Advertisement
E-Paper

ফাঁকা মাঠ দেখে গেলেন রাজনাথ

ঠিক ২৩ মাস আগের কথা। বাঁকুড়া শহরের তামলিবাঁধ স্টেডিয়ামেই বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকারের হয়ে প্রচারে এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই সভায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছিল। অবস্থা এমনই হয়েছিল যে কয়েক হাজার মানুষ ভিড়ের ঠেলায় স্টেডিয়ামে ঢুকতেই পারেনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৩০
রোদ বাঁচিয়ে। বাঁকুড়ার তামলিবাঁধ স্টেডিয়ামের সভায়। —নিজস্ব চিত্র

রোদ বাঁচিয়ে। বাঁকুড়ার তামলিবাঁধ স্টেডিয়ামের সভায়। —নিজস্ব চিত্র

ঠিক ২৩ মাস আগের কথা। বাঁকুড়া শহরের তামলিবাঁধ স্টেডিয়ামেই বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকারের হয়ে প্রচারে এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই সভায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছিল। অবস্থা এমনই হয়েছিল যে কয়েক হাজার মানুষ ভিড়ের ঠেলায় স্টেডিয়ামে ঢুকতেই পারেনি।

সেই সুভাষবাবু এ বার বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থী। সেই একই মাঠে এ বার বুধবার সভা করে গেলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। কিন্তু মাঠ ভরা তো দূরের কথা, সভাস্থল এতটাই ফাঁকা ফাঁকা যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সভা দেখতে আসা লোকজনকে এক জোট হয়ে বসার আবেদন জানাতে হল খোদ রাজনাথ-কেই!

বুধবার দুপুরে বাঁকুড়ায় তামলিবাঁধ স্টেডিয়ামে নির্বাচনী সভা করেন রাজনাথ। সেই সভায় মেরেকেটে হাজার দেড়েক লোক হয় এ দিন। সভা শুরুর আগে স্টেডিয়ামে ঢোকার দরজায় দাঁড়িয়ে জুনবেদিয়ার বিজেপি কর্মী সুকুমার মল্লিক, সাধন মানরা সভার ভিড় নিয়েই আলোচনা করছিলেন। তাঁরা বলেন, “আমরা মোদীজির সভাতে এসেছিলাম। ভিড় দেখে সে দিন জনসমুদ্র বলে মনে হয়েছিল।”

কিন্তু এ দিন পুরো উল্টো চিত্র! কেন এমন হল? সভাস্থলে থাকা বাঁকুড়ার মগরা এলাকার কিছু কর্মীর কথায়, “নেতারা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বেই ব্যস্ত। তাহলে সংগঠন গড়ে উঠবে কী ভাবে?’’ পালটা প্রশ্ন তাঁদের।

ঘটনা হল, গত লোকসভা ভোটে এই বাঁকুড়া বিধানসভায় সিপিএমের থেকেও বেশি ভোট পেয়ে তৃণমূলের পরে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল বিজেপি। তখন থেকেই এই বিধানসভা কেন্দ্র দখলের স্বপ্নও দেখেছিলেন দলের কর্মীরা। লোকসভা ভোটের পর পর রাজনৈতিক মহলের অনেকেই বিজেপিকে প্রধান বিরোধী দল বলেও উল্লেখ করেছিলেন। তবে সময় যত এগিয়েছে সংগঠনের শক্তি ততই কমে গিয়েছে। নেতারাও জনসংযোগ হারিয়েছেন।

গত জানুয়ারিতেই রাজ্য সভাপতির পদ থেকে রাহুল সিংহকে সরিয়ে দিলীপ ঘোষকে দায়িত্ব দেয় বিজেপি। তারপর থেকেই বিভিন্ন জেলাতেও সভাপতি পরিবর্তন হয়। তা নিয়ে রাহুলবাবুর গোষ্ঠীর সঙ্গে বিবাদ বাঁধে দিলীপবাবুর গোষ্ঠির কর্মীদের। ওই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রকোপ পড়ে বাঁকুড়া জেলাতেও। তারপর থেকে বিজেপিকে তেমন কোনও বড় কর্মসূচি নিতে দেখাই যায়নি।

এ দিন সভা দেখতে আসা বিজেপির কর্মীদের অনেকেই বলেছেন, “লোকসভা ভোটের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভাষণে ব্যাপক আক্রমণ করেছিলেন মোদী। কিন্তু সম্প্রতি সারদা তদন্ত হালকা হয়ে পড়া, নারদ কাণ্ডে কেন্দ্রের ঢিলেঢালা অবস্থানের জেরে সাধারণ মানুষ ভেবেছেন তলে তলে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের আঁতাঁত হয়েছে। এ সবের জন্যে বিজেপির যেটুকু হাওয়া ছিল তাও স্তিমিত হয়ে গিয়েছে।’’

সভাস্থল ভরল না কেন সেই প্রশ্নে ভিন্ন মন্তব্য শোনা গিয়েছে বিজেপির রাজ্য নেতা তথা বাঁকুড়া কেন্দ্রের প্রার্থী সুভাষ সরকার ও জেলা সভাপতি পার্থসারথী কুণ্ডুর গলাতেও। সুভাষবাবু বলেন, “আমাদের বহু গাড়িকে শহরে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। তাই কর্মীরা অনেকেই সভাস্থলে আসতে পারেননি।” তাঁর অবশ্য দাবি, “সভাস্থলে কর্মীরা না আসতে পারলেও যেখানেই প্রচারে যাচ্ছি মানুষের অভ্যর্থনা পাচ্ছি। তাই এ বারও আমরা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেব ভোটে।” আর পার্থসারথীবাবু বলেন, “ভর দুপুরে সভা হওয়াতেই সে ভাবে মানুষ আসেননি। তাছাড়া এই সভা শুধুই বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের সভা ছিল। তাই লোকসভা কেন্দ্রের সঙ্গে একে তুলনা করা ঠিক নয়।”

সভাস্থল ফাঁকা দেখে রাজনাথ বলেন, “মাঠের গ্যালারিতে যে সব যুবক বসে রয়েছেন তাঁরা মঞ্চের সামনে চলে আসুন।” বোঝার অপেক্ষা রাখে না, সভাস্থল কিছুটা জমাটি দেখাতেই রাজনাথবাবুর এই আবেদন। যদিও সেই ডাকেও সকল কর্মীরা উঠে যাননি। তবে নিজের বক্তব্যে রাজনাথবাবু যখনই তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করেছেন, তখনই উল্লসিত হতে দেখা গিয়েছে সভা দেখতে আসা মানুষজনকে। রাজনাথের আগেই বক্তব্য রাখেন সুভাষবাবু। সেখানে তিনি বাঁকুড়ার জলসঙ্কট থেকে হাসপাতালের দুরাবস্থার কথা তুলে ধরেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, “সুভাষবাবুর বক্তব্য মন দিয়ে শুনলাম। উনিই বিধানসভায় যাওয়ার যোগ্য লোক। উন্নয়নের স্বার্থে এ বার বিজেপি সরকার গড়ুন।”

Rajnath Singh BJP Assembly Election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy