Advertisement
E-Paper

মাঠ পেরিয়ে রাস্তায় ভিড় জোটের সভায়

প্রথম দফার ভোট দেখাল, ভূতের নেত্য কমেছে। বিরোধী শিবির পর্যন্ত বলছে, কমিশনের দাওয়াইয়ে লোকসভা ভোটের তুলনায় দুধে জল মিশেছে কম। ফল নিয়েও তাই আশাবাদী বাম-কংগ্রেস জোট। আশাবাদী, বাঁকুড়ায় মঙ্গলবার দুই শীর্ষ সিপিএম নেতার সভায় হাজির হওয়া ভিড়ের বহর দেখেও। সোনামুখীর ছোট্ট স্কুল মাঠটায় এ দিন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের সভায় তিল ধারণেরও জায়গা ছিল না। মাঠ ছাপিয়ে গিয়েছে মানুষের ভিড়ে।

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৩৭
ওন্দার মাঠে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর সভার ভিড় দেখে অনেকেই তাজ্জব।<br> ভিড় ছিল সোনামুখীতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের সভাতেও। ছবি: অভিজিৎ সিংহ ও শুভ্র মিত্র

ওন্দার মাঠে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর সভার ভিড় দেখে অনেকেই তাজ্জব।<br> ভিড় ছিল সোনামুখীতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের সভাতেও। ছবি: অভিজিৎ সিংহ ও শুভ্র মিত্র

প্রথম দফার ভোট দেখাল, ভূতের নেত্য কমেছে। বিরোধী শিবির পর্যন্ত বলছে, কমিশনের দাওয়াইয়ে লোকসভা ভোটের তুলনায় দুধে জল মিশেছে কম। ফল নিয়েও তাই আশাবাদী বাম-কংগ্রেস জোট।

আশাবাদী, বাঁকুড়ায় মঙ্গলবার দুই শীর্ষ সিপিএম নেতার সভায় হাজির হওয়া ভিড়ের বহর দেখেও। সোনামুখীর ছোট্ট স্কুল মাঠটায় এ দিন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের সভায় তিল ধারণেরও জায়গা ছিল না। মাঠ ছাপিয়ে গিয়েছে মানুষের ভিড়ে। পথচলতি অনেক মানুষও দাঁড়িয়ে পড়ে বক্তৃতা শুনেছেন। আবার ওন্দার মাঠে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু যখন বক্তৃতা দিচ্ছেন, তখনও তাঁর সামনে উপচে পড়া ভিড়। দু’টি সভাতেই জোটের পতাকা দেখা গিয়েছে।

সভায় ভিড়ের প্রতিফলন সব সময়ে নির্বাচনের ফলে পড়ে না— এই আপ্তবাক্য মাথায় রেখেও অবশ্য স্বস্তি পাচ্ছে না শাসকদল। জেলা তৃণমূলের এক নেতা একান্তে বলেই দিলেন, ‘‘মাঠের ভিড় যে সব সময় ভোটে আসে না, তা কে না জানে। কিন্তু, এ বার জোটের বাজার তো! ভিড় বাড়লে চিন্তা একটু হবেই।’’ বস্তুত, রাঢ়বঙ্গে জোটের সভায় যে সম্প্রতি ভিড় বাড়ছে, তা নজরে এসেছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বেরও। তাঁরা নিজেদের মতো করে এর কারণও অনুসন্ধান করছেন।

ভিড় দেখে দুই সিপিএম নেতাই এ দিন চালিয়ে ব্যাট করলেন। টি-২০ ম্যাচের স্লগ ওভারের ধাঁচেই। সোনামুখী বিজে হাইস্কুলের মাঠে এ দিন চোখা চোখা শব্দে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধেছেন সূর্যকান্তবাবু। কখনও তৃণমূলকে তুলনা করেছেন ‘হাতির সঙ্গে’, কখনও বা তুলেছেন সোনামুখীতে শাসকদলের দ্বন্দ্বের কথা। একের একের পর এক মিছিল ঢুকতে শুরু করে মাঠে। শেষ অবধি মাঠে আর জায়গা ধরেনি। রাস্তা, এমনকী আশপাশের বাড়ির ছাদেও দেখা যায় ভিড়। সূর্যবাবু নিজের বক্তৃতার শুরুতেই সোমবার জঙ্গলমহলে ভোটের প্রসঙ্গ তুলে দাবি করেন, এই ভোট জোটের পক্ষেই যাবে। তিনি বলেন, ‘‘অরণ্যে পথ খুঁজে পাচ্ছেন না তৃণমূল নেত্রী। নোটিস দিতে হবে, হারানো-প্রাপ্তি নিরুদ্দেশ। দ্বিতীয় দফার নির্বাচন আসছে। ঘনঘন দৌড়চ্ছেন। কিন্তু, মানুষ যে তাঁকে ছেড়ে যাচ্ছে, তা তিনি বুঝতে পেরেছেন।’’ এর পরেই তিনি টেনে আনেন সোনামুখীতে হাতির উপদ্রবের প্রসঙ্গ। সূর্যবাবু বলেন, ‘‘বছর খানেক এখানে এসেছিলাম। তখন চার জন মানুষকে মেরেছিল হাতি। এখানকার অনেক গ্রামের মানুষকে হাতির হামলা থেকে বাঁচতে হুলা পার্টি তৈরি করতে দেখেছি। মানুষের জোটও সেই হুলা পার্টির মতো। সেই জোট দেখে তৃণমূল ভয় পেয়ে গিয়েছে।’’

এই কথা শুনে হাততালিতে ফেটে পড়েছে জনতা। মমতা-সহ তৃণমূল নেতাদের হেলিকপ্টারে চেপে প্রচারকেও তীব্র কটাক্ষ করেছেন সিপিএমের এই পলিটব্যুরো সদস্য। তাঁর দাবি, ৩০০ কোটি টাকা তৃণমূল এ বার প্রচারের পিছনে খরচ করেছে। সারদা থেকে নারদা—একের পর এক কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা ফেঁসে যাচ্ছেন জানিয়ে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এত টাকা কোথা থেকে এল? কোথায় গেল লুঠ হওয়া টাকা?’’ তাঁর বক্তব্য, মমতা ক্ষমতায় এসে বামপন্থীদের পাঁচ বছর চুপ করে থাকতে বলেছিলেন। তাঁরা এত দিন চুপ করেই ছিলেন। কিন্তু, এখন আর চুপ থাকা যাবে না। সোনামুখীর পরে বড়জোড়াতেও সভা করেন সূর্যবাবু। সেখানেও ভিড় যথেষ্ট হয়েছিল।

প্রায় একই ছবি এ দিন দেখা গিয়েছে ওন্দা হাইস্কুলের মাঠে। বিকেল ৪টেয় সেখানে সভা ছিল বিমান বসুর। সকাল থেকেই গোটা ওন্দা বাজার চত্বর ছেয়ে যায় জোটের পতাকায়। সভা শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগে থেকেই ওন্দার বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট-বড় মিছিল করে জোট সমর্থকেরা ভিড় করতে শুরু করেন মাঠে। জোট সমর্থকদের মিছিলে কোনওটিতে ছিল ঢাকের বাদ্যি। কোনওটিতে ধামসা-মাদলের সঙ্গে নাচ। এমন মিছিল দেখে ওন্দা বাজার চত্বরে শোরগোল পড়ে যায়। চায়ের দোকান থেকে পানগুমটি— সর্বত্রই শুরু হয়ে যায় তৃণমূলের এই দাপটের বাজারেও জোটের এমন মিছিল নিয়ে চর্চা। একটা সময় ওন্দা বাজারের কার্যত দখল চলে যায় জোটের কর্মী-সমর্থকদের হাতে। সিপিএম-ফরওয়ার্ড ব্লক-কংগ্রেসের পতাকায় ছেয়ে যায় গোটা মাঠ। দেখতে দেখতে মাঠ উপচে বাইরে রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে ভিড়।

সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, কম করে হাজার দশেক লোক হয়েছিল এ দিনের সভায়। পুলিশের অবশ্য দাবি, তিন হাজার। তৃণমূলের হিসেব বলছে, হাজার পাঁচেক। এলাকার ক’দিন আগে এই মাঠের উল্টো দিকের মাঠেই সভা করেন তৃণমূল নেত্রী। ওন্দা বাজারের একাধিক দোকানির কথায়, ‘‘মমতার সভায় অনেকেই এসেছিল স্রেফ হেলিকপ্টার দেখতে। কপ্টার নামার পরে ভিড় কিছুটা পাতলাও হয়ে যায়। এ দিনের ভিড় কিন্তু অন্য রকম।’’

বিমানবাবুর বক্তৃতা শেষ হওয়া অবধি সেই ভিড় ছিল। যখনই তৃণমূলের সরকারে কটাক্ষ করেছেন বিমানবাবু, হাততালি দিয়ে সমর্থন জানিয়েছে জনতা। বিমানবাবু বলেন, ‘‘বদলা নয়, বদলের ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু ক্ষমতায় এসে প্রথমে বাম কর্মীদের খুন করা শুরু করল। তার পর শুরু হল কংগ্রেস কর্মীদের খুন। এখন তৃণমূল নিজেদের কর্মীকেই খুন করছে। এর থেকেই স্পষ্ট, রাজ্যে কতটা নৈরাজ্য চলছে।’’ এই প্রসঙ্গে বিমানবাবু তুলেছেন তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে খুন হওয়া হাওড়ার বালি অঞ্চলের নেতা তপন দত্তের কথাও।

শিল্পায়ন নিয়েও মমতাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তিনি। বলেন, ‘‘ওরা দাবি করছে, ৬৮ লক্ষ বেকারকে চাকরি দিয়েছে। সেই হিসাবে রাজ্যের প্রতিটি বুথে ৮০ জনের চাকরি পাওয়ার কথা। আপনাদের বুথে ৮০টি করে ছেলে কি চাকরি পেয়েছে?’’ সমস্বরে জবাব আসে ‘না-না-না’। বিমানবাবুর কটাক্ষ, মিথ্যা বলার কোনও প্রতিযোগিতা হলে এই সরকার তাতে প্রথম হবে।

জোটের সভায় শোনা গিয়েছে ইনকিলাব জিন্দাবাদ ও বন্দে মাতরম স্লোগান। মঞ্চে ছিলেন কংগ্রেস নেতা পবন সেলামপুরিয়া। এ দিন বিকেলে বিষ্ণুপুর শহরের কালীতলার মাঠে সভা করার কথা ছিল বিমানবাবুর। কিন্তু, জরুরি কাজে কলকাতা ফিরে যান। বদলে যান সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা তালড্যাংরার প্রার্থী অমিয় পাত্র। এখানেও বেশ ভিড় হয়েছিল।

assembly election 2016 Sonamukhi Onda CPM campaigns
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy