Advertisement
১৯ মে ২০২৪
সব রাজনৈতিক দলের কাছেই পুলিশের আবেদন

হিংসা এড়াতে এখনই নয় মিছিল

ভোট গণনার পর কী হবে, তা নিয়ে আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়েছে অনেকখানি। বিশেষত বিরোধী বাম-কংগ্রেস জোটের নেতারা ভয় পাচ্ছেন ফলাফল যাই হোক না কেন, আক্রমণ হতেই পারে তাঁদের উপর। ভোটের দ্বিতীয় দফা ভোটেই তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল যে হুমকি দিয়েছিলেন, তা যে কোনও সময়ে কার্যকর হতে পারে। ভোটের সময়ও সবটাই যে শান্তিপূর্ণভাবে মিটিছে তেমন নয়। তার পরেও রাজ্যের বিভিন্ন অংশে অশান্তি ছড়িয়েছে। আর এর প্রেক্ষিতেই গণনার দিন নিরপত্তার বেষ্টনী টানটান রাখতে চাইছে প্রশাসন।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৬ ০১:৩৭
Share: Save:

ভোট গণনার পর কী হবে, তা নিয়ে আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়েছে অনেকখানি। বিশেষত বিরোধী বাম-কংগ্রেস জোটের নেতারা ভয় পাচ্ছেন ফলাফল যাই হোক না কেন, আক্রমণ হতেই পারে তাঁদের উপর। ভোটের দ্বিতীয় দফা ভোটেই তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল যে হুমকি দিয়েছিলেন, তা যে কোনও সময়ে কার্যকর হতে পারে। ভোটের সময়ও সবটাই যে শান্তিপূর্ণভাবে মিটিছে তেমন নয়। তার পরেও রাজ্যের বিভিন্ন অংশে অশান্তি ছড়িয়েছে। আর এর প্রেক্ষিতেই গণনার দিন নিরপত্তার বেষ্টনী টানটান রাখতে চাইছে প্রশাসন।

পূর্ব মেদিনীপুরের প্রতিটি থানা ও বিধানসভা স্তরে সর্বদলীয় বৈঠক করেছে জেলা পুলিশ। মঙ্গলবার সব থানার ওসি, সার্কেল ইনস্পেক্টর ও মহকুমা পুলিশ আধিকারিকদের নিয়েও একপ্রস্ত বৈঠক হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘উত্তেজনা প্রবণ এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে। দফতরের গোয়েন্দা বাহিনীও থাকছে নজরদারি দলে। রাজনৈতিক দলগুলির কাছেও শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। বিজয় মিছিল না-করার জন্য আবেদন করা হয়েছে।’’

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ১৬ টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে অশান্তি ছড়াতে পারে খেজুরি, নন্দীগ্রাম, মারিশদা, পটাশপুর, ভুপতিনগর, হলদিয়া, সুতাহাটা, ময়না ও পাঁশকুড়া-সহ জেলার ১৬-১৭ টি এলাকায়। সে গুলিকে চিহ্নিত করে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। টহলদারির জন্য জেলার প্রতিটি থানায় দু’টি করে মোবাইল ভ্যান রয়েছে। যে সব এলাকায় গাড়ি চলাচলের অসুবিধা, সেখানে দ্রুত বাহিনী পৌঁছে দিতে থানা প্রতি দু’টি করে মোটর বাইকও রাখা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী ছাড়াও জেলা পুলিশ লাইনে কমব্যাট বাহিনী থাকছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা থেকেই বিভিন্ন এলাকায় টহল দেবে পুলিশ বাহিনী। জেলায় এখনও পাঁচ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। তবে তা জেলার চারটি ভোটগণনা কেন্দ্রের স্ট্রং রুমের কাছে মোতায়েন। গণনার পর গোলামালের ঘটনা সামাল দিতে তাদের কাজে লাগানো হবে কিনা তার স্পষ্ট নির্দেশিকা আসেনি বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা মেনে কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করা হবে।’’

এ দিকে ফল প্রকাশের পর পশ্চিম মেদিনীপুরের নিরাপত্তা নিয়েই চিন্তিত জেলা প্রশাসন। বুধবার পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর ঘাটালে মহকুমার তিনটি থানার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই দিন থেকেই টহল শুরু চন্দ্রকোনার কৃষ্ণপুর, বসনছড়া, কুঁয়াপুর, বান্দিপুর-সহ মোট ২০টি স্পর্শকাতর এলাকায়। কৃষ্ণপুরে পুলিশ ক্যাম্পও বসানো হয়েছে। ঘাটালের কুঠিঘাট, গঙ্গাপ্রসাদ, মারিচ্যা, সুলতানপুর-সহ বিভিন্ন এলাকাতেও বুধবার থেকেই পুলিশি টহলে জোর দেওয়া হয়েছে।

আজ, বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর কলেজে (উপরে) ও খড়্গপুর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে (নীচে) হবে ভোট গণনা। বুধবার দুই জায়গাতেই কড়া নজরদারি। — নিজস্ব চিত্র।

ভোটগণনার খবর সংগ্রহের জন্য এবার গণনা কেন্দ্র লাগোয়া মিডিয়া সেল-এ ফোন, ফ্যাক্স, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও ওয়াইফাই পরিষেবা বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে এমনই ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন।

জঙ্গলমহলেও ভোটগণনাকে ঘিরে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার আয়োজন। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ মহিলা বিভাগের ভবনে চারটি বিধানসভার (ঝাড়গ্রাম, গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রাম ও বিনপুর) ভোট গণনা হবে। ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকছে। গণনাকেন্দ্রের ভিতরে থাকবে চার প্ল্যাটুন বিএসএফ। বাইরে দু’টি স্তরে থাকবে রাজ্য ও জেলা সশস্ত্র পুলিশের ঘেরাটোপ। গণনাকেন্দ্রের একশো মিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি থাকছে। ভোটগণনা চলাকালীন অরণ্যশহর ঝাড়গ্রামের রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কেবলমাত্র ঝাড়গ্রাম শহরের নিরাপত্তায় ৬০০ পুলিশ কর্মীকে নামানো হচ্ছে। এ ছাড়া চারটি বিধানসভার বিভিন্ন স্পর্শকাতর এলাকায় টহল দেবে পুলিশের মোবাইল ভ্যান, হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড। কয়েকটি এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ের সামনে পুলিশি নজরদারি চালানো হবে। ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “নির্বাচন কমিশনের গাইড লাইন অনুযায়ী, গণনাকেন্দ্র-সহ ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সর্বত্র কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকছে।”

এ দিকে রাজনৈতিক দলের নেতারাও জানিয়েছেন তাঁরা নাকি সমর্থকদের উল্লসিত হতে নিষেধ করেছেন। সংযত থাকার পরামর্শই দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘বিজয় মিছিল নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের তরফে এখনও নির্দেশ আসেনি। নির্দেশ মেনে চলা হবে।’’

গণনা পরবর্তী হিংসা নিয়ে উদ্বিগ্ন সিপিএম জেলা নেতৃত্ব। খেজুরি, নন্দীগ্রাম, পটাশপুর, ভগবানপুরের মতো এলাকায় দলের স্থানীয় নেতা, কর্মী, সমর্থকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি। তিনি বলেন, ‘‘ভোট গণনার পর গোলামাল রুখতে পুলিশ-প্রশাসনকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে আমাদের উপর আক্রমণ হয়েছে। ফল প্রকাশের পর যাতে কোন অশান্তি না-হয় সে জন্য আমাদের দলের কর্মী-সমর্থকদেরও সংযত থাকতে বলেছি।’’ প্রায় একই সুরে সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক অশোক দিন্দা বলেন, ‘‘আমাদের দলের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ভোটে জয়লাভ করলেও বিজয় মিছিল করা হবে না।’’ বিজেপি’র জেলা সভাপতি মলয় সিংহ বলেন, ‘‘উত্তেজনাপ্রবণ এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হোক।’’

তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি চূড়ামণি মাহাতো অবশ্য বলেন, “জয়ের পরে গোটা ঝাড়গ্রাম আবিরে সবুজ হয়ে যাবে। শাসক হিসাবে আমাদের দায়িত্ব ফের বেড়ে যাচ্ছে। কমিশনের নির্দেশ মতো এলাকায় শান্তি রাখাতে কর্মীদের সংযত থাকতে বলেছি।” সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ সরকার বলেন, “মানুষের উপর আমাদের আস্থা রয়েছে। ভোটের ফল যা হবে, সেটা আমরা মেনে নেব। কোনও প্ররোচনায় পা না-দিয়ে কর্মীদের সংযত থাকতে বলা হয়েছে।”

ঘাটালের তৃণমূল নেতা শঙ্কর দোলইও নেতা-কর্মীদের সংযত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকী এলাকায় কোনও অশান্তির খবর এলেই তা কড়া হাতে মোকাবিলা করা হবে বলেও তাঁর দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 BJP CPM TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE