Advertisement
E-Paper

নিরাপত্তার ফস্কা গেরোয় যেন হাঁফ ছাড়ছে হাওড়া

শনিবার রাত ১০টা। উত্তর হাওড়ার মুরগিহাটা মোড়ের কাছে অতুল্যকৃষ্ণ ঘোষ লেন। সামনেই ১৩১ নম্বর বুথ। চায়ের দোকানে গল্প করছিলেন চার-পাঁচ জন যুবক। আচমকাই ১০-১২ জনের এক বাইকবাহিনী এসে সামনে দাঁড়াল। কথা বলার সুযোগ না দিয়েই শুরু হল মারধর। সঙ্গে শাসানি— ‘ভোটের দিন এ তল্লাটে যেন না দেখি।’

দেবাশিস দাস

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৪৩

চিত্র ১: শনিবার রাত ১০টা। উত্তর হাওড়ার মুরগিহাটা মোড়ের কাছে অতুল্যকৃষ্ণ ঘোষ লেন। সামনেই ১৩১ নম্বর বুথ। চায়ের দোকানে গল্প করছিলেন চার-পাঁচ জন যুবক। আচমকাই ১০-১২ জনের এক বাইকবাহিনী এসে সামনে দাঁড়াল। কথা বলার সুযোগ না দিয়েই শুরু হল মারধর। সঙ্গে শাসানি— ‘ভোটের দিন এ তল্লাটে যেন না দেখি।’

চিত্র ২: মধ্য হাওড়ার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের দয়াল ব্যানার্জি লেন। দলীয় পতাকা লাগাচ্ছিলেন সিপিএম কর্মীরা। আচমকা ১০-১২ জনের বাহিনী লাঠি-বাঁশ হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আহত হলেন শুভাশিস ঘোষ নামে এক কর্মী।

চিত্র ৩: দক্ষিণ হাওড়ার সত্যেন বোস রোড। শনিবার রাতে জোটের এজেন্ট সোমনাথ রায়ের বাড়িতে এসে শাসিয়ে গেল তৃণমূল— ‘‘বুথে গিয়ে বসলে পাড়ায় থাকতে দেওয়া হবে না।’’

রাত পোহালেই ভোট। ২৪ ঘণ্টা আগের এই ছবিতেই স্পষ্ট হাওড়ার ভোটের চেহারা। অভিযোগ, পুলিশের তরফে এই পরিস্থিতি পাল্টে দেওয়ার কোনও উদ্যোগ রবিবার চোখে পড়েনি। উদ্যোগ দেখা যায়নি নির্বাচন কমিশনের পক্ষেও। এ দিন ঠা ঠা রোদে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছোট-বড় রাস্তায় রুট মার্চ করলেও মোটরবাইক আরোহীর হেলমেট পরীক্ষা ছাড়া তেমন কিছু হয়নি। শনিবার সন্ধে থেকে প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারায় যে কোনও লাভ হয়নি, বালি থেকে বট্যানিক্যাল গার্ডেন ঘুরেই বোঝা গিয়েছে। অন্য রবিবারের মতোই বাজারে ভিড়, রাস্তার মোড়ে-মোড়ে জটলা, চায়ের দোকানে ভোট-চর্চার চেনা ছবি বহাল ছিল এ দিনও। তার ভিতরেই চলেছে ভোট নিয়ে শাসক দলের তর্জন-গর্জনের অভিযোগ।

বিরোধীদের অভিযোগ, শাসকের দাপট শুরু হয়েছে ১৪৪ ধারা জারির পর থেকে। প্রধান বিরোধী দল বাম গণতান্ত্রিক জোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত দক্ষিণ হাওড়ার সিপিএম নেতা সমীর সাহা, উত্তর হাওড়ার জোটপ্রার্থী কংগ্রেসের সন্তোষ পাঠক বা বিজেপির জেলা সভাপতি দেবাঞ্জল চট্টোপাধ্যায়— সকলেরই দাবি, ভোটের দু’দিন আগে থেকে শহর জুড়ে এই শাসানি-মারধর নিয়ে পুলিশ বা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি। সমীরবাবু বলেন,‘‘দক্ষিণ হাওড়ায় তৃণমূল লিচুবাগান, গোয়াবেড়িয়া, শালিমার, সত্যেন বোস রোড ইত্যাদি জায়গায় এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাসাচ্ছে।’’ সন্তোষবাবুরও অভিযোগ, ‘‘সুভাষ নন্দী নামে আমাদের এজেন্টের বাড়ি গিয়ে তৃণমূল বলে এসেছে, বুথে গেলে তাঁর পরিবারকে গুলি করে দেবে।’’ তাঁর দাবি, পুলিশ ও কমিশনকে জানিয়েও ফল হয়নি। ওই রাতেই ফের ভয় দেখানো হয়েছে সুমন ঘোষ ও চণ্ডী পাল নামে দুই এজেন্টকে। রবিবার অভিযোগ জানান বালি কেন্দ্রের জোটপ্রার্থী সিপিএম-এর অঞ্জন বেরাও। তাঁর অভিযোগ, ভোট লুঠ, ভোটারদের ভয় দেখানো ও হামলার উদ্দেশে তৃণমূল ছক কষেই হুগলি, কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে দুষ্কৃতীদের জড়ো করছে। রবিবার বালিতে তৃণমূলের বিভিন্ন নেতার বাড়িতে ও কয়েকটি লজে কলকাতা থেকে আসা দুষ্কৃতীরা উঠেছে। অঞ্জনবাবুর ক্ষোভ, ‘‘এই তথ্য প্রশাসনকে জানালেও পুলিশ বা কেন্দ্রীয় বাহিনীর তল্লাশি অভিযান হচ্ছে না।’’

জোটের অভিযোগ, বেশি শাসানি ও ভোটারদের ভয় দেখানো হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ হাওড়ায়। উত্তর হাওড়ার ১, ২, ৩, ৫, ৬, ৭ নম্বর ওয়ার্ড-সহ ভোটবাগান, ব্যানার্জিবাগান, লালবিহারী বোস লেন, পালেরবাগানে ভোটারদের বাড়ি গিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। বিরোধীদের অভিযোগ, কমিশনের নির্দেশ সত্ত্বেও শনিবার সন্ধে থেকে ভোটকর্মীদের সঙ্গেই বুথে ঢুকে পড়ছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। অভিযোগ, উত্তর হাওড়ার হিন্দু স্কুল, নীহার স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিল্পাশ্রম ইত্যাদি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে খাবার দিতে দেখা গিয়েছে।

এ দিকে, ভোটের দিন সাধারণত হুগলি নদীতে ফেরি পরিষেবা বন্ধ থাকলেও এ বার তা চালু থাকায় উঠছে প্রশ্ন। বিরোধীদের অভিযোগ, কলকাতা বা অন্য জায়গা থেকে বহিরাগতদের সহজে আনতে পরিকল্পনা মাফিক এমন হয়েছে। হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি লিমিটেডের চেয়ারম্যান তথা উত্তর হাওড়ায় বিদায়ী বিধায়ক অশোক ঘোষ বলেন, ‘‘ভোটের জন্য আমরা ফেরি পরিষেবা বন্ধ করতে পারি না। পরিবহণ সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি পরিষেবা চালু রাখতে বলেছেন।’’ হাওড়ার জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস বলেন, ‘‘নদীপথে এ বার পাহারায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। বহিরাগতেরা ঢুকলে তল্লাশি হবে। সমস্যা হবে না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বিরোধীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’

অন্য দিকে, বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি (শহর) অরূপ রায় বলেন, ‘‘বিরোধীরা হারার আগেই হেরে বসে আছে। মারধর দূরের কথা, হুমকি দেওয়ারও প্রশ্নই ওঠে না।’’

অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মাঝেই এ দিন বিকেল থেকে বুথে যেতে শুরু করেছেন ভোটকর্মীরা। আগেই পৌঁছে গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘শহরে মোট ১৩২২টি বুথের প্রতিটিকেই কমিশন অতি স্পর্শকাতর বলেছে। তাই শহরের বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে।’’ কমিশনার জানান, শহরে মোট ৭৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে। কার্যত সকাল থেকেই গোটা শহর চলে যাবে তাদের আওতায়।

Howrah Security assemblty election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy