Advertisement
E-Paper

হোঁচট খেল শাসক, জোট নিশ্চিন্ত

সাতসকালে বেরিয়ে ভোট দিলেন! ভোট দিয়ে বেরিয়ে প্রথম ভোটার এক তরুণীর সঙ্গে নিজস্বীর আবদার মেটালেন। বিকেল গড়ানোর আগেই ৩৩টি ওয়ার্ড চক্কর দিয়ে ফেললেন। দলের লোকের সঙ্গে যতটা, কংগ্রেসের কাউন্সিলর, নেতা, নীচুতলার কর্মীদের সঙ্গে ততটাই স্বচ্ছন্দ। তৃণমূলের এক নেত্রীকেও হালকা রসিকতার সুরে বলতে সোনা গেল, ‘কী ভোটটা টিকঠাক হচ্ছে তো!’’ সেই নেত্রী তখন পালাতে পারলে যেন বাঁচেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৬ ২০:০৯

পারেনও বটে অশোক ভট্টাচার্য!

সাতসকালে বেরিয়ে ভোট দিলেন! ভোট দিয়ে বেরিয়ে প্রথম ভোটার এক তরুণীর সঙ্গে নিজস্বীর আবদার মেটালেন। বিকেল গড়ানোর আগেই ৩৩টি ওয়ার্ড চক্কর দিয়ে ফেললেন। দলের লোকের সঙ্গে যতটা, কংগ্রেসের কাউন্সিলর, নেতা, নীচুতলার কর্মীদের সঙ্গে ততটাই স্বচ্ছন্দ। তৃণমূলের এক নেত্রীকেও হালকা রসিকতার সুরে বলতে সোনা গেল, ‘কী ভোটটা টিকঠাক হচ্ছে তো!’’ সেই নেত্রী তখন পালাতে পারলে যেন বাঁচেন। কোনও মতে, ‘‘হ্যাঁ, অশোকদা, হচ্ছে-হচ্ছে’ বলে একজনের স্কুটারের পিছনে বসে চলে গেলেন। মুচকি হেসে অশোকবাবু তখন সঙ্গী সৌরভ দাসের ফোন নিয়ে ভাইচুং ভুটিয়ার বিরুদ্ধে কমিশনের পর্যবেক্ষকের কাছে অভিযোগ জানালেন। ভাইচুং কোথায় বুথে বসে আছেন তা বলে হইচই বাধালেন। দলের এক কর্মীই তখন মৃদুস্বরে হাসিমুখে বললেন, ‘‘পারেনও বটে অশোকদা!’’

বিপক্ষের ফরওয়ার্ড ভাইচুং কিন্তু শুরুটা করেছিলেন, সিপিএমের দুর্গ বলে পরিচিত ৪৫, ৪৬ নম্বরের মত ওয়ার্ড থেকে। ৬ থেকে ২০, ৪, ৬ থেকে ২৫, ৩০ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বাসিন্দাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভোট দেওয়ার কথাও বললেন। দুই দফায় অশোকবাবুর মুখোমুখিও হয়ে যান তিনি। টিকিয়াপাড়ায় কথা বলেননি। তবে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। মুখে হাসি ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টাটা বরাবরই ছিল ভাইচুংয়ের। তবে কান পাতলে শোনা যাচ্ছিল অন্য গল্প। তৃণমূলের অন্দরের খবর, ভোটে দলের নেতা-কর্মীরা কতটা খাটছেন তা নিয়ে সংশয় হওয়ায় খোদ দলনেত্রীকে ফোন করে অভিযোগও করেছেন ফুটবল-তারকা। ততক্ষণে তো বিকেল গড়িয়ে সূর্য প্রায় ডুবুডবু। ভাইচুং ঘনিষ্ঠ কিছু নেতা বললেন, ‘‘ফুটবল মাঠের বড় খেলোয়াড় হতে পারেন। কিন্তু, রাজনীতির ময়দানে সতীর্থদের চটালে কোন শট ইনস্যুইং করে গোলে ঢুকবে, আর কোন কিক আইটস্যুইং হয়ে ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে যাবে তা বুঝতে এখনও সময় লাগবে। রাজনীতির তেকাঠি চেনার ওনার এখনও বাকি আছে।’’

আরও পড়ুন-আমাকে নজরবন্দি করবে কে? আস্ফালন বোলপুরে ‘বন্দি’ কেষ্টর

তবে রাজনীতির মাঠের ঘাস যাঁর বহুদিনের চেনা, এ দিন হোঁচট খেতে হয়েছে সেই গৌতম দেবকে। বিদায়ী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে একটি বুথে ঢুকতে গিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বাধা পেয়েছেন। প্রার্থী পরিচয় দিলেও তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, সারা দিনে চরকিপাক খেলেও নিজের দলের নেতা-নেত্রীদের কাছ থেকেই অভিযোগ পেয়েছেন। দলের কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, ‘‘খোদ মন্ত্রীর বিধানসভা এলাকায় বুথ জ্যাম করেছে বিরোধীরা।’’ আঁতকে উঠে বলেছেন, ‘‘ভাবা যায়!’’ যা শোনার পরে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী দিলীপ সিংহের সে কী হাসি! খুশি হয়ে বলেছেন, ‘‘তৃণমূল অভিযোগ করলেই হল না। মানুষ রায় দিলে তা মাথা পেতে নিতে হবে।’’ তবে সামান্য বাধায় হাল ছাড়তে রাজি নন পুরনো খেলোয়াড় গৌতম। তাঁর যুক্তি, ‘‘ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির মতো মরুভূমি এলাকায় ফুল ফুটিয়েছি। সকলের সুখে-দুঃখে থেকেছি। খুচখাচ গোলমালের চেষ্টা হলেও হালে পানি কেউ পাওয়ার কথা নয়। তা ছাড়া এলাকার মানুষ সিপিএমকে হাড়ে হাড়ে চেনে। কংগ্রেসকেও চেনেন। দু’জনের জোট কেউ মানতে পারেননি।’’

তবে কংগ্রেসের অনেকে মানছেন, জোট-ভাগ্য শঙ্কর মালাকারের বরাবরই ভাল। ২০১১ সালে জিতেছিলেন তৃণমূলের হাত ধরে। এ বার বামেদের হাত ধরার পরে মাটিগাড়া-নকশালবাড়িতে শঙ্করবাবু যেন দাপিয়ে বেড়িয়েছেন দিনভর। শিলিগুড়িতে ন’টা নাগাদ ভোট দিয়েছেন। বাড়ি ফিরে স্নান, পুজো, খাওয়া সেরে ১০টা নাগাদ নিজের কেন্দ্রে বের হন। গাড়িতে মাটিগাড়া-বাগডোগরা-নকশালবাড়ির বিভিন্ন এলাকায় হাজিরা দিয়েই দুপুর দুটোর মধ্যে বাগডোগরার একটি নামী হোটেলের বাতানুকূল ঘরে যান শঙ্করবাবু। দুপুরের খাওয়াও সারেন সেদ্ধ সব্জি, পেয়ারা, ফলের রস ও পাকা পেঁপে দিয়ে। তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী অলক মিত্র বলেন, ‘‘খাওয়া থেকে ভোট, সবেতেই সাবধানী আমাদের প্রার্থী।’’ সাবধানের মার নেই। তাই একটু বিশ্রাম নিয়েই ফের ধূলো উড়িয়ে গাড়ি নিয়ে ছুটলেন নেপাল সীমান্তের দিকে।

assembly election 2016 ashok bhattacharya siliguri bhaichung bhutia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy