Advertisement
E-Paper

জোট একজোট, তৃণমূল যে যার মতো

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের ম্যাচ জিতে উঠে ধোনি বলেছিলেন, মাঠে বেশি সিঙ্গলস নিয়ে নিয়ে বাড়তি চাপ তৈরি করেছিলেন অস্ট্রেলীয়দের উপরে। তাতে অস্ট্রেলীয়দের কাঁধ ঝুঁকে যাচ্ছে দেখে, বুঝতে পারছিলেন মনের শক্তির জোরে তাঁরাই এগিয়ে। তাই ক্রমশ আত্মপ্রত্যয় বাড়ছিল। সত্যি বলতে কি, মনোনয়ন দাখিলের পর্বেও সেই মনের জোরের খেলা বেশ দেখা গেল। জোটের প্রার্থীদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে যে প্রত্যয় চুঁইয়ে পড়ছিল, শাসক দলের প্রার্থী, নেতা-কর্মীদের তা দেখে গুটিয়ে যেতেই দেখা গেল। উত্তর দিনাজপুর, শিলিগুড়িতে জোটের প্রার্থীরা একজোট হয়ে মিছিল করে মনোনয়ন জমা দিলেন। তৃণমূলের প্রার্থীরা কিন্তু একা একা গিয়েছেন, সঙ্গে ছিলেন তাঁদের অনুগামীরা। সোমবার দিনভর বিশ্বনাথ চৌধুরী থেকে শুরু করে মৌসম বেনজির নূর, গৌতম দেব থেকে জোশেফ মুন্ডার মতো নেতা-প্রার্থীরা কোথায়, কী করলেন, একান্তে কী কথাবার্তা বললেন শাসক ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ, সে সবই পাঠকদের সামনে তুলে ধরছে আনন্দবাজার।অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের ম্যাচ জিতে উঠে ধোনি বলেছিলেন, মাঠে বেশি সিঙ্গলস নিয়ে নিয়ে বাড়তি চাপ তৈরি করেছিলেন অস্ট্রেলীয়দের উপরে। তাতে অস্ট্রেলীয়দের কাঁধ ঝুঁকে যাচ্ছে দেখে, বুঝতে পারছিলেন মনের শক্তির জোরে তাঁরাই এগিয়ে। তাই ক্রমশ আত্মপ্রত্যয় বাড়ছিল।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৬ ০৩:০৫
(বাঁ দিকে) আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা তেজকুমার টোপ্পোর কাছে মালবাজারের সিপিএম প্রার্থী আগাস্টুস কেরকেট্টা। (ডান, উপরে) মৌসম বেনজির নুরের নেতৃত্বে মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে মিছিল মালদহে। (নীচে) মনোনয়ন জমার আগে বৌদ্ধ মন্দিরে মাদারিহাটের তৃণমূল প্রার্থী পদম লামা।—নিজস্ব চিত্র

(বাঁ দিকে) আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা তেজকুমার টোপ্পোর কাছে মালবাজারের সিপিএম প্রার্থী আগাস্টুস কেরকেট্টা। (ডান, উপরে) মৌসম বেনজির নুরের নেতৃত্বে মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে মিছিল মালদহে। (নীচে) মনোনয়ন জমার আগে বৌদ্ধ মন্দিরে মাদারিহাটের তৃণমূল প্রার্থী পদম লামা।—নিজস্ব চিত্র

ছক্কা হবেই

বেলা ১০টা থেকেই বালুরঘাট শহরের সাধনা মোড়ের সামনে ইতিউতি জটলা। আরএসপি অফিসটা সেখানেই। প্রথমে বিশ্বনাথ চৌধুরী পৌঁছলেন। সিপিএমের প্রার্থী মাফুজা খাতুন, আরএসপির প্রার্থী রঘু ওঁরাওও পৌঁছে গেলেন। কিন্তু, জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায় আসবেন কি না, তা চেষ্টা করেও কেউ জানতে পারলেন না। তাতে কী! জেলা কংগ্রেসের নেতা গোপাল দেবের নেতৃত্বে হাজির বহু কংগ্রেস কর্মী। সকলে কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে হাজির হলেন বামেদের মিছিল। আওয়াজ উঠল, ‘‘বিশ্বনাথদা, চালিয়ে খেলুন, ছয় হবেই।’’ মিছিল যখন জেলাশাসকের অফিসে পৌঁছল, তাতে ভিড় কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে।

সেতু মোড়ে সেতুবন্ধন

সকাল সাড়ে ১০টা। পুরাতন মালদহের সেতু মোড়। সেখানে ভিড় জমিয়েছেন হবিবপুর, পুরাতন মালদহ ও গাজল বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস ও বাম সমর্থকেরা। একে একে দলীয় কর্মী সমর্থকদের নিয়ে মিছিলে সামিল হন প্রার্থীরা। বেলা ১১টা। সেতু মোড়ে পৌঁছন জেলা কংগ্রেসের সভানেত্রী তথা সাংসদ মৌসম নূর। তাঁর সঙ্গে হবিবপুর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী খগেন মূর্মু, গাজলের সিপিএমের প্রার্থী দীপালি বিশ্বাস ও মালদহ বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী ভুপেন্দ্রনাথ হালদার। পরে মোথাবাড়ির বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিনও মিছিলে পা মেলান। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য নৈমুদ্দিন শেখ সহ লোকাল কমিটির সম্পাদক ও সদস্যরাও গলা মিলিয়ে জোটের স্লোগান দিয়েছেন। যা দেখেশুনে এলাকার দোকানদারদের অনেকেই বললেন, ‘‘সেতু মোড়ে একটা জবরদস্ত সেতুবন্ধন দেখলাম।’

একা এবং কয়েকজন

অনুগামীদের নিয়ে পৌঁছেছেন তৃণমূলের গাজলের প্রার্থী সুশীল রায়। একই ভাবে মোথাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী মহম্মদ নজরুল ইসলাম, বৈষ্ণবনগরের প্রার্থী অসিতবরণ বসুও নিজেদের লোকজন নিয়ে হাজির মনোয়ন পত্র পেশের কক্ষে। মানিকচকের প্রার্থী তথা বিদায়ী মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র নিজের অনুগামীদের নিয়ে পৌঁছলেন নির্বাচনী কার্যালয়ে। কিছু ক্ষণ পরে দলের লোকজনকে নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে পৌঁছন ইংরেজবাজারের প্রার্থী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। একটু পরে পুরাতন মালদহের সেতু মোড় থেকে মিছিল করতে দেখা যায় কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী দুলাল সরকারকে। ‘একা ও কয়েকজন’-এর প্রসঙ্গ উঠেছে তৃণমূলের মালদহ জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের সামনেও। তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভা ভিত্তিক আমাদের প্রার্থীরা মিছিল করে এসেছেন। দলীয় কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে। এখানে আমরা সবাই এক হয়ে অনৈতিক জোটের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। মানুষ আমাদের পাশে রয়েছে।’’

কোথায় ক’জন

কদমতলার তৃণমূল পার্টি অফিসের সামনে তখন পা ফেলার জায়গা নেই। কারণ, গৌতম দেব মনোনয়ন জমা দিতে যাচ্ছেন। সেই মিছিলে উপচে পড়ল ভিড়। আর পাঁচটা জেলার তুলনায় জলপাইগুড়ির ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির তৃণমূল প্রার্থী গৌতমবাবুকে দেখা গেল বেশ মেজাজেই। তাঁর সঙ্গীসাথীরা ঘনঘন খোঁজ নিচ্ছিলেন, প্রতিপক্ষ সিপিএমের দিলীপ সিংহের সঙ্গে কংগ্রেস-ফরওয়ার্ড ব্লকের লোকেরা ক’জন সামিল হয়েছেন? তখনই খবর মিলল, শিলিগুড়ির পার্টি অফিস থেকে হুডখোলা জিপে দিলীপবাবু রওনা হয়েছেন। তবে কংগ্রেসের কোনও নেতাকে দিলীপবাবুর সঙ্গে দেখা যায়নি শুনে গৌতমবাবুর অনুগামীরা অনেকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। পরক্ষণেই একজন সতর্ক করলেন, ভোটের দিনটা না যাওয়া পর্যন্ত অত স্বস্তি ভাল হবে না।

আশীর্বাদ করুন

মালবাজারের সিপিএম প্রার্থী অগাস্টুস কেরকেট্টা সকালেই চার্চে গিয়ে প্রার্থনা করেন। চার্চ থেকে সিপিএমের কার্যালয়ে যাওয়ার পথে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সহ সভাপতি তেজকুমার টোপ্পোর বাড়িতে ঢুকে পড়েন। আদিবাসী বিকাশ পরিষদ তৃণমূলকেই সমর্থন করবে জেনেও তেজকুমারের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে অগাস্টুস বলেন, ‘‘আপনি অন্য দলের সঙ্গে থাকতেই পারেন। কিন্তু আমাকে ছোট থেকে দেখছেন। ভোটের লড়াই-এ আশীর্বাদ করবেন।’’ তেজকুমার আশীর্বাদ করলেন। বললেন, ‘‘বাড়ি বয়ে এসে প্রণাম করেছে, আশীর্বাদ তো করতেই হবে।’’

কী রে ভাল আছিস

কংগ্রেসের নাগরাকাটা বিধানসভার জোট প্রার্থী জোশেফ মুন্ডা যখন মালবাজারের মহকুমাশাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা দিয়ে বেরোবেন তখন দফতরের ভেতরে মনোনয়ন জমা দিতে চলে এসেছেন নাগরাকাটা বিধানসভায় তৃণমূলের প্রার্থী শুক্রা মুন্ডা। শুক্রাকে দেখেই পিঠ চাপড়ে দেন জোসেফ। শুক্রা ফিরে তাকাতেই জোশেফ বললেন, ‘কী রে ভাল আছিস তো?’ শুক্রাও জানালেন, ‘ভাল আছি।’ জোশেফ জানালেন, রাজনীতিতে লড়াই তো থাকবেই কিন্তু তাই বলে সৌজন্য রক্ষার দায়িত্বটাও রাজনীতিবিদদেরই।

বৃষ্টি মাথায় পরিক্রমা

ঝিরঝিরে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে জোট প্রার্থীদের নিয়ে মিছিল করে মনোনয়ন জমা দিল কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট। এক সঙ্গে হুডখোলা পিকআপ ভ্যানে রায়গঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী মোহিত সেনগুপ্ত, হেমতাবাদের সিপিএম প্রার্থী দেবেন রায়, কালিয়াগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী প্রমথনাথ রায়, করণদিঘির ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী গোকুল রায় ও ইটাহারের সিপিআই প্রার্থী শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়। পাঁচ প্রার্থীকে নিয়ে কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের কয়েক হাজার নেতা কর্মী রায়গঞ্জের দেবীনগর কালীবাড়ি থেকে কর্ণজোড়া পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তায় যৌথ মিছিল হয়।

কটাক্ষ অমলের

কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের তরফে জেলার ৯টি বিধানসভা কেন্দ্রে জোট হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু, করণদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা পরিষদের কংগ্রেস সদস্য শেখ সামসুল। ইসলামপুরের মহকুমাশাসকের দফতরে গিয়ে এ দিন ইসলামপুর বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন ইসলামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান কানাইয়ালাল অগ্রবাল ও চোপড়া বিধানসভা কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দিয়েছেন চোপড়া ব্লক কংগ্রেস সভাপতি অশোক রায়। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দের দাবি, ইসলামপুর বিধানসভা কেন্দ্রটি দল কখনওই বামেদের ছাড়েনি। তাই সেখানে দলের তরফে কানাইয়াবাবুকে প্রার্থী করা হয়েছে। তবে তাঁর দাবি, চোপড়া ও করণদিঘিতে নির্দল প্রার্থীরা জোট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না। জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের কটাক্ষ, কী মধুর জোট হয়েছে, তা একাধিক কংগ্রেস নেতার জোটপ্রার্থীদের বিরুদ্ধে মনোনয়নপত্র দাখিলেই স্পষ্ট।

শঙ্করের পাশে অশোক

আবার সেই অশোক-শঙ্কর জুটি! সোমবার দুপুরে শিলিগুড়ির হাসমি চক থেকে অশোকবাবুকে পাশে নিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে রওনা হন কংগ্রেসের মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির প্রার্থী শঙ্করবাবু। সঙ্গে ফাঁসিদেওয়ার কংগ্রেস প্রার্থী সুনীল তিরকে। মহকুমাশাসকের ঘরেও ভিড় হয়ে যায়। কিন্তু ৫ জনের বেশি ভেতরে থাকা যাবে না। অগত্যা, শঙ্করবাবু নিজের মেয়েকে ‘একটু বাইরে অপেক্ষা’ করার নির্দেশ দেন। কারণ, না হলে অশোকবাবুদের বার হয়ে যেতে হবে। কিন্তু, জোটের ছবিটা রোজই আরও জোরদার করতে যে কোমর বেঁধেছেন ওঁরা। এ দিন দেখা গেল কংগ্রেস নেতা তথা পুরসভার বরো চেয়ারম্যান সুজয় ঘটকও সামিল হন মনোনয়ন পেশের সময়ে।

assembly election 2016 west bengal alliance tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy