Advertisement
২০ মে ২০২৪

পাঁচ বছরে এত বাড়ল সম্পত্তি! তাও মমতা চুপ কোন রহস্যে?

কারও সম্পত্তি পাঁচ বছরে বেড়ে ২৫ লাখ টাকার মতো। কারও বেড়েছে ৭৫ লাখ, কারও সওয়া কোটি, কারও প্রায় ২ কোটি। এমনও কেউ কেউ আছেন যাঁর সম্পত্তি পাঁচ বছরে বেড়ে গিয়েছে ৪৩ কোটি। এটুকু শুনলে অবশ্য কিছুই বোঝা যায় না।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৬ ১৫:৪৭
Share: Save:

কারও সম্পত্তি পাঁচ বছরে বেড়ে ২৫ লাখ টাকার মতো। কারও বেড়েছে ৭৫ লাখ, কারও সওয়া কোটি, কারও প্রায় ২ কোটি। এমনও কেউ কেউ আছেন যাঁর সম্পত্তি পাঁচ বছরে বেড়ে গিয়েছে ৪৩ কোটি।

এটুকু শুনলে অবশ্য কিছুই বোঝা যায় না। তৃণমূলের এই নেতাদের সম্পত্তি বৃদ্ধির ছবিটা আরও স্পষ্ট হবে পাঁচ বছর আগে তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ কেমন ছিল তা জানা গেলে। বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসুর বয়স এখন ৫৩। পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ৪৮ বছর বয়স পর্যন্ত সুজিত বসু এবং তাঁর স্ত্রীয়ের মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৫৮ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। দীর্ঘ ৪৮ বছরের সেই উপার্জনকে গোহারা হারিয়ে দিল গত পাঁচটা বছর। মনোনয়ন পত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় সুজিত বসু যে হিসেব দিয়েছেন, সেই হিসেবই বলছে, এখন তাঁর পারিবারিক সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি ৩২ লক্ষ টাকারও বেশি। অর্থাৎ ৪৮ বছর ধরে ৫৮ লক্ষ টাকার কাছাকাছি, আর তার পরের পাঁচ বছরে এক ধাক্কায় আরও প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা।

শুধু সুজিত বসু নন, তাঁর কেন্দ্রের লাগোয়া দু’টি কেন্দ্রের বিধায়ক সব্যসায়ী দত্ত এবং পূর্ণেন্দু বসুর সম্পত্তি বৃদ্ধির হারটাও অনেকটা একই রকম। প্রথম জন ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত যে পরিমাণ সম্পত্তি করতে পেরেছিলেন, গত পাঁচ বছরে তার চার গুণ বাড়িয়েছেন। দ্বিতীয় জন ৫৯ বছর বয়স পর্যন্ত যা উপার্জন করেছিলেন, গত পাঁচ বছরে তার প্রায় সাত গুণ উপার্জন করেছেন। তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সম্পত্তির বাড়বাড়ন্তের হিসেবটাও অনেকটা এই রকম। একই গোত্রে বেলেঘাটার পরেশ পাল, বেহালা পূর্বের শোভন চট্টোপাধ্যায়। তবে সবাইকে হারিয়ে দিয়েছেন কসবার বিধায়ক তথা রাজ্যের দমকল মন্ত্রী জাভেদ খান। পাঁচ বছর আগে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় জাভেদ জানিয়েছিলেন, তাঁর এবং স্ত্রীয়ের মোট স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য ৪৮ লক্ষ টাকার কিছু বেশি। গত পাঁচ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৪ কোটি টাকায়। প্রায় ১০০ গুণ বৃদ্ধি।

নেতাদের সম্পত্তির বাড়বাড়ন্তের আঁচ পেতে দেখুন এই গ্যালারি:

পাঁচ বছরে ১০০ গুণ বাড়ল সম্পত্তি! আশ্চর্য প্রদীপ না সিন্ডিকেট?

তৃণমূলের এই নেতাদের নাম বার বার সিন্ডিকেট কাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়েছে। তাঁদের মদতে এবং তাঁদের নেতৃত্বে কলকাতায় এবং লাগোয়া শহরতলির বিস্তীর্ণ এলাকায় রমরমিয়ে সিন্ডিকেটের কারবার আর জুলুম চলে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। এ নিয়ে অনেক বিতর্কে জড়াতে হয়েছে তৃণমূলকে। বার বার অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে সরকারকে। খুনোখুনি পর্যন্ত হয়েছে। তাও সিন্ডিকেট বন্ধ হয়নি। সরকারও সিন্ডিকেট বন্ধ করতে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। অভিযুক্ত নেতাদের অধিকাংশই সিন্ডিকেটের সঙ্গে তাঁদের যোগ স্বীকার করেন না। সব্যসাচী দত্ত অবশ্য স্টিং অপারেশনে ধরা পড়ে যাওয়ার পর খোলাখুলি স্বীকার করেছেন যে তিনি সিন্ডিকেট চালান।

যে সিন্ডিকেটের জন্য সরকারের এত অস্বস্তি, সেই সিন্ডিকেটকে চলতে দেওয়া হয় কেন? বিরোধীরা বলছেন, সিন্ডিকেট-খ্যাত নেতাদের সম্পত্তি বৃদ্ধির পরিমাণ দেখলেই বোঝা যায় সিন্ডিকেট কেন চলতে দেওয়া হচ্ছে।

বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ বললেন, ‘‘সিন্ডিকেট চলতে না দেওয়ার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু তিনি সিন্ডিকেটে বাধা কখনোই দেবেন না। কারণ কী জানেন? মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের একাধিক সদস্যের সম্পত্তি গত পাঁচ বছরে কতটা বেড়েছে এক বার জেনে নিনি। তা হলেই বুঝতে পারবেন, কেন মুখ্যমন্ত্রী সিন্ডিকেট চলতে দিচ্ছেন।’’ রাহুল সিংহের দাবি, সরকার চালানোর পিছনে এঁদের এক মাত্র উদ্দেশ্য টাকা লুঠ।

একই সুর সিপিএম নেতা মানব মুখোপাধ্যায়ের গলায়। বললেন, ‘‘তৃণমূল নেতারা গত পাঁচ বছর ধরে একটাই কাজ করেছেন। নিজেদের রাজনৈতিক প্রভাবকে টাকা এবং সম্পত্তিতে রূপান্তরিত করেছেন। এঁদের সব কাজের পিছনে লক্ষ্য এই একটাই, টাকা করতে হবে। এঁরা আসলে তোলাবাজ গোত্রের। রাজ্যের মানুষের কাছে এই প্রশ্নটাই আমরা তুলছি। এঁরা কি আদৌ রাজ্য সাসন করা যোগ্য?’’

কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষ বললেন, ‘‘এই সব তৃণমূল নেতাদের বৈধ রোজগারের কথা যদি ধরা হয়, তা হলে এঁরা তিন মাসে যা আয়ক করেন, আমি এক দিনে তাই আয় করি। কিন্তু তবু ভাবতে পারি না যে ২ কোটি টাকা খরচ করে মেয়ের বিয়ে দেব। হলফনামায় যা দেখিয়েছে, সে হিমশৈলের অগ্রভাগ মাত্র। আসলে লুঠ হয়েছে আরও অনেক বেশি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE