Advertisement
০৬ মে ২০২৪

শহর জুড়ে সন্ত্রাসের আবহ এখনও বহাল

ভোটের ফল প্রকাশের পরে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল হাইকোর্ট। ৩০ এপ্রিল ভোট মেটার পরদিনই পাটুলি থানার বাঘা যতীন এলাকায় দুষ্কৃতী হামলা হয়। সেই ঘটনায় হাইকোর্টে যে মামলা দায়ের করা হয়েছিল, তার শুনানির সময়ে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, ‘‘এখনই এই অবস্থা, ভোটের ফল বেরোলে যে কী হবে!’’

ঘটনাস্থলে পুলিশ। (ইনসেটে) আক্রান্তদের এক জন। রবিবার, বাঘা যতীনের শহিদ কলোনিতে। — নিজস্ব চিত্র

ঘটনাস্থলে পুলিশ। (ইনসেটে) আক্রান্তদের এক জন। রবিবার, বাঘা যতীনের শহিদ কলোনিতে। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৬ ০২:১৫
Share: Save:

ভোটের ফল প্রকাশের পরে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল হাইকোর্ট। ৩০ এপ্রিল ভোট মেটার পরদিনই পাটুলি থানার বাঘা যতীন এলাকায় দুষ্কৃতী হামলা হয়। সেই ঘটনায় হাইকোর্টে যে মামলা দায়ের করা হয়েছিল, তার শুনানির সময়ে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, ‘‘এখনই এই অবস্থা, ভোটের ফল বেরোলে যে কী হবে!’’ বিচারপতির আশঙ্কাই যে সত্যি ছিল, তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। নির্বাচনের ফল বেরোনোর পরে থেকে শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক হামলার অভিযোগ উঠছে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এমনকী, তৃণমূলের নিজস্ব গোষ্ঠীর লড়াইতেও উত্তপ্ত হচ্ছে শহর। শনিবারও তেমনই বিভিন্ন ঘটনার অভিযোগ মেলে উত্তর, দক্ষিণ সর্বত্র। দক্ষিণে বাঘা যতীন, কসবা, যাদবপুরে সিপিএম সমর্থকদের বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে, তেমনই উত্তরে শ্যামপুকুর এলাকায় তৃণমূলেরই গোষ্ঠীর লড়াইয়ের অভিযোগ মেলে। সব মিলে ফল বেরোনোর পরে শহরের আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি অনেকটাই বেসামাল হয়ে গিয়েছে বলে নাগরিকদের মত। কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য বক্তব্য, দায় শুধু তৃণমূলের নয়। এ সব ঘটনার পিছনে বিরোধীদের উস্কানিও রয়েছে। তবে এমন ঘটনার খবর মিললে তা মোকাবিলায় পুলিশকে তৎপর হতে বলা হচ্ছে বলে জানান মেয়র।

রবিবার রাতে সন্তোষপুরে পল্লব পোদ্দার নামে এক সিপিএম কর্মীর বাড়িতে বোমা ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। তাঁর স্ত্রী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রচনা দাস জানান, বিকট শব্দ শুনে নীচে গিয়ে দেখেন, দেওয়ালে বোমা ছোড়া হয়েছে। হামলা হতে পারে এই আশঙ্কা ছিলই। অজ্ঞাতপরিচয় যুবকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকে হামলার অভিযোগ আসছিল পঞ্চসায়র থানার শহিদ স্মৃতি কলোনি থেকেও। এলাকাটি যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন। সেখানে তৃণমূলের মণীশ গুপ্তকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী। অভিযোগ, শনিবার রাতে তৃণমূল সমর্থকেরা শহিদ স্মৃতি কলোনিতে সিপিএম সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালায়। ৩০-৩৫টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুঠপাট করা হয়েছে। কিছু বাড়িতে বোতলে ভরে অ্যাসিডও ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ। জনা চল্লিশেক বাসিন্দাকে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে। সিপিএমের জোনাল সম্পাদক সুব্রত দাশগুপ্তর অভিযোগ, ‘‘পুলিশকে জানিয়েও লাভ হচ্ছে না। উল্টে আক্রান্তদেরই পাকড়াও করা হচ্ছে।’’

অভিযোগ পেয়ে রবিবার ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী-সহ সিপিএমের অন্য নেতারা। তাঁরা জানান, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা রাজ্যপালের দ্বারস্থ হবেন। তৃণমূল অবশ্য এই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

শনিবার রাতেই বাঘা যতীন এলাকায় এক সিপিএম নেতার বাড়িতে বোমাবাজির অভিযোগও উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বাঘা যতীন স্টেশন রোডের বাসিন্দা, সিপিএম লোকাল কমিটির সদস্য গণেশ মজুমদারের অভিযোগ, ‘‘গভীর রাতে হঠাৎ বিকট আওয়াজ। দেখি, জানলার কাচ ভেঙে বিছানার কাছে ছিটকে পড়ল।’’

বাড়িতে গণেশবাবু ছাড়াও তাঁর স্ত্রী মিঠু মজুমদারও ছিলেন। রবিবার তিনি বলেন, ‘‘বোমা ফেটে ভাগ্যিস বিছানায় এসে পড়েনি। একটুর জন্য প্রাণে বাঁচলাম।’’ তিনি জানান, দোতলার বারান্দায় গিয়ে দেখেন, বাইক নিয়ে মুখে কাপড় বাঁধা ৪-৫ জন দুষ্কৃতী বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। গণেশবাবুর অভিযোগ, ‘‘দুষ্কৃতীরা যাওয়ার সময়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।’’ গণেশবাবু জানান, রাতেই পাটুলি থানায় ফোন করে সাহায্য চান। যদিও অভিযোগ, রাতে পুলিশ আসেনি। পাটুলি থানার তরফে অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। রবিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন গণেশবাবু। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর বাপ্পা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘শনিবার রাতের ঘটনায় কে জড়িত জানি না। আমি চাই, এই ঘটনায় পূর্ণ তদন্ত হোক। রাজনীতির রং না দেখে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হোক।’’

হামলার অভিযোগ উঠেছে কসবার পরাজিত সিপিএম প্রার্থী শতরূপ ঘোষের বাড়িতেও। শতরূপের অভিযোগ, শনিবার রাতে ১০-১২ জনের একটি দল মোটরবাইক নিয়ে তাঁর বাড়ির সামনে এসে গেট ভাঙচুর করে। বারান্দায় ইট মারা হয়। সঙ্গে অকথ্য গালিগালাজও চলে বলে অভিযোগ।

গত শুক্রবার ও শনিবার লাগাতার হামলার অভিযোগ এসেছে উত্তর কলকাতা থেকে। মূলত শ্যামপুকুর থানার দর্জিপাড়া, গ্রে স্ট্রিট-সহ বিভিন্ন পাড়ায় ওই হামলাগুলিতে অভিযোগের তির তৃণমূলেরই বিভিন্ন গোষ্ঠীর দিকে।

হামলার অভিযোগ আসে পানিহাটি থেকেও। অভিযোগ, সেখানকার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে শনিবার রাতে সিপিএমের কার্যালয় ভাঙচুর হয়। স্থানীয় সিপিএম নেতাদের অভিযোগ, মোটরবাইক চেপে আসা কয়েক জন যুবক মোট তিনটি দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। এ নিয়ে খড়দহ থানায় অভিযোগ জমা পড়েছে।

এই সব অভিযোগ সম্পর্কে মেয়র শোভনবাবুর মন্তব্য, ‘‘যা ঘটছে তার জন্য এক তরফা তৃণমূলকে দোষ দেওয়া ঠিক নয়। ভোট মেটার পর ৫ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় সিপিএম হুমকি দিচ্ছিল, ১৯ তারিখ এলে দেখে নেবে বলে। সেই সব প্ররোচনার ফলেই হয়তো কিছু কিছু এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে।’’ তবে মেয়রের আশ্বাস, ‘‘যেখান থেকেই এমন কোনও ঘটনার খবর আসছে, আমরা পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলছি। শহরে শান্তি বজায় রাখার সম্পূর্ণ চেষ্টা আমাদের রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

political clash assembl election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE