Advertisement
০২ মে ২০২৪

চাপ বাড়াতে নির্বাচন কমিশনের উপরেই অনাস্থা জানাল বিরোধীরা

ভূতের কেরামতি সকলেই দেখতে পাচ্ছেন। দেখতে পাচ্ছে না শুধু নির্বাচন কমিশন! দু’দফার ভোটের পর এই অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনেই অনাস্থা জানিয়ে দিল সিপিএম এবং কংগ্রেস। কেন্দ্রে শাসক দল হলেও একই ভাবে আজ কমিশনের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করল বিজেপি-ও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ১৯:২৩
Share: Save:

ভূতের কেরামতি সকলেই দেখতে পাচ্ছেন। দেখতে পাচ্ছে না শুধু নির্বাচন কমিশন!

দু’দফার ভোটের পর এই অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনেই অনাস্থা জানিয়ে দিল সিপিএম এবং কংগ্রেস। কেন্দ্রে শাসক দল হলেও একই ভাবে আজ কমিশনের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করল বিজেপি-ও। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী সরাসরি উপ-নির্বাচন কমিশনার ও রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের অপসারণ চেয়েছেন। সিপিএম নেতারা মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা আর কোনও বুথেই ভোটগ্রহণ চাইছে না। কারণ কমিশনের উপরে আর তাঁদের কোনও আস্থাই নেই। বিজেপি নেতারাও আজ নসীম জৈদীর কাছে প্রশ্ন তুলেছেন, ভোটগ্রহণ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কী ভাবে ভুতুড়ে ভোট পড়ছে। কী ধরনের নির্দেশ নিয়ে কমিশন কাজ করছে, নসীম জৈদীর কাছে সরাসরি সেই প্রশ্ন তুলেছেন সীতারাম ইয়েচুরি।

গতকাল দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগেই সিপিএম নেতারা জানিয়েছিলেন, তাঁরা বেশ কিছু বুথে পুনরায় ভোটগ্রহণ চাইবেন। কিন্তু আজ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদীর কাছে দেখা করে সীতারাম ইয়েচুরি, নীলোৎপল বসুরা জানিয়ে দেন, তাঁরা কোনও বুথেই পুনরায় ভোটগ্রহণ চাইছেন না। কারণ কমিশনের উপর তাঁদের আর কোনও আস্থা নেই। ইয়েচুরি বলেন, ‘‘চার মাস ধরে কেন্দ্রীয় বাহিনী বসিয়ে রেখে যদি নির্বাচন কমিশন কিছু করতে না পারে, তা হলে তিন দিনে আর কী করবে? কমিশনের উপর মানুষের আস্থা যদি পুরোপুরি ভেঙে যায়, তা হলে সেটা দেশের জন্যও বিপজ্জনক।’’

বস্তুত, আজ সকাল থেকেই মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বিরোধী দলগুলি দরবার করতে থাকে। সকলেরই নিশানায় ছিলেন উপ-নির্বাচন কমিশনার সন্দীপ সাক্সেনা ও রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুনীল গুপ্ত। গতকাল ভোটগ্রহণ শেষের পর সাক্সেনাই বলেছিলেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কারণ, কোথাও বুথের ভিতর কোনও গণ্ডগোল হয়নি। আজ বিরোধী দলগুলি প্রশ্ন তুলেছে, কমিশনের দায়িত্ব কি শুধু বুথের ভিতরেই সীমাবদ্ধ?

আজ সকালে জৈদীর কাছে প্রথম দরবার করে বিজেপি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের নেতৃত্বে ভূপেন্দ্র যাদব, পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহরা জৈদীর কাছে অভিযোগ করেন, কমিশনের বেশির ভাগ পর্যবেক্ষককে কেন্দ্রে দেখা যাচ্ছে না। যোগাযোগও করা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের তালিকা ত্রুটিপূর্ণ। কিছু ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষকদের টেলিফোন নম্বর ভুল। স্পর্শকাতর এলাকায় প্রতিশ্রুতিমাফিক ফ্ল্যাগমার্চ, টহলদারি হচ্ছে না। তৃণমূল কংগ্রেসের মদতে রাজ্য সরকার দুর্নীতি ও অপরাধের আশ্রয় নিচ্ছে। সংবাদমাধ্যমে তা সকলেই দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে জানিয়েও লাভ হচ্ছে না।

এর পর দুপুরে জৈদীর কাছে দরবার করেন সিপিএম নেতারা। ইয়েচুরি বলেন, ‘‘ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার বলছেন, ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কারণ বুথের ভিতর কিছু হয়নি। বুথের বাইরে কি কমিশনের কোনও দায়িত্ব নেই? তা হলে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে রুট মার্চ, টহলদারি করানো হচ্ছিল কেন?’’ কমিশনের বিরুদ্ধে কার্যত পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। ইয়েচুরি বলেন, কমিশন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। অথচ, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলছেন, সূর্যকান্ত মিশ্রকে হারাতে হবে। তা সত্ত্বেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এই পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তুলেই জৈদীকে চিঠি লিখে অধীর চৌধুরী দাবি তোলেন, সাক্সেনা ও সুনীল গুপ্তকে তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে।

সিপিএম, কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি, বিরোধী এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। রক্তাক্ত অবস্থাতেও তিনি ভিতরে কাজ করেছেন। মানুষ সাহস দেখাচ্ছে। অথচ কেন্দ্রীয় বাহিনী, পর্যবেক্ষকরা দায়িত্ব পালন করছেন না। ভোটের পরেই যারা হিংসা চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আগেই কমিশনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। কোথায় হিংসা হতে পারে, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। জৈদী প্রবল চাপের মুখে ইয়েচুরিদের জানান, সন্ধ্যায় ফের নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ তাঁদের অভিযোগ শুনবে।

সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বিজেপি নেতারা জৈদীর কাছে দাবি জানিয়েছেন, ভোটারদের মনে সাহস যোগাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মোতায়েন করতে হবে, ফ্ল্যাগ মার্চ করতে হবে। পর্যবেক্ষক ও মাইক্রো-অবজার্ভারদের সঙ্গে যাতে সহজে যোগাযোগ করা যায়, তা সুনিশ্চিত করতে হবে। এঁদের যোগাযোগের নম্বর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারি বা রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থা থেকেই একমাত্র প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার বাছতে হবে। বুথের মধ্যে যাতে কোনও পক্ষপাতদুষ্ট অফিসার না থাকেন, তা সুনিশ্চিত করতে নিরপেক্ষ এজেন্সিকে দিয়ে মাথা গোনার কাজ করতে হবে। অতীতের যাবতীয় অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Election Commission opposition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE