Advertisement
E-Paper

আসনগুলো দাও বাবা, লাড্ডুতে কামনা শাসকের

হাওয়া এখন বেশ এলোমেলো! কখন কী ঘটে যায়, কিচ্ছু বলা যায় না। এই তো সময় ঠাকুরে-জ্যোতিষে ভরসা বেড়ে যাওয়ার! ঠিক তা-ই হয়েছে দিদি ও তাঁর দলের! নারদের ধাক্কা তো ছিলই। ভোটের ঠিক আগে নির্মীয়মাণ বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে পড়েছে হুড়মুড় করে!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৬ ০৩:৫৩
পুজো সেরে তৃণমূল ভবন থেকে বেরোচ্ছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ

পুজো সেরে তৃণমূল ভবন থেকে বেরোচ্ছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ

হাওয়া এখন বেশ এলোমেলো! কখন কী ঘটে যায়, কিচ্ছু বলা যায় না। এই তো সময় ঠাকুরে-জ্যোতিষে ভরসা বেড়ে যাওয়ার!

ঠিক তা-ই হয়েছে দিদি ও তাঁর দলের!

নারদের ধাক্কা তো ছিলই। ভোটের ঠিক আগে নির্মীয়মাণ বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে পড়েছে হুড়মুড় করে! বিরোধী দুই প্রধান শক্তি একজোট হয়েছে। দলের অন্দরে নানা শিবিরের অন্তর্ঘাতের চোরাস্রোতের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ভূত তাড়িয়ে মানুষ আবার নিজের ভোট নিজেই দিয়েছেন। ভোটযন্ত্রের সিল ভাঙার আগে উৎকণ্ঠার আর দোষ কী! ভোট গুনতে যত দীর্ঘ প্রতীক্ষা, শাসকের ঘরে গুমোট তত বেশি।

জ্যোতিষী থেকে পুরীর প্রধান পুরোহিত, এমনিতে নানা পরামর্শ আকছার ঝরে পড়তেই থাকে তৃণমূলে। চাপ একটু হাল্কা করতে এ বার সিদ্ধিদাতার আগাম আরাধনা সেরে নেওয়া হল তপসিয়ার তৃণমূল ভবনে। সিদ্ধিদাতার বন্দনা ভবনে হতো গণেশ চতুর্থীতে। কিন্তু ভোটের মরসুমে দেবতাকে ফুল দেওয়ার লগ্ন ছেড়ে দেওয়া যায় নাকি? তৃণমূল ভবনে কোনও কর্মসূচিই যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ ছাড়া হয় না, বলাই বাহুল্য। ধুমধাম করে এ দিনের গণেশ পুজোর নেপথ্যেও তাঁরই নির্দেশ। দলের এক রসিক নেতা যুক্তি দিচ্ছেন, ‘‘আমরা তো কমিউনিস্ট নই! আমরা যাগযজ্ঞ, পুজো-আচ্চা করি।’’ কিন্তু অক্ষয় তৃতীয়ায় মূলত ব্যবসায়ীরা যে গণেশ পুজো করেন, সেটাই এ বার তৃণমূলের দফতরে কেন! দলের এক প্রবীণ নেতার মন্তব্য, ‘‘ঠাকুর-দেবতার স্মরণ নিতে হয়, যখন নিজের উপর আস্থা হারায়! আস্থা ফিরে পেতেই পুজো-আচ্চা করতে হয় আর কী!’’

ভোট মিটে যেতে স্বয়ং তৃণমূল নেত্রীও এখন কালীঘাট-বন্দি। দলীয় একটি সূত্রের ইঙ্গিত, জ্যোতিষীর পরামর্শেই দলনেত্রী হুটহাট বাইরে বেরোচ্ছেন না। তবে শোনা যাচ্ছে, দু-এক দিনের মধ্যে কোনও জাগ্রত তীর্থ স্থানে পুজো দিতে বা সমুদ্রোপকূলে বিশ্রামে যেতে পারেন! চূড়ান্ত কিছু এ দিন রাত পর্যন্ত ঠিক হয়নি। যদিও তৃণমূলের অন্দরে চর্চা চলছে, নিরালায় বসে মাথা ঠান্ডা করতে চাইছেন দিদি।

তৃণমূল ভবনে সাধারণত পুজো-আচ্চার ভার সামলান প্রবীণ শ্রমিক নেতা, বিধানসভায় মুখ্য সরকারি সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। রাসবিহারী কেন্দ্রের এই প্রার্থী এ দিনও দলের হয়ে দায়িত্ব সামলেছেন। তাঁর অবশ্য দাবি, ভোট বলে নয়, সমাজের মঙ্গল কামনাতেই তাঁদের গণেশ-আরাধনা! তাঁর কথায়, ‘‘পুরোহিত মানে পুরের হিত কামনা করেন যিনি। আমরা পুজো করি মানুষের মঙ্গল কামনায়। এর মধ্যে উৎকন্ঠা, ভোট বৈতরণী পারের গল্প খোঁজা ঠিক নয়!’’ তাঁদের দল ও দলনেত্রী যে প্রকৃতই ধর্মনিরপেক্ষ, তার ব্যাখ্যা দিতেও ভোলেননি শোভনদেব।

পুজোর সময়ে এ দিন অবশ্য সাধারণ কর্মী ছাড়া তৃণমূলের তেমন কোনও নেতাকে ভবনে দেখা যায়নি। রবীন্দ্রসদন প্রাঙ্গনে রবিবার ২৫ বৈশাখের সরকারি অনুষ্ঠান চলাকালীনই মমতা দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে গণেশ পুজো আয়োজনের নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন। তখনই কি শোভনদেবকে পুরোহিতের দায়িত্ব নিতেও বলেছিলেন? কারণ, ওই অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গেই দলনেত্রীকে আলোচনা করতে দেখা গিয়েছিল। শোভনদেব খোলসা করতে চাননি। তবে দলের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, বাবা গণেশের প্রসাদে সরকার ফিরলে প্রবীণ সৈনিকের এ বার একটা হিল্লে হবে! তার জন্য দাপিয়ে জয়টা দরকার খুব। প্রসাদি লাড্ডু মাথায় ঠেকিয়ে এক কর্মী সাধে কি আর বিড়বিড় করছিলেন, ‘‘বাবা, দু’শো আসন যেন পাই!’’

Sovandeb Chattopadhyay assembly election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy