালোঁ জানিয়েছিলেন, শাসক দলের ঘনিষ্ঠ এক চলচ্চিত্র প্রযোজককে খুশি করতেই কলকাতা পুলিশ তাঁকে ফাঁসিয়েছে। এ বার সেই ঘুষেরই চক্করে পড়ে অভিযোগের কাঠগড়ায় কলকাতা পুলিশ। কিন্তু কাহালোঁকে ধরতে তারা যতটা সক্রিয় ছিল, নিজের বাহিনীর দুই কর্মীর ক্ষেত্রে কেন তার ছিটেফোঁটা দেখা গেল না, উল্টে জিজ্ঞাসাবাদের পরে সোমবার রাতেই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হল— সেই প্রশ্ন উঠেছে লালবাজারের অন্দরেই।

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন যে দু’জন বিজেপি অফিসে গিয়েছিলেন, তাঁরা কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের মিটিং সেকশনের কর্মী। তাঁদের নাম, শুভাশিস রায়চৌধুরী ও আমিনুর রহমান। প্রথম জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর ও দ্বিতীয় জন কনস্টেবল। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন শুভাশিসের ডিউটি ছিল না, আমিনুর অফিসে এসে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।

আর এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশকর্তাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, পুলিশকর্মীদের ডিউটি দেন তাঁদের ঊর্ধ্বতন অফিসারেরা। অধস্তনদের গতিবিধিও তাঁদেরই নজরে থাকে। গোয়েন্দাগিরি যাঁদের মূল কাজ, সেই বিভাগের এক জন পুলিশকর্মী নিজের মতো করে কোনও রাজনৈতিক দলের অফিসে চলে গেলেন এবং সঙ্গী হলেন ছুটিতে থাকা তাঁর এক সহকর্মী, কী ভাবে তা সম্ভব, সেই প্রশ্নই তুলেছেন লালবাজারের ওই কর্তারা। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার বলেছেন, ‘‘দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, তারা ব্যক্তিগত স্বার্থ পূরণ করতেই ওখানে গিয়েছিলেন। এঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিসি (‌সেন্ট্রাল)-কে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দু’জনকেই সাসপেন্ড করা হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চাকরি থেকে বরখাস্তও হতে পারেন।’’

কিন্তু কেন শুধু অভিযুক্তদের মুখের কথার উপরে ভিত্তি করেই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হল? কেন অভিযোগকারীর সঙ্গে কথা বলা হল না? লালবাজারের কর্তারা বলছেন, বিভাগীয় তদন্ত শুরু হলে অভিযোগকারীর বক্তব্য নথিভুক্ত করা হবে। এ দিন সন্ধেয় যুগ্ম কমিশনার (ইন্টেলিজেন্স) পল্লবকান্তি ঘোষ, ডিসি (‌সেন্ট্রাল) অখিলেশ চতুর্বেদী এবং জোড়াসাঁকো থানার ওসি অমিত রক্ষিতের সঙ্গে বৈঠক করেন পুলিশ কমিশনার। সেখানেই আমিনুরের বক্তব্য সমেত একটি প্রাথমিক রিপোর্ট সিপি-র কাছে জমা দেন পল্লববাবুরা। সূত্রের খবর, জিজ্ঞাসাবাদে আমিনুর জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ি মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বেনাদহ গ্রামে। তাঁর এক আত্মীয় গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত। সে-ই আমিনুরকে বলে, সীমান্তে কড়াকড়ির জন্য ব্যবসা লাটে উঠেছে। আমিনুর তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, শাসক দলের কাকে ধরলে সুরাহা মিলবে। ওই আত্মীয় জানান, তৃণমূল নয়, বিজেপিই করতে পারবে। তখন আমিনুর রাহুল সিংহের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

পুলিশকর্তাদের একাংশ বলছেন, শুভাশিসবাবুর কাছে আমিনুর সে কথা পাড়তে তিনি জানান, তাঁর বাড়ি দক্ষিণ কলকাতার পল্লিশ্রীতে। রাহুলেরও বাড়ি সেখানে। তিনি তাঁকে চেনেনও। সেই সুবাদেই শুভাশিসবাবু বিজেপি অফিসে গিয়েছিলেন। আজ, মঙ্গলবার ফের দু’জনকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। এ দিন জোড়াসাঁকো থানায় জিজ্ঞাসাবাদের পরে বেরনোর সময় শুভাশিসবাবু বলেন, ‘‘এটা চক্রান্ত। রাহুলবাবুরা এর ফল ভোটেই টের পাবেন।’’ আর আমিনুর বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত কারণেই স্যারের (রাহুল) কাছে গিয়েছিলাম। টাকা দিতে হলে পার্টি অফিসে যেতাম না। অন্য কোথাও যেতাম।’’

কলকাতা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার এ দিনের ঘটনা শুনে থ মেরে গিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘আমার কাছে এটা অবিশ্বাস্য। অভিযোগ সত্যি হলে ধরে নিতে হবে পুলিশের নৈতিকতা তলানিতে ঠেকেছে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, সম্প্রতি যে ভাবে নেতানেত্রীদের ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছে, তাতে পুলিশের অনেকেই ধরে নিয়েছেন, ঘুষের লেনদেনটাই এখন এ রাজ্যের রীতি। কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন গোয়েন্দাপ্রধান নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এঁদের কেউ পাঠিয়েছিল কি না, তা ভাল করে যাচাই করা উচিত। এটা সত্যি হলে এঁদের সঙ্গে এঁদের পিছনে থাকা লোকেদেরও একই শাস্তি হওয়া উচিত।’’ লালবাজারের কর্তারা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, স্টিং অপারেশনের কোনও পরিকল্পনা কলকাতা পুলিশের ছিল না।

বেনাদহ গ্রামের আমিনুরকে পড়শিরা চেনেন সবুজ নামে। তাঁর বাবা হাবিবুর রহমান রাজ্য পুলিশের কর্মী ছিলেন। দাদা কলকাতা পুলিশে কর্মরত। আদ্যন্ত পুলিশ পরিবারে ব্যতিক্রম আমিনুরের আর এক দাদা। অভিযোগ, এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত এই দাদাটিই গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত। বেলডাঙার এসআরএস কলেজে পড়ার সময়ে আমিনুর বাম ছাত্র সংগঠন করতেন। ২০০৯ সালে বামমোর্চার হয়ে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকও হয়েছিলেন। তবে পালাবদলের পরে এখন তৃণমূল। শুভাশিসবাবুও শাসক দলের লোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 negligence bribe case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE