আগে ভোটে বামফ্রন্টের ভরসা ছিল গ্রামীণ এলাকা। এখন সেই গ্রামীণ এলাকার ভরসাতেই বুক বাঁধছে তৃণমূল!
ভোট যে বড় বালাই। তাই চৈত্রের দুপুরেও গাড়ি নিয়ে মেদিনীপুরের গ্রামীণ এলাকার চাঁদড়া, ধেড়ুয়া, মণিদহে ছুটছেন তৃণমূল প্রার্থী মৃগেন মাইতি। শহরে দলের পালে হাওয়া টানতে কখনও শতাধিক টোটো নিয়ে তিনি মিছিল করছেন আবার কখনও টোটো নিয়েই পৌঁছে যাচ্ছেন ভোটারের দোড়গোড়ায়।
মেদিনীপুর পুরসভা তৃণমূলের দখলে। তারপরেও এত চিন্তা কীসের? তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, কংগ্রেস-সিপিএম জোট বাঁধায় এমনিতেই ভোট ভাগাভাগি নিয়ে চিন্তা রয়েছে। জোটের ফলে শহরের ভোট যে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসা কঠিন তাও বুঝছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই প্রায় প্রতিটি সভাতেই জোটকে বিঁধছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কারণেই গ্রামীণ এলাকায় সভা করলেও শহরে র্যালির উপরই জোর দিচ্ছে তৃণমূল।
সিপিএমের থেকে কংগ্রেসকে আলাদা করা গেলে শহরে কিছুটা সুবিধা পাওয়া যাবে তা আগেই বুঝেছে তৃণমূল। তাই প্রচারেও তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বলতে শোনা যাচ্ছে, “যে সিপিএম এতদিন সন্ত্রাস চালাল, মানুষকে ঘরছাড়া করল, কংগ্রেসের উপর নিপীড়ন চালাল, সেই সিপিএমের হাত ধরবেন!” ভোট ভাগাভাগি রুখতে তৎপর কংগ্রেস ও বামফ্রন্টও পাল্টা প্রচারে বলছে, “যে দিদি এক সময় কংগ্রেসের সঙ্গে ছিল, তিনিও বিজেপি-র সঙ্গে ঘর করেছিলেন। সেটাও কংগ্রেস থেকে আসা তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা মেনে নিয়েছিলেন। তাহলে এখন আপত্তি কোথায়।”
ভোট সমীকরণ কী বলছে?
২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের প্রার্থী হয়েছিলেন মৃগেনবাবু। ওইবার ৫৪.৪২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। বামেরা পেয়েছিল ৩৯.৫৩ শতাংশ ভোট। বিজেপির দখলে ছিল ২.৫৮ শতাংশ ভোট। মেদিনীপুর বিধানসভার মধ্যেই পড়ে মেদিনীপুর পুরসভা এলাকা। ২০১১ সালে মেদিনীপুর পুর এলাকা থেকে মৃগেনবাবু ৬১৩৩৯টি ভোট পেয়েছিলেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বাম প্রার্থী পেয়েছিলেন ২৮৮৪৪টি ভোট।
২০১৩ সালে মেদিনীপুর পুরসভার ভোটে তৃণমূল একা লড়াই করে। বিধানসভার তুলনায় পুরভোটে তৃণমূলের ভোট প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। দেখা যায়, মেদিনীপুর পুর এলাকায় তৃণমূল ভোট পেয়েছে ৩৮৮৪৭টি। তুলনায় অক্ষত ছিল বামেদের ভোট। বামেরা পায় ২৩৩৮১টি ভোট। ১৮৯৬২টি ভোট পেয়েছিল কংগ্রেস। বিজেপি আর নির্দল মিলিয়ে পেয়েছিল ১৫৬৩৭টি ভোট।
২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে মেদিনীপুর কেন্দ্রে তৃণমূল ৪৮.২৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। বামেরা পেয়েছিল ২৮.৯৪ শতাংশ ভোট। ওইবার বিজেপির ভোট শতাংশ বেড়ে হয় ১৫.৮৯। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, গত লোকসভা ভোটে মোদী হাওয়ায় বিজেপির ভোট এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। এ বার এই ভোট বিজেপি ধরে রাখতে না পারলে অতিরিক্ত ভোট কার দিকে যায়, তার উপরেই নির্ভর করবে জয়ের হাসি
কে হাসবে।
বিরোধীদের দাবি, শহর এলাকায় তৃণমূল এ বার বেগ পাবে। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, সিপিআই প্রার্থী সন্তোষবাবু নিজের দলের প্রতীকে লড়াই করছেন বলে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের ভোট পাওয়া কিছুটা তো কঠিন হবেই। তাই বাম প্রার্থী কংগ্রেসের ভোট কতটা নিজের দিকে টানতে পারছেন, সেটাও দেখার।
যদিও মেদিনীপুরের সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রাণার দাবি, “কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হওয়ায় শহরের ভোট এ বার আমাদের পক্ষেই যাবে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘গ্রামীণ এলাকায় তৃণমূল সন্ত্রাস করে হয়তো নিজেদের পক্ষে ভোট করানোর চেষ্টা করবে। তবে যদি নির্বাচন কমিশন কড়া নজরদারি রাখে, মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন, তাহলে ফল উল্টো হবে।” মৃগেনবাবু অবশ্য তা মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, “কংগ্রেস সমর্থকরা কোনও দিন এই জোট সমর্থন করবেন না। তাই তাঁরা আমাদের পক্ষেই থাকবেন।’’ তিনি বলছেন, ‘‘গ্রামীণ এলাকায় রাস্তা, পানীয় জল, ইন্দিরা আবাস থেকে শুরু করে সব বিষয়ে যা উন্নয়ন হয়েছে, তাতে গ্রামীণ এলাকার মানুষ আমাদেরই সমর্থন করবেন।”
গ্রাম না শহর ভোটে কে বাজিমাত করে, সেটা অবশ্য সময়ই বলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy