আগের রাতে এলাকায় বোমাবাজি হয়েছে। ওঁরা চুপ ছিলেন।
ভোট-লুঠেরারা হুমকি দিয়েছে। ওঁরা রা কাড়েননি।
শনিবার, ভোটের দিনে যখন পাড়ার সিপিএম সমর্থককে ভোট-লুঠেরারা চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, তখনও পুরুষেরা ভয়ে কাঁপছেন।
আচমকা ঘর থেকে খড় কাটার বঁটি নিয়ে তেড়ে এলেন বছর পঞ্চাশের মাবিয়া বেগম। রণমূর্তি ধরে তাঁর হুঙ্কার, ‘‘ভোট দেওয়া কে আটকাবি? সামনে আয়।’’ এমন প্রতিরোধ আশা করেনি ভোট-লুঠেরারা। সিপিএম সমর্থককে ফেলে রেখে পিঠটান দিল তারা। তার পরেই জেগে উঠল গোটা পাড়া। ঝাঁটা-লাঠি হাতে মাবিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে গেলেন আরও কয়েক জন গৃহবধূ। পুলিশ পৌঁছল। কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছল। খানাকুলের কর্তাপাড়ার বাসিন্দা মাবিয়া এ ভাবে প্রতিরোধ করে পাড়ার লোকেদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা তো করলেনই, ভয় কাটিয়ে ভোট দিলেন পাশের দু’টি পাড়ার লোকজনও।
গত কয়েক দফার ভোটে প্রতিরোধের যত ছবি সামনে এসেছে, অনেক ক্ষেত্রেই নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছে মহিলাদের। বর্ধমানের জামালপুরের দাসপুর গ্রামে বছর তিরিশের এক সাদামাঠা গৃহবধূ এক দল মহিলাকে সঙ্গে করে বাঁশ-লাঠি হাতে তেড়ে গিয়েছিলেন ভোট-লুঠেরাদের দিকে। সল্টলেকের খাসমহলে বুথের সামনে বেলচা-লাঠি-লঙ্কাগুঁড়ো নিয়ে পাহারা দিয়েছিলেন আদিবাসী মহিলারা। হালিশহরে এক শিশু এবং তাঁর মা প্রহৃত হয়েও পৌঁছে গিয়েছিলেন বুথে। ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন পাড়ার লোকদের। সেই তালিকাতেই শেষ সংযোজন খানাকুলের মাবিয়া।
এত সাহস কী ভাবে পেলেন মাবিয়া?
প্রৌঢ়ার অভিযোগ, দিন পনেরো ধরে পাড়ায় ঢুকে শাসাচ্ছিল তৃণমূলের ছেলেরা। রাত ১০টার পর ওরা মোটরবাইকে চেপে এসে কারও ঘরে ধাক্কা দিয়েছে, কাউকে জানালা থেকে হুমকি দিয়েছে। এমনকী মেয়েদের শ্লীলতাহানির ভয়ও দেখিয়েছে। শুক্রবার রাতে বোমাও ফাটানো হয়। এ দিন সকালে ভোট দিতে যাওয়ার পথে রাস্তায় ওদের ‘চাটা’ (যেখানে জড়ো হয়েছিল) থেকে পাড়ার কয়েক জনকে ভয় দেখিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলে। যাঁরা তার পরেও ভোট দিতে যায়, তাঁদের ঢিল মারা হয়। এ সব কারণে তাঁর রাগ জমছিল বলে জানিয়েছেন মাবিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘ওরা যখন পাড়ার ছেলে শেখ সানিরাজ বাদশাকে মারতে মারতে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল, আর স্থির থাকতে পারিনি।’’
কর্তাপাড়া এবং পাশের হাটপাড়া ও কুতুবচক এলাকা সিপিএম প্রভাবিত। মাঝে গায়েনপাড়া তৃণমূল প্রভাবিত। কর্তাপাড়ায় প্রায় ৭০টি পরিবারের বাস। এ দিন গ্রামে পৌঁছে দেখা যায়, ইতিউতি জটলা। সকলের মুখেই মাবিয়ার নাম।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, গায়েনপাড়ার তৃণমূলের ছেলেরাই ভোট-লুঠ করার জন্য নানা চেষ্টা চালাচ্ছিল। মাবিয়া তখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে। সকলকে সাহস জোগাচ্ছেন, ‘‘বুথে ভিড় কম আছে। যাঁদের ভোট বাকি, তাঁরা চলে যাও। তৃণমূলের চাটা থেকে বদমায়েশ ছেলেগুলো উধাও হয়ে গিয়েছে।’’
মাবিয়ার সঙ্গে প্রতিরোধে সামিল হয়েছিলেন রুকসানা বেগম, মন্তেসা খাতুন, সাবিনা বেগমরা। ভোট-লুঠেরাদের খেদিয়ে দিতে পেরে তাঁরা খুশি। তবে, কেউ কেউ আতঙ্কিত। তাঁরা জানালেন, ভোটের ফল প্রকাশের পরে ওই যুবকেরা ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, ভোট পরবর্তী অশান্তি ঠেকাতে সব রকম চেষ্টা চলবে। তৃণমূল হামলা-হুমকির অভিযোগ মানেনি।
খানাকুলের তৃণমূল নেতা শৈলেন সিংহের দাবি, ‘‘ওই এলাকায় আমাদের কেউ কোনও গোলমাল করেনি। সিপিএম নাটক করছে।’’
তবে, মাবিয়া প্রত্যয়ের সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, ফের গোলমাল হলে রুখবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy