Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভাতের চিন্তা নিয়ে ভোট দিল চা বাগান

বারো মাসই চাল বাড়ন্ত ঘরে। একদিন কাজ না করলেই উনুনে হাঁড়ি বসবে কি না তা নিয়ে শুরু হয় টানাপড়েন। তবুও ভোট দিল বন্ধ চা বাগান।

মায়ের ভোটার কার্ড আঁকড়ে খুদে। মোহরগাঁও গুলমা চা বাগানে। ছবি: সন্দীপ পাল।

মায়ের ভোটার কার্ড আঁকড়ে খুদে। মোহরগাঁও গুলমা চা বাগানে। ছবি: সন্দীপ পাল।

নমিতেশ ঘোষ
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:১৭
Share: Save:

বারো মাসই চাল বাড়ন্ত ঘরে। একদিন কাজ না করলেই উনুনে হাঁড়ি বসবে কি না তা নিয়ে শুরু হয় টানাপড়েন। তবুও ভোট দিল বন্ধ চা বাগান।

আশা এখনও জিইয়ে রেখেছেন তাঁরা। আবার খুলবে বাগান। আবার ফিরবে সুদিন। তাই রবিবার সকাল থেকেই মধু, ডিমডিমা, বীরপাড়া, জয়বীরপাড়া, গ্যারগান্ডা থেকে শুরু করে ডুয়ার্সের ১২ টি বন্ধ চা বাগানের মানুষ ভোটের লাইনে সামিল হন। মধু চা বাগানের একটি কেন্দ্র থেকে ভোট দিয়ে বেরিয়ে পূজা থুড়ি, ফুলমনি থুড়ি, বিকাশ বাকলারা বলেন, “আবার বাগান খুলবে বলে সবাই আশ্বাস দিল। এই আশাতেই তো বুক বেঁধেছি। তাই সকাল সকাল ভোট দিলাম।” ফুলমনি দেবী আক্ষেপের সুরে বলেন, “দু’বছর আগেও আমরা চা শ্রমিক ছিলাম। এখন তো দিনমজুর। কখনও কাজ মেলে তো কখনও মেলে না। তাই আধপেটা খেয়ে থাকতে হয়।”

আলিপুরদুয়ার জেলার দু’টি বিধানসভা কেন্দ্র মাদারিহাট এবং কালচিনির ভোট চা বলয়ের উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল। মাদারিহাট বিধানসভা কেন্দ্রে ১১ টি চা বাগান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ৭টি ডানকান গোষ্ঠীর। ১২ টির বেশি চা বাগান চালু রয়েছে। কালচিনি বিধানসভা কেন্দ্রে বন্ধ চা বাগানের সংখ্যা দু’টি। চালু রয়েছে ২০ টির বেশি বাগান।

ভোটের প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার চা বাগানের সমস্যা সমাধানে নিজেদের ভূমিকার কথা তুলে ধরেছেন। নেতৃত্বকে অনুসরণ করেই চা বাগানে প্রচার চালিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দলের কর্মীরা। চা বাগানের হালের জন্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে দোষী করে প্রচার চালানো হয় জোটের পক্ষে। ভোটের দিন সকাল থেকেও চা বাগানের ভোট নিজেদের পালে টানতে চেষ্টায় খামতি রাখেনি কেউ।

কালচিনি থেকে শুরু করে মাদারিহাট প্রায় সব বাগানের সামনেই নিজেদের ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন টাঙিয়ে ক্যাম্প অফিস তৈরি করে তৃণমূল, বাম জোট এবং বিজেপির কর্মীরা। কোথাও কোথাও নির্দল প্রার্থীদেরও ক্যাম্প অফিস দেখা যায়। কয়েক জায়গায় আবার একশ মিটার দূরত্বের মধ্যেও টেবিল, চেয়ার নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় কয়েকজনকে। মধু চা বাগানে এভাবেই বসে থাকা শাসক দলের কয়েকজন কর্মীকে পরে হঠিয়ে দেয় পুলিশ। কয়েক জায়গায় ছোটখাটো অভিযোগ উঠলেও বড় কোনও গণ্ডগোল হয়নি।

মাদারিহাট কেন্দ্রের জোট প্রার্থী কুমারি কুজুর অভিযোগ করেন, ভোটের আগের দিন অর্থাৎ শনিবার রাতে বাইকে চেপে কিছু যুবক চা বাগানে ঢুকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভোটের দিন মানুষ যেভাবে বাইরে বেরিয়েছে তাতে কেউ আর সন্ত্রাস করার সাহস পায়নি।

তিনি বলেন, “ভোট খুব ভাল হয়েছে। চা বাগানের মানুষ ভোটের মাধ্যমেই তাঁদের বিরুদ্ধে হওয়া অন্যায়, অবিচারের জবাব দিয়েছেন।”

মাদারিহাট কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গাও দাবি করেছেন, তাঁদের পক্ষেই চা বাগানের মানুষ রায় দিয়েছেন। তিনি বলেন, “বন্ধ চা বাগান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে ভোট নিয়ে আমাদের কিছু ভাবতে হচ্ছে না। বাগানের মানুষ সব বুঝে গিয়েছে। ভোটে তাঁর প্রভাব পড়বে।”

ওই কেন্দ্র থেকে শাসক দল তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন পদম লামা। তিনি অবশ্য দাবি করেন, “একমাত্র মুখ্যমন্ত্রীই বন্ধ চা বাগানের মানুষের পাশে রয়েছেন। চাল থেকে পানীয় জল সবকিছুর ব্যবস্থা তিনি করেছেন। তাই মানুষ ভোট তৃণমূলকেই দিয়েছে।” ১৯ মে অবশ্য প্রমাণ হবে কার পাশে দাঁড়িয়েছে চা বাগান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 tmc tea gardens
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE