Advertisement
০২ মে ২০২৪

শাসক দলের শাসানি সত্ত্বেও নীরব কমিশন

অবাধ ভোটের আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী। কিন্তু হল কোথায়? দ্বিতীয় দফার ভোট শেষে দেখা গেল কথা রাখতে পারেননি তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:২১
Share: Save:

অবাধ ভোটের আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী। কিন্তু হল কোথায়? দ্বিতীয় দফার ভোট শেষে দেখা গেল কথা রাখতে পারেননি তিনি।

বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও এলাকায় তাদের দেখা মিলল না। টহল দিতে দেখা গেল না সশস্ত্র পুলিশকেও। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কোথাও বিরোধী দলের এজেন্টকে বুথমুখো হতে দিল না শাসক দল, কোথাও প্রার্থীকে মারধর করা হল। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকেও রেয়াত করা হল না। পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও বর্ধমানের বিস্তীর্ণ অংশে শাসক দলের উৎপাত নিয়ে বিরোধীরা যখন দফায় দফায় অভিযোগ আছড়ে ফেললেন কমিশনে, তখন ‘অপারগতা’ জানিয়ে হাত তুলে দিলেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্ত।

কমিশনের ভূমিকায় তাই বাম, কংগ্রেস, বিজেপি— সকলেই অসন্তুষ্ট।
রাজনৈতিক স্তরে এই অভিযোগও উঠেছে যে, জৈদী অবাধ ভোটের কথা বললেও, তলে তলে রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে কেন্দ্রের শাসক দলের আঁতাঁতটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। তৃণমূলের শুভেন্দু অধিকারী, মুকুল রায়রা উল্টে বলেছেন, ‘‘সিপিএম-কংগ্রেস বুথে লোক দিতে পারছে না, তার দায়ও কি আমাদের নিতে হবে?’’

দ্বিতীয় দফার ভোটে বিক্ষিপ্ত সন্ত্রাস ও অশান্তির ছবিটা সোমবার সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা এড়াতে পারেনি। বাম-কংগ্রেস জোটের অভিযোগ, শাসক শিবির প্রতিটি কেন্দ্রে ৩০ থেকে ৪০টি বুথে নিজেদের হিসেব মতো ভোট করিয়েছে। তার জন্য সেক্টর অফিসার থেকে শুরু করে প্রিসাইডিং অফিসারদের আগেই ‘ম্যানেজ’ করেছে। দু’দিন ধরে চিকেন-মাটনে রেখেছে আধাসেনা জওয়ানদের। জোটের এ-ও অভিযোগ, ঘাটাল, কেশিয়ারি ও দাঁতনে তাদের ১৩ জন পোলিং এজেন্টের খোঁজ নেই।

যদিও ভোটগ্রহণ শেষে সুনীল গুপ্ত বলেন, ‘‘বুথ দখলের ঘটনা ঘটেনি। ভোট প্রক্রিয়াও ব্যাহত হয়নি। কোনও বড় অভিযোগ আসেনি। ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগও নেই। ভুয়ো ভোটেরও খবর নেই। কমিশনে এ দিন ১,৮৭৮টি অভিযোগ জমা পড়েছিল। তার মধ্যে ১,৮১০টির নিষ্পত্তি হয়েছে।’’

ভোট পড়ার চূড়ান্ত হার অবশ্য এ দিন জানাতে পারেনি কমিশন। জানানো হয়েছে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুরে ভোট পড়েছে ৮৪.৭১%। বাঁকুড়ায় ৭৮.৮৭% এবং বর্ধমানে ৭৫.১২%। ২০১১ সালে এই ৩১টি আসনে গড়ে ভোট পড়েছিল ৮৩.৭২%। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে এই আসনগুলিতে গড় ভোট পড়ে ৮৩.৩৯%। কমিশনের এক কর্তার ধারণা, এ বার চূড়ান্ত ভোটের হার
গত লোকসভা ভোটকে ছাপিয়ে যাবে।

বিরোধীদের প্রশ্ন এখানেই। তাঁদের বক্তব্য, ভোটে ব্যাপক অশান্তি হল। বহু মানুষকে আগের রাতে হুমকি দিয়ে বুথে যেতে দেওয়া হল না। তবু এত ভোট পড়ল! এই দু’য়ের সহাবস্থান হয় কী ভাবে? তা হলে নিশ্চয়ই দ্বিতীয় দফাতেও বেশ কিছু ভূতের ভোট পড়েছে। জল মেশানোর প্রক্রিয়া রুখতে তার মানে ব্যর্থ জৈদী। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর মোতায়েন
ঠিকমতো না হওয়ায় অনিয়ম হয়েছে।
কেন্দ্রীয় বাহিনী এলাকায় ঘোরেনি। ফলে শাসক দলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানুষকে সাহস জোগাতেও পারেনি। এ দিন কমিশনের অফিসের সামনে দু’দফায় বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস সমর্থকেরা। কমিশন থেকে বেরিয়ে কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কমিশন রাজ্য প্রশাসনের উপরে ভরসা করছে। তা না করে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে তথ্য নিন।’’ এ দিন ভোট চলার সময়েই দিল্লিতে সিপিএম নেতারা দেখা করেন জৈদীর সঙ্গে। অভিযোগ করেন, ‘‘যাঁদের ওপর এত দিন ভরসা ছিল, কমিশনের সেই পর্যবেক্ষকরা ফোনই ধরছেন না। কেন্দ্রীয় বাহিনীও নিষ্ক্রিয় রয়েছে।’’

বিরোধীরা কি তবে হাল ছেড়ে দিচ্ছেন? তা কিন্তু নয়। কারণ, যে সব এলাকায় তাঁদের যৌথ শক্তি রয়েছে, সেখানে মানুষ ভোট দিতে পেরেছেন। সে কারণেই কোনও বুথে ফের ভোট নেওয়ার দাবি ওঠেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 election commission
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE