Advertisement
১০ জুন ২০২৪

শেষ দিনে ভিড় টানলেন রাহুল

জনসভা তো নয়, যেন মেলা বসেছিল। একদিকে বিপুল জনসমাগম। অন্য দিকে সরবৎ, আইসক্রিম, খাবারের দোকানের স্টল। বহু বছর বাদে শনিবার এই মেজাজের একটি নির্বাচনী জনসভা দেখল শ্যামপুর। হাওড়ায় ভোট কাল। গত ১৫ দিন ধরে একের পর এক জেলার নানা প্রান্তে হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জনসভা।

ঠা ঠা রোদে ছাতা নিয়ে রাহুল গাঁধীর বক্তব্য শুনতে হাজির জনতা। শনিবার দুপুরে শ্যামপুরে ছবিটি তুলেছেন সুব্রত জানা।

ঠা ঠা রোদে ছাতা নিয়ে রাহুল গাঁধীর বক্তব্য শুনতে হাজির জনতা। শনিবার দুপুরে শ্যামপুরে ছবিটি তুলেছেন সুব্রত জানা।

নুরুল আবসার
শ্যামপুর শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৬ ০২:১৫
Share: Save:

জনসভা তো নয়, যেন মেলা বসেছিল। একদিকে বিপুল জনসমাগম। অন্য দিকে সরবৎ, আইসক্রিম, খাবারের দোকানের স্টল। বহু বছর বাদে শনিবার এই মেজাজের একটি নির্বাচনী জনসভা দেখল শ্যামপুর। হাওড়ায় ভোট কাল। গত ১৫ দিন ধরে একের পর এক জেলার নানা প্রান্তে হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জনসভা। কোথাও এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কোথাও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, কোথাও আবার এসেছেন সূর্যকান্ত মিশ্র। কিন্তু ধারে ও ভারে সবাইকে টেক্কা দিয়েছে শ্যামপুর। প্রচারের শেষ দিনে এখানে দলীয় প্রার্থী অমিতাভ চক্রবর্তীর সমর্থনে বক্তৃতা দিতে এসেছিলেন রাহুল গাঁধী। সেই সভায় জনসমাগম দেখে কার্যত অবাক হয়ে গিয়েছেন খোদ কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের স্থানীয় নেতৃত্ব। একান্ত আলোচনায় নেতারা জানিয়েছেন, হাজার পনেরোর জমায়েত হলেই তাঁরা বর্তে যেতেন। কিন্ত ভিড় তাঁদের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে।

শ্যামপুরকে বলা হয় জেলায় তৃণমূলের অন্যতম দূর্গ। সেখানে রাহুল গাঁধীর জনসভায় এহেন জমায়েত শুধু জোট সমর্থকদের মধ্যে নয়, উৎসাহ সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও। হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় নির্বাচন উপলক্ষে মমতা চারটি জনসভা করেছেন। বড়গাছিয়া, জয়পুর, পাঁচলা এবং সাঁকরাইল। প্রতিটি সভাতে ভাল ভিড় হয়। ডোমজুড়ে সূর্যকান্ত মিশ্রের জনসভাতেও ভিড় হয় ভালই। উলুবেড়িয়া, উদয়নারায়ণপুর এবং জয়পুরের সেহাগড়িতে জনসভা করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। ভিড় টানেন তিনিও। তাঁর সেহাগড়ির সভার ভিড় তো মমতার সভাকে টেক্কা দেওয়ার মতো অবস্থায় চলে যায়। তবে মমতা, অধীর এবং সূর্যকান্ত এই তিনজনের মধ্যে অবশ্যই ভিড় টানার নিরিখে এগিয়ে ছিলেন মমতা। পুলিশের হিসেব বলছে, গড়ে তাঁর এক একটি জনসভায় ১২ হাজার করে লোক ছিলেন। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, সংখ্যাটি ১২ নয় হবে অন্তত ২০ হাজার।

রাহুল গাঁধী কিন্তু সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন। শুধু পুলিশের হিসেব বলছে, জনসভায় মানুষ এসেছিলেন কম করে ২৫ হাজার। কংগ্রেস এবং বাম নেতাদের দাবি, এই জমায়েতে অন্তত ৪০ হাজার মানুষ এসেছিলেন। রাহুলের আসার কথা ছিল বেলা ১১টায়। শ্যামপুর-গড়চুমুক রোডের ধারে ধানজমিতে মঞ্চ বাঁধা হয়েছিল। শুধুমাত্র মহিলাদের বসার জন্য কিছুটা ঢাকা জায়গা ছিল। বাকি পুরোটা ছিল খোলা মাঠ। সকাল ৯টা থেকেই মাঠে লোক আসতে শুরু করে। মাঠের চারিদিকে সরবৎ, আইসক্রিম এবং খাবারের স্টল বসে যায়। সারা শরীরে রঙ দিয়ে হাত এবং কাস্তে হাতুড়ি তারা চিহ্ন এঁকে হাজির হন যুবকেরা। হেলিকপ্টারে করে রাহুল আসেন বেলা দুপুর ১২টা নাগাদ। ততক্ষণে মাঠ ভর্তি হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, শ্যামপুর-গড়চুমুক রাস্তার উপরে হাজার হাজার মানুষ বসে থাকেন। উল্টোদিকে গ্রামের ইটপাতা রাস্তার উপরেও ছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। এদিন ছিল প্রচণ্ড গরম। তা উপেক্ষা করেও জনসভায় মহিলাদেরও উপস্থিতি ছিল দেখার মতো। জনতা অপেক্ষা করেন রাহুল গাঁধীর জন্য। মঞ্চে তিনি ছিলেন মেরেকেটে আধঘণ্টা। বক্তৃতা দেন মিনিট দশেক। তাঁর বক্তৃতার সময়ে ভালই নীরবতা দেখা যায়। বক্তৃতা বাদ দিয়ে মঞ্চ থেকে রাহুল যতবার জনতার দিকে হাত নাড়েন মাঠ যেন গর্জে ওঠে। বক্তৃতা শেষে তিনি সামনের ব্যারিকেডের দিকে চলে আসেন। তাঁর সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।

তাঁর হেলিকপ্টারে ওঠা ইস্তক কোনও মানুষ মাঠ ছাড়েননি। শ্যামপুর শহরের এক পানের দোকানি বলেন, ‘‘এই প্রথম নির্বাচন উপলক্ষে শ্যামপুরে এত মানুষের সমাগম হল। আসলে রাহুল গাঁধীর মতো বড় মাপের নেতা তো এর আগে আসেননি।’’ কংগ্রেস প্রার্থী অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই ভিড় আসলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের অনাস্থা। আমি গ্রামেও প্রচারে গিয়ে দেখেছি তাঁরা তৃণমূলের হাত থেকে মুক্তি চাইছেন।’’ তবে এই ভিড়কে গুরুত্ব দিতে নারাজ হাওড়া গ্রামীণ জেলা তৃণমূল সভাপতি পুলক রায় বলেন, ‘‘যত মানুষ রাহুল গাঁধীকে দেখতে গিয়েছিলেন ঠিক তত ভোটেই কংগ্রেস প্রার্থী তৃণমূলের কাছে হারবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Assembly Election 2016 Rahul Gandhi congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE